রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন

দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেশি

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৫৪৪ Time View

👤স্টাফ রিপোর্টারঃ তিলক বালা
🕛০১-০৯-২০২০

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এ কারণে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছেই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর নতুন করে আবারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে মানুষের মধ্যে নতুন ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা সরাসরি এই প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বরং সেরে ওঠা ব্যক্তিদের সতর্ক থাকতে বলেছেন।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে একই ব্যক্তির যে দুইবার করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, সে প্রমাণ সম্প্রতি মিলেছে। তবে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ কতটা বিপজ্জনক। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের প্রমাণ আগেও মিলেছে। ওই সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে জানান, প্রথম সংক্রমণের মৃত ভাইরাস চিহ্নিত হওয়ার ফলেই নতুন করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এর ফলে ওই ব্যক্তি বা মহিলার রিপোর্ট পজিটিভ এলেও তারা অসুস্থ বোধ করবেন না বা তাদের থেকে অন্যদের শরীরে ভাইরাস আর সংক্রমিত হবে না।

সম্প্রতি হংকংয়ে এক যুবকের হাত ধরে বিশ্বে প্রথমবার একই ব্যক্তির দুইবার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নথিভূক্ত হয়েছে। সরকারি ভাবে নথিভূক্ত করার ঘটনা এটাই প্রথম। ওই ঘটনার পর আমেরিকাতেও একই ব্যক্তির দুইবার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নথিভূক্ত করা হয়েছে।

চিকিৎসায় একবার সেরে উঠলেই শরীরে যে করোনা-রোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না, এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা! বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্ক করে জানিয়েছেন, কোনও ব্যক্তি একবার করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি দ্বিতীয়বার আর আক্রান্ত হবেন না, তা একেবারেই নয়।

সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় একদল বিজ্ঞানী দাবি করেন, করোনার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি বড়জোড় দুই থেকে ছয়মাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম! হংকং আর আমেরিকার ঘটনা সেই তত্ত্বকেই সত্যি বলে প্রমাণ করে দিল।

হংকংয়ের যুবকের ক্ষেত্রেও ভাইরাসের জিনগত গবেষণা থেকেও এই তথ্য সামনে এসেছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণে আক্রান্তদের শরীরে কোনও উপসর্গ দেখা দেয় না বা তাদের মধ্যে তেমন কোনও অসুস্থতার লক্ষণও প্রকাশ পায় না।

তবে এখন করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের কেস দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমন কোনও দ্বিতীয় সংক্রমণের হদিশ মেলেনি যেখানে দ্বিতীয়বারেও রোগী উপসর্গযুক্ত বা যাদের দুইবারই করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে উপসর্গ লক্ষ্য করা গিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত দুইভাবে কাজ করে। প্রথম ব্যবস্থাটা আমাদের শরীরে সব সময়ই কার্যকরী থাকে। বাইরে থেকে কোনো রোগ-জীবাণু শরীরে ঢুকলেই শরীর তা টের পায় এবং সেই রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। একে বলা হয়, শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক প্রতিক্রিয়া। শরীরের এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না।

করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে শরীর কখনো কখনো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে অ্যান্টিবডির মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ায় দেহকোষকে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ভাইরাসকে লক্ষ্য করে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে হয়। যে অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধক রাসায়নিক ভাইরাসকে ঠেকাতে তার গায়ে সেঁটে থাকতে পারে এবং সাদা রক্ত কোষ যাকে ‘টি সেল’ বলা হয়, সেগুলো শুধু সংক্রমিত কোষগুলোকে মেরে ফেলতে পারবে। একে বলা হয়, সেলুলার রেসপন্স বা সুনির্দিষ্ট কোষ মোকাবিলার প্রক্রিয়া। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার জন্য সময় লাগে।

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেহকোষকে লক্ষ্য করে লড়াই চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শরীরে প্রায় ১০ দিন সময় লাগে। এই দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডিগুলো যদি যথেষ্ট শক্তিশালী হয়, তাহলে শরীর একই ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের কথা মনে রাখতে পারে এবং ভবিষ্যতে চেনা শত্রু হিসেবে এর মোকাবিলা করতে পারে। অর্থাৎ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে ওঠার পর শরীরে থাকা অ্যান্টিবডি যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।

আবার কারো যদি সামান্য উপসর্গ দেখা দেয়, বা কোনো উপসর্গই না হয়, তাহলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেই ভাইরাসের কথা মনেই রাখে না। অর্থাৎ তার শরীরে ওই ভাইরাস মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিরোধ যথেষ্ট মাত্রায় তৈরি হয় না। কিছু কিছু সংক্রমণের কথা অ্যান্টিবডির স্পষ্ট মনে থাকে, কিন্তু কিছু সংক্রমণের কথা বেমালুম ভুলে যায়। শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি এবং স্মৃতিশক্তি যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হয়, তাহলেও দ্বিতীয়বার এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ—কেউ সেরে ওঠার পরও তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। দ্বিতীয়বার আবারও আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে তাকে আবারও পরীক্ষা করতে হবে।

সাধারণত করোনা থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী তিন মাসে শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা কমলেও নয়া সংক্রমণ ঘটলেই তৎক্ষণাৎ ভাইরাস কণাগুলোকে চিহ্নিত করে ফেলছে ‘বি’ সেল। ফলে নয়া সংক্রমণকে রোখার জন্য দ্রুত সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়ে যায় শরীরে। অর্থাৎ, দ্বিতীয়বার করোনার সংক্রমণ রোখা না গেলেও ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানবদেহে ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য কোনো মানুষকে দুই বার সংক্রমিত করা হয়নি। বিশেষ ধরনের এক জোড়া বানরের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষা চালানোর জন্য এই বানরদের দুই বার সংক্রমিত করা হয়েছে। একবার করা হয়েছে যাতে তারা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে এবং তিন সপ্তাহ পর দ্বিতীয়বার করা হয়েছে। খুবই সীমিত পরিসরের এই পরীক্ষায় দেখা গেছে খুবই অল্প দিনের মধ্যে তাদের ভেতর দ্বিতীয়বার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।

তার পরও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ আশাবাদী হতে পারছেন না যে, আবারও তারা করোনায় আক্রান্ত হবেন না। পরীক্ষায় তাদের প্রায় প্রত্যেকের শরীরে কিছু না কিছু পরিমাণ অ্যান্টিবডি পাওয়া যাবে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সেটা প্রয়োজনীয় মাত্রার নাও হতে পারে। বিশেষ একধরনের অ্যান্টিবডিই শুধু করোনা ভাইরাস জীবাণুর গায়ে সেঁটে বসতে পারে এবং ভালো কোষগুলোকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

চীনে সেরে ওঠা ১৭৫ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এদের শতকরা ৩০ ভাগের মধ্যে এই বিশেষ অ্যান্টিবডির মাত্রা খুবই কম। আরেকটি বিষয় হলো, সঠিক অ্যান্টিবডি হয়তো আপনার মধ্যে ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি করবে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনার শরীর থেকে এই জীবাণু উধাও হয়ে যাবে। এই জীবাণু আপনার শরীরে বাসা বেঁধে থাকলে অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকিও থেকে যায়।

ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন।।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102