শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন

বাড়ছে নার্সের সংখ্যা; পরিবর্তন হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০
  • ১০৮৮ Time View

বিডিনার্সিং২৪ :মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসাবিজ্ঞান ও চিকিৎসাসেবায় নার্সদের অবদান স্বীকার করে তাঁদের মর্যাদা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগ নার্সদের সম্পর্কে সনাতন ও গতানুগতিক ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে এক পরিবর্তন আনতে শুরু করেছিল। পেশার বিবেচনা, চাকরির মর্যাদা, বেতনক্রম ও সমাজে মর্যাদার প্রশ্নে তাঁদের তৃতীয় থেকে দ্বিতীয়তে উন্নীত করা এক যুগান্তকারী উদ্যোগ ছিল। এমন সময় ছিল যখন নার্সদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হতো। সমাজ তাঁদের দেখত এমন এক চোখে, যেখানে মানুষ হিসেবে বিবেচনার জায়গাটি ছিল ভিন্ন। নিজের মেয়েসন্তানকে নার্সিংয়ে পড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনা করতেন অভিভাবকরা। বিশেষ করে মুসলমান সমাজে এমন চিন্তা বেশি কাজ করত। যেকোনো সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গেলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এখন তার অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটের সংখ্যাও এখন বাড়ছে। বাড়ছে নার্সের সংখ্যা, কারণ হলো দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও নার্সদের পাঠাতে পারি।

সমাজে নার্সদের মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতেই প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগ। অন্য কারণ হলো নার্সরা কোনো অংশেই অন্য পেশাজীবীদের তুলনায় কম নয়। কেননা ডাক্তারদের সহায়ক ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিপূরক হিসেবে কাজ করে আসছেন আমাদের নার্সরা। নার্সদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার পর সমস্যাও তৈরি হয়। নার্সরা অফিসার হওয়ায় রোগীদের ছোটখাটো কাজ এখন আর তাঁরা করতে চান না। রোগীর সুস্থতার বিচারে নার্সদের কাজ একেবারে নির্দিষ্ট নয়। এ কথা নার্সদের মনে রাখা উচিত। এটি একটি পেশাবৃত্তি নয়। এর রয়েছে পেশাগত মানদণ্ড। রোগীদের সুস্থ করার ক্ষেত্রে নার্সদের ভূমিকা হয় ডাক্তারদের তুলনায় ঢের বেশি ও প্রাসঙ্গিক। এ বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের পালন করতে হয় সর্বাত্মক ও সমন্বিত ভূমিকা। কিন্তু বর্তমানে ডাক্তারদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায় যে নার্সদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে। তাঁরা আগের মতো যত্নসহকারে কাজ করছেন না। নিজেদের অফিসার ভাবতে শুরু করেছেন। গতানুগতিক অফিসারদের মতো আচরণ করছেন। ফলে চিকিৎসা পেশা ও সেবাব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

পদমর্যাদা বৃদ্ধির পর আরেকটি জটিলতা তৈরি হয়েছে তাঁদের নিয়োগ নিয়ে। কেননা সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় পিএসসি তথা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। যখন পদটিকে উন্নীত করা হলো তখন পিএসসির মাধ্যমেই তা পূরণ করতে হবে। এর বিকল্প নেই। অবশ্য আইন সংশোধন করলে ভিন্ন কিছু হতে পারে কি না তা আমাদের জানা নেই। এখানে বাদ সাধলেন আমাদের পাস করা কিছুসংখ্যক নার্স। তাঁদের দাবি অ্যাডহক, জ্যেষ্ঠতা ও ব্যাচভিত্তিক নিয়োগ। কিন্তু সরকারি কর্মচারী নিয়োগবিধিতে এমনটি সম্ভব নয়। আমি যতটুকু জানি, অ্যাডহক ভিত্তিতে পিএসসি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারে। কয়েক বছর আগে এভাবে ডাক্তারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। দ্রুত প্রয়োজন হলে এভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির বেলায় অ্যাডহক বিষয় আছে কি না তা পিএসসি বলতে পারবে। আর ব্যাচভিত্তিক নিয়োগ কিভাবে সম্ভব এ বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই। সরকার বারবার নিয়মনীতির কথা বললেও তাঁরা তা মানতে চাইছেন না। নিয়মনীতি না মানার যে সংস্কৃতি আমাদের সমাজে তৈরি হচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় আজকে নার্সদের আন্দোলন। আমি সরকারকে সাধুবাদ জানাই এ কারণে যে এখন পর্যন্ত তারা নার্সদের দাবির কাছে মাথা নত করেনি। সরকার বলছে ধারাবাহিকভাবে তারা ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেবে। আমাদের বিশ্বাস, পর্যায়ক্রমে অনেকেই চাকরি পাবেন। এর মধ্যেই পিএসসি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। আর নার্সরা তা বর্জন করেছেন। কতজন বর্জন করেছেন জানি না ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে তাঁদের আন্দোলন এখনো অব্যাহত রয়েছে।

নার্স হিসেবে তাঁরা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা ভোগ করবেন অথচ কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবেন না এমনটি কাম্য কি? শতভাগ না হলেও পিএসসির প্রতি সাধারণ মানুষের এখনো আস্থা আছে। এর মাধ্যমে যখন আপনি চাকরি পাবেন তখন আপনার চাকরি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে চাইবেন না। আপনাদের ভয় কোথায়! এখানে প্রতিযোগিতা হবে আপনাদের মধ্য থেকে। সাধারণ কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা হাজার হাজার বেকার ছেলেমেয়ে আপনাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবেন না। এমন সহজ ও কম প্রতিযোগিতার জায়গায় আপনাদের ভয় থাকার নয়। আপনারা যদি দক্ষ হন, তাহলে পর্যায়ক্রমে চাকরি পাবেন। সরকার এরই মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছে এবং দ্রুত নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করবে। এখানে লাখ লাখ প্রতিযোগী থাকবেন আর চাকরি পাবেন পিএসসির মাধ্যমে কমসংখ্যক। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী ইঞ্জিনিয়ার যাঁদের পদমর্যাদাও দ্বিতীয় শ্রেণি, তাঁদেরও তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চাকরি পেতে হয়। অনেকের বেলায় যখন একই নিয়ম, তখন আপনাদের বেলায় ভিন্ন আশা করা সমীচীন কি?

আমাদের অনুরোধ—আন্দোলন নয়, অ্যাডহক নয়, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, ব্যাচভিত্তিক নয়, পিএসসিতে পরীক্ষা দিয়ে অফিসার হোন। সবাই আপনাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য হবে। নার্সিং পেশার উত্কর্ষ বৃদ্ধি পাবে।

লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

neazahmed_2002@yahoo.com

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102