রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

জবা ফুলের ঔষধি গুণ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৪০৩ Time View

স্টাফ রিপোর্টারঃমরিয়ম,চাঁদপুর
০৮.০৯.২০২০

ফুল পছন্দ করে এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। একদিকে যেমন আমাদের মন ভালো করে, অন্যদিকে ঘর সাজানো থেকে শুরু করে প্রিয়জনকে উপহার দিতে ব্যবহার হয় ওষুধি গুনাগুণের জবা ফুল। নানা রোগের প্রতিকারক হিসেবে এবং চুলের যত্নেও জবা ফুল চমৎকার কাজ করে।

আমাদের দেশে গোলাপী, সাদা, লাল, হলুদ ইত্যাদি নানা রংয়ের জবা ফুল পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাল জবা আয়ুর্বেদ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আসুন জেনে নেই স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে জবা ফুলের কিছু ব্যবহার।

ডায়াবেটিস নিরাময়ে: বায়ো কেমিক্যাল ও বায়ো ফিজিক্যাল রিসার্চ কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে যে, জবা ফুল থেকে তৈরি উপাদান ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জবা ফুলে থাকে ফেরুলিক এসিড, যা এক ধরণের পলিফেনল এবং এটি ডায়াবেটিসের জন্য চিকিৎসা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।

মূত্রনালির সংক্রমণ প্রতিরোধে: এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, জবা ফুলের জীবাণুনাশক ও ছত্রাকনাশক উপাদান কেন্ডিডা অ্যাল্বিকান্সের বিরুদ্ধে কাজ করে। জবা ফুলের পুষ্টি উপাদান মূত্রনালীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং ইউটিআই থেকে মুক্তি দেয়। জবা ফুলের চায়ে ফ্লাভনয়েড থাকে যা ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে প্রতিহত করতে পারে।

জ্বর নিয়ন্ত্রণ ও ঠান্ডা বা ফ্লু নিরাময়ে: জ্বর নিয়ন্ত্রণ ঠান্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হলে কিছু জবা ফুলের পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে চা তৈরি করে পান করুন। দ্যা ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ফার্মাসিউটিক্যাল এন্ড বায়ো মেডিক্যাল সাইন্স এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা যায় যে, জ্বরের সময় জবাফুলের চা শীতলীকারক হিসেবে কাজ করে। জবার প্রদাহ রোধী উপাদান মিউকাস পর্দার প্রদাহ কমতে সাহায্য করে।

চুল পড়া কমায়: চুল পড়া রোধে জবা ফুলের পাপড়ি ব্যবহার করা খুবই প্রাচীন প্রতিকার। জবা ফুলের তেল চুলের গোড়া শক্ত করে কারণ এতে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম আছে। এই তেল আস্তে আস্তে মাথার তালুতে মালিশ করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় ও মাথার ত্বক পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে পারে। অসময়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়া রোধ করে এশিয়ান জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, জবা চুল সাদা হয়ে যাওয়াকে ধীর করতে পারে। কিছু জবা ফুল পানিতে দিয়ে ২০ মিনিট ফুটানোর পর ঠাণ্ডা করে নিন। জবাফুলকে পেস্ট করে নিয়ে মাথার তালুতে ও চুলে লাগান এবং ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করুন এবং জবার তেল অসময়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়া রোধ করে।

ব্যথা কমায়: শরীরের ব্যথা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে জবা ফুল। এজন্য পাঁচটি লাল জবার পাতা ও পাঁচটি পাপড়ি নিয়ে পানিতে দিয়ে ৩-৫ মিনিট ফুটানোর পর মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হতে দিন। আধা ঘন্টা পরে এটি পান করুন। ২১ দিন পর্যন্ত এই মিশ্রণটি পান করলে শরীরের ব্যথা কমবে।

ফেসপ্যাক হিসেবে: লাল জবার পাপড়ি শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন। প্রতিদিন পানি বা দুধ বা ফলের রসের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে মুখ পরিষ্কার হয়, মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং বলিরেখার আবির্ভাব রোধ করে।

শুষ্ক ত্বকের নিরাময়ে: নারিকেল তেল বা তিলের তেলের সঙ্গে জবার পাপড়ি দিয়ে তাপ দিন। তারপর এটি ঠাণ্ডা হলে শুষ্ক ত্বকে লাগান। এটি শুষ্ক ত্বককে নিরাময় করবে এবং যেকোন ধরনের ফাটাও ভালো করবে।

টাক পোকা রোগ: চুল স্বাভাবিক আছে অথচ ফাঙ্গাসে কিছু জায়গা চুল উঠে টাক হয়ে গেছে এ অবস্থায় জবাফুল বেটে ওখানে লাগালে কিছু দিনের মধ্যে চুল উঠে যাবে। এক /দুইটা ফুল বেটে ৭/৮ দিন যে কোনো সময় লাগাতে হবে এবং দুই/এক ঘণ্টা রাখতে হবে অথবা যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হবে।

চোখ উঠা: চোখের কোণে ক্ষত হয়ে পুঁজ পড়ছে। সে ক্ষেত্রে জবা ফুল বেটে চোখের ভিতরটা বাদ দিয়ে চোখের উপর ও নিচের পাতায় গোল করে লাগিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়। দিনের যে কোনো সময় এক /দুইটা ফুল বেটে ৭/৮ দিন লাগাতে হবে এবং এক ঘন্টা রাখতে হবে।

হাতের তালুতে চামড়া উঠা: হাতের তালুতে চামড়া উঠে খসখসে হয়ে গেলে জবা ফুল তালুতে মাখলে খুব উপকার পাওয়া যায়। দিনে দুই তিন বার এক /দুইটা ফুল হাতের মধ্যেই ডলে ডলে লাগাতে হবে। লাগিয়ে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করা যাবে। যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হবে

জবা ফুলের আরো কিছু উপকারিতা আছে। যেমন খুশকির বিরুদ্ধে জবা ভালো কাজ করে। কিছু কিছু দেশে জুতো পালিশের কাজে ব্যবহার করা হয় জবা ফুল। শিশুদের শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জবা ফুল ও এর পাতা পুড়িয়ে আই শ্যাডো হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যাদের টাইপ দুই ডায়াবেটিস আছে তাদের রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে জবা। জবা ফুল ব্যবহারের পূর্বে পরিষ্কার করে নিন এবং ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। কীটনাশক ও সারমুক্ত কিনা জেনে নিন। এছাড়া শরীরের লৌহের ঘাটতি কমায় লাল জবার পাপড়ি পানিতে সিদ্ধ করে পান করলে। সাদা জবার পাপড়ি সিদ্ধ করে পান করলে বিষণ্ণতা দূর হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102