জানুয়ারিতে সিটিজেন চার্টার স্থাপনের নির্দেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের
জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত সকল নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে দৃশ্যমান স্থানে নির্ধারিত ছক মোতাবেক হালনাগাদ সিটিজেন চার্টার স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ২১ ডিসেম্বর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক রশিদুল মান্নাফ কবির স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
সিটিজেন চার্টর অর্থ
নাগরিক সনদ । একটি দেশের সরকারী অফিসে জনগণ কী কী সেবা পাবে তা জনগণকে পরিষ্কারভাবে যে সনদের মাধ্যমে জানানো হয় তাই সিটিজেন চার্টার।
সিটিজেন চার্টর বা নাগরিক সনদ সম্পর্কে দেশের জনগণের বিশাল একটি অংশ কিছুই জানেননা। সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান কি সেবা দেয়, কিভাবে সেবা দেয়, জনগণ সেবা কিভাবে নিতে পারেন এবং প্রতিষ্ঠান কিভাবে সেবা দিতে পারে এই বিষয়গুলি পরিষ্কারভাবে জানেননা আমাদের দেশের জনগণ। এ ব্যপারে কাহারো কোন মাথা ব্যথাও নাই। এব্যপারে সরকারের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং কর্মচারীরা স্মার্টলি প্রতিবেদন জমা দিয়া সরকারকে খুশি হওয়ার মত ফলাফল দিয়াই খালাস । এতে ক্ষতি কার ? সরকার এবং এ দেশের জনগনের। সরকারের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং কর্মচারীরা ওতো এদেশের জনগণ??? সিটিজেন চার্টর বা নাগরিক সনদ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করাও সরকারের সকল পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
সিটিজেন চার্টর বা নাগরিক সনদের উত্পত্তি:
১৯৯১ সালে জন মেজরের নেতৃত্বাধীন রক্ষনশীল সরকারের শাসনামলে নাগরিক সনদের উত্পত্তি হয় যুক্তরাজ্যে ৷ সে সময় দেশটিতে একটি প্রশ্ন খুব ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছিল ৷ তা হল, বেসরকারি সংস্থাগুলো যদি মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারে তবে সরকারি সংস্থাগুলো কেন পারবেনা৷ নাগরিকেরা আরও প্রশ্ন করতে শুরু করে যে, সরকারি সেবার মান যদি ভাল না হয় তাহলে জনগন সেই সেবার জন্য করের মাধ্যমে যে টাকা দিয়েছে তা কেন ফেরতপাবে না – যেমনটি তারা কোনো বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সেবা-সংস্থার কাছ থেকে ফেরত পেত? মূলত এই প্রশ্নগুলোর পরিপ্রেক্ষিতেই যুক্তরাজ্যে নাগরিক সনদকর্মসূচির সূত্রপাত হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের নাগরিকদের জন্য সরকারি সেবার গুণগত মানের অব্যহত উত্কর্ষ সাধন যাতে তা ব্যবহারকারীদের চাহিদা ওআকাঙ্খা পূরণে সক্ষম হয়৷
নাগরিক সনদ প্রনয়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগনের জন্য সরকারি সেবা প্রাপ্তি সহজতর করা এবং সেবার মানোন্নয়ন করা।
সিটিজেন চার্টর বা নাগরিক সনদের চারটি প্রধান উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা যায়-
প্রথমতঃ
জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশার সাথে সংগতি রেখে সেবার মান নির্ধারণ এবং তাদের মতামত নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত তা পুনঃনির্ধারণ, যাতে করে অব্যহতভাবে সেবার মানোন্নয়ন এবং সেবাকে জনবান্ধব করা সম্ভবপর হয়।
দ্বিতীয়তঃ
জনগনকে তাদের প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা যাতে করে তারা সেবা প্রদানকারীদের কাছে সেসব অধিকার দারি করতে পারে এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে (যেমন, অভিযোগ নিস্পত্তির ব্যবস্থা) সেবা প্রদানকারীদের সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
তৃতীয়তঃ
সেবা প্রদানকারীদের সামর্থ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের (যেমন, সহায়তা কাউন্টার প্রতিষ্ঠা) মাধ্যমে তাদের আচরণের উন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানে এক ধরণের সৌজন্যতার সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো।
চতুর্থতঃ
সেবার মানোন্নয়ন, জনগনের অংশগ্রহণ, অভিযোগ নিস্পত্তি প্রভৃতি উদ্যোগের মাধ্যমে জনগনের আস্থা অর্জন।
সিটিজেন চার্টর বা বাংলাদেশ নাগরিক সনদ উদ্যোগ :
২০০০ সালে (Public Administration Reform Commission (PARC)) বাংলাদেশের তিনটি মন্ত্রনালয় এবং পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নাগরিক সনদ প্রণয়নের সুপারিশ করে৷ কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত্ এটি বাস্তবায়িত হয়নি৷ ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সে বছর জুন মাসে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সকল মন্ত্রনালয়ে ‘প্রশাসনিক কর্মকান্ডে গতিশীলতা আনয়ন’ বিষয়ক একটি পত্রে মন্ত্রনালয়গুলোকে কতিপয় নির্দেশের সাথেনাগরিক সনদ প্রণয়নের নির্দেশও দেওয়া হয়৷ উক্ত চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় সকল মন্ত্রনালয় এবং বেশকিছু অধীনস্ত বিভাগে নাগরিক সনদ প্রণয়ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে নাগরিক সনদ প্রণয়ন করা হয়৷ স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিক সনদ প্রণয়নের জন্য সংস্থাপন মন্ত্রনালয় সকল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে নির্দেশের ফলে জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়গুলোতেও নাগরিক সনদ প্রণয়ন করা হয়৷
তথ্যসূত্র : নাগরিক সনদ কি, কেন ও কিভাবে বিষয়ক সেমিনারের মূল প্রবন্ধ থেকে উপস্থাপিত।