মোহাঃ নূরন্নবী তন্ময়, ঢাকা
মহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সারাবিশ্ব ব্যাপী এক ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। চলছে লকডাউন, কারফিউ জারির মতন নানান প্রদক্ষেপ। এসময় দেশের সরকারী কিংবা বেসকারী সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও, বন্ধ নেই স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবার হাত। দিবা-রাত্রি রোগীকে সেবা দিয়ে সুস্থ্যতার আলোক দেখাতে কাজ করছে ফ্রন্টলাইনার ফাইটার ‘নার্সরা’। এরমাঝে মুসলিম ধর্মাবলীরা রমজান মাসে ভোররাতে সেহেরি ও সন্ধ্যায় ইফতার খেয়ে রোজা রাখছে। এই দুই সময়টুকুও নার্সরা কাটাচ্ছে রোগীর পাশে। নার্সেস ‘ইফতার’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমনটায় প্রকাশ করছেন, রাজধানীর সুনামধন্য হাসপাতালের নার্স ফরিদুল ইসলাম সুজন ও রাকিবুল হাসান। তাদের সাথে বিডিনার্সিং২৪.কম এর একান্ত সাক্ষাৎকারেও নার্সদের আত্নত্যাগের কথা তুলে ধরেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে নার্স ‘ফরিদুল ইসলাম সুজন’ তার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বিকাল ডিউটি করছি কোভিড-১৯ আইসিইউতে ইফতার করার সময় হয়ে যাচ্ছে, ইফতার করার জন্য পিপিই ছাড়তে হবে, কারণ পিপিই পরে ইফতার করা সম্ভব না। তখন, মনে মনে ভাবলাম ইফতার করার সময় টাও আমার দায়িত্ব বোধটা বেশী, ইফতার পরে করলে কিছু হবে না! অতঃপর সিফটিং মাধ্যমে সহকর্মীরা ইফতার করি। কোন কোন সময় নামাজও পিপিই পরে পড়তে হয়। তারপরও স্বাস্থ্যকর্মী দের সব ধরনের ছুটি বন্ধ, পেলাম না ঘোষিত সরকারের প্রনোদনা। তারপরও আল্লাহ তায়ালা সকল স্বাস্থ্যকর্মী সহ সবাই কে সুস্থ রাখেন ও হেফাজত করেন এই দোয়াই করি। আসুন, সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।
আরেক সম্মুখশালী যোদ্ধা মোঃ রাকিবুল হাসান ‘নার্সদের_ইফতার’ শিরোনামে হৃদয়স্পর্শময়ী স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন- বিকাল ডিউটি করছিলাম কাজ করতে করতে কয়টা বাজে খেয়াল ই নাই! হঠ্যাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৫ঃ৪৫ বাজে। সার্ভিস রুমে ইফতার এর ব্যবস্থা করা হলো, এর মাঝে রোগিদের সাথে দেখা করতে গেলাম ও যারা রোজা আছে তাদের ইফতার দিয়ে গেছে কি না সেই খোঁজ নিয়ে আসলাম। এই দিকে পিসিএ, হাউসকিপিং কেউ খুজে নিয়ে আসলাম একসাথে ইফতার করবো বলে সাথে খ্রিস্টান একজন সহকর্মী ছিল,তাকেও নিয়ে বসে গেছি তখন ঘড়ির কাটায় ৬ঃ১৫ বাজে। মসজিদ থেকে আযান শব্দ শুনে- আমি খেজুর মুখে দিয়ে পানি খাব, এমন সময় পেশেন্ট কলিং বেল বেজে উঠলো। একরাশ হতাশা নিয়ে পানি মুখে দিয়ে উঠবো ভাবছি ঠিক এমন সময়,রোগীর ‘মা’ নার্স স্টেশনের সামনে এসে ডাকছে নার্স আছেন !
আমিঃ জ্বি আন্টি আসতেছি!
আন্টিঃ ইফতার করছো বাবা!
আমিঃ জ্বি!
আন্টিঃ সরি বাবা, স্যালাইন টা শেষ হয়ে গেছে আবার রক্ত চলে আসে কি না, তাই ডাকতে আসছি। (যদিও আমি বলে আসছিলাম এইটা শেষ হলে সমস্যা নেই ইনফিউশন পাম্প চলছে)
আমিঃ আর কথা না এগিয়ে উঠে গেলাম, স্যালাইন সেট খুলে দিয়ে আসলাম! আন্টি কি যে খুশি ! সরি বলতে বলতে চোঁখের পানি চলে আসছে তার।আবেগের সাথে হাত তুলে দোয়া করলেন আর বললেন তোমাদের মতো নার্স গুলোকে আল্লাহ পাক জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। একজন নার্স হিসেবে আর কি চাই, আলহামদুলিল্লাহ্।