সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

রেশমি পোকা থেকে করোনা ভ্যাকসিন!

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০
  • ৪২৩ Time View
{"uid":"3A71FD5F-1290-453B-986C-FDA783823F69_1598539600811","source":"other","origin":"gallery"}

হাসিবুল হাসান, ঢাকাঃ শিরোনাম দেখে চমকে উঠলেন? জি আপনি যা পড়ছেন জাপানে সেটাই ঘটতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রয়ই। তারচেয়েও বড় চমক হল জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাহিরু কুসাকাবে যে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন সেটা ইনজেকশনই নয় বরং মুখে ও গ্রহণ করা যাবে। বিষয়টি বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের কভিড-১৯ ভাইরাসের গঠন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকতে হবে।

চলুন তাহলে সংক্ষেপে জানি কভিড-১৯ ভাইরাসের গঠন সম্পর্কেঃ
আপনারা জানেন কভিড-১৯ হল একধরণের আর এন এ ভাইরাস। এই ভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তারের জন্য যে মৌলিক উপাদান (আর এন এ) সেটা থাকে তার শক্ত খোলসের ভেতরে। আর এই খোলসটিকেই আমরা দেখি কদম ফুলের মতো, যার নাম স্পাইক প্রোটিন। স্পাইক প্রোটিনই মানুষের দেহে করোনা ভাইরাসকে ঢোকার পথ করে দেয়। করোনার চরিত্র বদলাতে হলে, স্পাইক প্রোটিনের গঠনে এমন কিছু ঘটতে হবে যেন তা আর মানুষের শরীরে ঢুকতে না পারে। এর অর্থ করোনার ভ্যাক্সিন তৈরী করতে হলে স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে করতে হবে। ভ্যাক্সিন দিয়ে যদি স্পাইক প্রোটিনকে অচল করে দেওয়া যায়, তাহলে মানুষ রক্ষা পেতে পারে। অনেক ভ্যাক্সিন আসলে সেভাবে তৈরী করারই চেষ্টা চলছে। অতি সম্প্রতি রাশিয়া যে ভ্যাকসিন বাজারজাত করেছে সেটা এই স্পাইক প্রোটিনকেই টার্গেট করে। আর সেজন্যই হয়ত রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা এতটা আত্মবিশ্বাসী তাঁদের ভ্যাকসিনের সফলতার ব্যাপারে।

আসুন এবার তাহলে জানি জাপান কেমন করে তৈরি করছে রেশমি পোকা থেকে করোনা ভ্যাকসিনঃ
পশ্চিম জাপানের ফুকুওকা তে অবস্থিত কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়। তারই নিকটবর্তী ফার্মে আছে ৫০০ প্রজাতির প্রায় আড়াই লক্ষ রেশমি পোকা। তাদের শরীরেই তৈরি হবে এই ভ্যাকসিন। অধ্যাপক তাকাহিরু কুসাকাবে এবং তাঁর টীম গত মে মাস থেকে রাতদিন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এই ভ্যাকসিনের অগ্রগতির জন্য। অধ্যাপক তাকাহিরু জাপানের নিক্কেই সংবাদপত্রকে বলেন, যে জীন থেকে কভিড-১৯ এর স্পাইক প্রোটিন তৈরি হয়, তাঁরা সেই জীনকে রেশমি পোকার শরীরে প্রবেশ করান। অভাবনীয়ভাবে মাত্র চারদিনে রেশমি পোকার শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্পাইক প্রোটিন তৈরি হয়।এই স্পাইক প্রোটিন রেশমি পোকার শরীর থেকে আলাদা করে মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হবে। রেশমি পোকাকে সরাসরি খাদ্য হিসেবে ও গ্রহণ করা যাবে, সেক্ষেত্রে রেশমি পোকা থেকে ভ্যাকসিন আলাদা করার ব্যয়ভার ও কমানো সম্ভব হবে এবং শরীরে প্রোটিনের চাহিদা অনেকখানি পূরণ করবে।

কবে আসছে এই ভ্যাকসিনঃ
অধ্যাপক তাকাহিরু বলেন এই প্রক্রিয়াটি স্বল্পব্যায়ি এবং অত্যন্ত দ্রুত। জীন রেশমি পোকার শরীরে প্রবেশ করান থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদন পর্যন্ত সময় লাগে মাত্র ৪০ দিন। এবং খুব শীঘ্রয়ই তাঁরা এই ভ্যাকসিনকে প্রাণীর দেহে প্রবেশ করাচ্ছেন। তাঁরা আরও আশা করছেন ২০২১ সালের শুরুর দিকেই মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রবেশ করানো সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ কিভাবে লাভবান হবে এই ভ্যাকসিন থেকেঃ
বাংলাদেশে রাজশাহী সহ বিভিন্ন এলাকায় রেশমি চাষের ব্যাপক প্রচলন আছে। জাপানের সাথে বাংলাদেশ যৌথ কোলাবরেশনের মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে অতি সহজেই এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন সম্ভব। তাছাড়া এই ভ্যাকসিন যেহেতু মুখে ও গ্রহণ করা যাবে, এর নিরাপত্তা ও কার্যকরীতা ও নিশ্চিত করা সহজ হবে।

ডা. মোহাম্মাদ আরিফ হোসেন
চিকিৎসা বিজ্ঞানী, টোকিও, জাপান

ডা: আরিফ হোসেন

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102