শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

সমন্বিত নেতৃত্বে স্বাস্থ্যসেবাঃ অভিনন্দন নার্সদের।

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৯৩৭ Time View

👩সিনিয়র রিপোর্টার:

রাবিয়া আক্তার মীম
মিরপুর, ঢাকা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্যের ডিজি।২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহান থেকে করোনা ভাইরাস গোটাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। গেলো বছরটি অদৃশ্য ভাইরাসের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ে মত্ত ছিলো পুরো বিশ্ব। চীন থেকে ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরে বাংলাদেশেও ভাইরাসটি আঘাত হানে। গেলো বছরের ৮ মার্চ তিনজনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি শনাক্তের মধ্য দিয়ে নয়া ভাইরাসের কবলে পড়ে দেশ। ১০ দিনের মাথায় এলো আরও দুঃসংবাদ। সংক্রমিত একজনের মৃত্যু হয় গেলো বছরের ১৮ মার্চ। শুরুতে নয়া ভাইরাসের গতিবিধি, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হার ও ভাইরাসের কার্যক্ষমতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকায় গোটা বিশ্ব নাকানি-চুবানি খেয়েছে। ছোট্ট কিন্তু জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও শুরুতে সীমিত সম্পদ, কম সংখ্যক জনশক্তি নিয়ে ভাইরাসটি মোকাবিলায় বাধা পেয়েছে। এরপর আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রমাণ করেছে বাঙালি বীরের জাতি। তারা কখনো পিছ পা হয় না।

শুরুতে করোনা মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী আস্থা রেখেছিলেন গত প্রায় সাত বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বের ওপর। যাদের বিরুদ্ধে উঠেছে অভিযোগের তীর তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য শত আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও প্রশংসা এসেছে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে। এসেছে নানা পরামর্শ ও নির্দেশনা। বাছাই করে সবচেয়ে সৎ, আদর্শবান ও যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শূন্য পদে। বিতর্কের বাইরের মানুষ হিসেবে পরিচিত মো. আবদুল মান্নানকে ভূমি সংস্কার বোর্ড থেকে নিয়ে এসে বসিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা সচিবের আসনে। অন্যদিকে শত তদবির আর অনুরোধের আবেদন ফেলে কর্মঠ অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। চারদিকে মৃত্যু আতঙ্ক। সেই সাথে করোনা ভাইরাস বিষয়ে গুজব ডালপালা মেলে চলছে। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। সেই সময় থেকে শত বাধা অতিক্রম করে জীবনের মায়া ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত প্রায় এগারো মাস নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যসেবা সচিব মো. আবদুল মান্নান ও স্বাস্থ্যের ডিজি অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তারা দুজন এ পর্যন্ত কোনো দিন ছুটিতে যাননি। নিয়মিত করোনা মোকাবিলায় মেধা, মনন ও কৌশল প্রণয়নে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারা দেশে বাড়িয়েছেন নমুনা পরীক্ষা
কেন্দ্রের সংখ্যা। ইতোমধ্যে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ১১৬টি আরটিপিসিআর ল্যাবে, ২৮টি জিন এক্সপার্ট ল্যাবে এবং ৫৬টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবসহ ২০০টি ল্যাবে করোনা শনাক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। রোধ করেছেন করোনাকে পুঁজি করে যারা মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসায় নেমেছিল তাদের। খুঁজে খুঁজে ধরেছেন স্বাস্থ্যের কালো বিড়াল। ভেঙে দিয়েছেন দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সিন্ডিকেট। এসব বিষয় ভালোভাবে দেখভালের জন্য তৈরি করেছেন একটি কো-অর্ডিনেশন সেল। করোনা সংক্রমণের শুরুতেই জাতীয় পর্যায় থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত করোনা মোকাবিলায় সরকার যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। করোনা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণের জন্য সাত ধরনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে করোনা রোগীদের চিকিৎসা বিষয়ে প্রটোকল আটবার হালনাগাদ করা হয়েছে। হাসপাতাল পরিদর্শন রেখেছেন নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে। ফলে রোগী ও তার স্বজন থেকে চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল বেড়েছে।

উদ্যোগের যেনো শেষ নেই। দেশ যখন লকডাউনে চলে যায় তখন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি রোধে জরুরি টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়। এ পর্যন্ত দুই কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৯ জনকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। সারা দেশে ৩০টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা চলছে। সব জেলা-উপজেলায় কমপক্ষে পাঁচটি করে শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফলে বিশ্বের অন্যন্য দেশের মতো করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার ছড়িয়ে পড়েনি। গত এগারো মাসে পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৩২৬ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। আর মৃত্যু হয় আট হাজার তিনজনের। এরপর ভ্যাকসিনের খোঁজে নামে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের চার জুন লন্ডনে গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট-২০২০ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন। এজন্য দ্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনিজেশন (গ্যাভি) ধন্যবাদপত্র প্রেরণ করেন। গ্যাভির ভ্যাকসিন পাওয়ার তৎপরতা ও ভিন্ন উৎস থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের চেষ্টা শুরু থেকেই বাংলাদেশে অব্যাহত ছিলো। শুরু থেকেই ভ্যাকসিন বিষয়ে জাতিকে আশ্বস্ত করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম। মানুষও তাদের কথায় আস্থা রেখেছে। শত আলোচনা-সমালোচনার পরও নির্দিষ্ট সময়ে আসছে ভারত থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। গত ২১ জানুয়ারি এসেছে ভারত সরকারের উপহারের ২০ লাখ ভ্যাকসিন। ২৫ জানুয়ারি সেরাম থেকে ক্রয়কৃত তিন কোটি ডোজের প্রথম চালান হিসেবে ৫০ লাখ ডোজ আসবে।

এসব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই আজ যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের জরিপে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করে আর্থ-সামাজিক উন্নতিসহ বসবাস উপযোগী নিরাপদ শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। এ তালিকায় বাংলাদেশের পেছনে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালির মতো শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলো। এমনকি প্রতিবেশী ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশের ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন প্রমাণ করে, করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ শুরু থেকেই সঠিক পথে ছিল।

সেটি না হলে পরিস্থিতি অন্য রকম থাকতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি প্রাণঘাতী বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করছে। একই সঙ্গে অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভালো না হলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতো। সাধারণ ছুটি প্রত্যাহার করলে সবকিছু স্বাভাবিক করা সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, সব মানুষ যখন ঘরবন্দি ছিলেন, তখন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন। আক্রান্তদের সুস্থ করে তারা মৃত্যুহার কমিয়ে এনেছেন। সুতরাং করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার মূল কৃতিত্ব তাদের প্রাপ্য। আশা করি, তারা হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন।

 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা প্রতিরোধী টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। ইতোমধ্যে ভারত সরকারের টিকা চলে আসছে। আগামীকাল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ টিকা চলে আসবে। এরপর টিকার জোট গ্যাভি থেকে আরও টিকা আসবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটির মতো টিকা হাতে পাওয়া যাবে।এদিকে স্বাস্থ্য সেবার অভূতপূর্ব সাফল্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নার্স সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব ইকবাল হোসেন সবুজ বিডিনার্সিং২৪ কে বলেন, আওয়ামিলীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য সেবায় রেকর্ড পরিমান উন্নতি হয়েছে। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার সভাপতি কামাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে নার্সিং পেশা সহ স্বাস্থ্য সেবা এগিয়ে যাচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন সিলেট ওসমানী শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক বলেন, নার্সিং পেশার মানোন্নয়নে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি সরকারের সকল উদ্যোগকে সাদুবাদ জানান। সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এন্ড রাইটস এর সাধারন সম্পাদক সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, করোনা মোকাবিলায় নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা ভ্যাক্সিন উদ্বোধনে একজন নার্সকে বেছে নিয়েছেন। আশাকরি নার্সকে ভ্যাক্সিন দেয়ার মাধ্যমে দেশের মানুষ ভ্যাক্সিন দিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবে। নার্সদের এই ত্যাগ বাঙালি জাতি সারাজীবন মনে রাখবে বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102