👩🦰সিনিয়র রিপোর্টারঃমরিয়ম আক্তার, চাঁদপুর
“মুড সুইং ” এই কথাটির সাথে সকলেই আমরা কম বেশি পরিচিত। চলুন জেনে নেই এই সম্পর্কে।
কোনো কারণ ছাড়াই মেজাজের চটজলদি নাটকীয় পরিবর্তন হওয়াকে বলা হয় ‘মুড সুইং’।
হঠাৎ করে মন খারাপ হয়ে যাওয়া, রাগ হওয়া, কান্না পাওয়া আবার চট করেই মনে উৎফুল্লভাব বা আনন্দ অনুভব করার মতো অনুভূতি হতে পারে।
‘মুড সুইং’ সম্পর্কে সাভারের ‘বিজিএমইএ’ হাসপাতালের ‘ফ্যামিলি মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ ডা. লিন্ডা সমদ্দার বলেন, “হরমোনের প্রভাব, পুষ্টিহীনতা, লৌহ, ভিটামিন ও খনিজের অভাব মেজাজের দ্রুত ওঠা-নামার জন্য দায়ী।
“নারীদের পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে প্রচুর আয়রনের ক্ষয় হয়। পরে তা পূরণ না করায় ধীরে ধীরে ‘মুড সুইং’য়ের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দেখা দেয়।”
‘মুড সুইং’ নারী পুরুষ উভয়েরই হয়ে থাকে। জীবনযাত্রা, কাজের চাপ, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি বিষয়ও ‘মুড সুইং’য়ের অন্যতম কারণ বলে জানান, তিনি।
কৈশোরে ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। এই সময়ে দেহের হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। ফলে ‘মুড সুইং’ হয়। তাই এই সময়ে ছেলে-মেয়েরা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে।
‘মুড সুইং’ ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য স্বাভাবিক হলেও নারীরা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কারণে ‘মুড সুইং’ অনুভব করে থাকেন।
প্রতিমাসে পিরিয়ডের কারণে অধিকাংশ নারীরই ‘মুড সুইং’ হয়। এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় হরমোনের ওঠানামা মনের ওপর প্রভাব ফেলে। এই সময়ও মায়েদের মধ্যে দেখা দেয় ‘মুড সুইং’।
তাছাড়া, মায়ের শারীরিক পরিবর্তন তার মনের ওপরে প্রভাব ফেলে মেজাজের তারতম্য ঘটাতে পারে।
নারীদের মেনোপোজের সময় এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমতে থাকে। তাই এই সময়েও ‘মুড সুইং’ হওয়া স্বাভাবিক বলে জানান ডা. লিন্ডা সমদ্দার।
‘মুড সুইং’ সম্পূর্ণই হরমোনের ওপর নির্ভর করে। হরমনের ওঠা নামার কারণেই মানুষের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়, যার প্রকাশ ঘটে আবেগে।
‘প্রি-মিন্সট্রুয়াল সিন্ড্রম (পিএমএস)’ সাধারণত পিরিয়ড হওয়ার দুএক সপ্তাহ আগে থেকে দেখা দেয়। এই সময়ে অনেকের আবেগের পরিবর্তন, খাবারের চাহিদায় পরিবর্তন, দুর্বলভাব, বমি ভাব, মানসিক উদ্বেগ দেখা দিয়ে থাকে।
আর এটা স্বাভাবিক। কারণ মানুষের শরীরের হরমোন এই সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানান ডা. লিন্ডা।
পিরিয়ডের আগে এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় বলেই মানসিক অবস্থার এমন নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে।
‘মুড সুইং’ অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে যা পিরিয়ড শেষ হওয়ার দুএকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। তবে, কিছু সংখ্যক নারী গুরুতর ভাবে এই সমস্যার মুখোমুখি হয় যা অনেক ক্ষেত্রে তাদের মানসিক স্বস্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট করে। অনেকে এর ফলে মারাত্মক হতাশা, সব সময় মেজাজ খিটমিট করা, রাগারাগি করার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, ধ্যান ইত্যাদির মাধ্যমে ‘মুড সুইং’ সমস্যার সমাধান করা যায়। তবে মানসিক সমস্যার মতো রূপ নেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি বলে জানান তিনি।
পিরিয়ডের আগে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ও ‘মুড সুইং’য়ের ওপর প্রভাব রাখে।
যেমন:-
*মানসিক চাপঃ
মানসিক চাপ শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে পরিবর্তন আসে আচরণে। হতাশা, দ্বিধা, এমন কি নিয়মিত চাপও ‘মুড সুইং’য়ের জন্য দায়ী।
**খাদ্যাভ্যাসঃ
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পুষ্টি কর খাবারের অভাব, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কোমল পানীয় ইত্যাদি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তাই এই সময়ে পুষ্টিকর, আয়রন, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার জরুরি বলে জানান এই চিকিৎসক।
**বিশ্রামঃ
স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাইলে কাজের পাশাপাশি অবশ্যই বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। কঠোর পরিশ্রম ও বিশ্রামের অভাব মন মেজাজের ওপর স্থায়ীভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিষয়টাকে অস্বাভাবিক-ভাবে না দেখে বরং এই সময়ে পছন্দের কাজ করে, নিজের যত্ন নিয়ে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, বিশ্রাম, ধ্যান ইত্যাদির মাধ্যমে ‘মুড সুইং’ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন ডা. লিন্ডা।
তিনি আরো জানান যে, আর অবস্থা যদি খুব বেশি খারাপের দিকে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে।