শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন

করোনা ভ্যাকসিনের সাতকাহন

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৬১০ Time View

করোনা ভ্যাকসিনের সাতকাহন।

👤স্টাফ রিপোর্টারঃ লিজা খান,ঢাকা
🕐২১.০৯.২০২০

‘টক অব দ্য কান্ট্রি’, ‘টক অব দ্য টাউন’-আমরা হরহামেশাই শুনি। কিন্তু ‘টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এই প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে শুনছি আর সেটি হচ্ছে, ‘কবে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আমাদের হাতে এসে পৌঁছবে।’ বিশ্ববাসী অনেকটা হতাশায় নিমজ্জিত। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ-মৃত্যু কোনোটিই কমছে না। চীনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই আশা করেছিলেন ৪-৫ মাসের মধ্যেই হয়তো নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কিন্তু বিশ্ববাসী করোনা সংক্রমণের ৯ মাস অতিক্রম করছে, কোথাও হ্রাস পেয়ে আবার বেড়ে যাচ্ছে, কোথাও লেখচিত্রের সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছেনি, কোথাও আবার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, কোনো কোনো দেশ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা বেড়েই চলেছে। একের পর এক সংক্রমিত হচ্ছে দেশ-অঞ্চল। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সত্যিকার অর্থে কোনো কার্যকরী ওষুধ পাওয়া যায়নি-যা কিছু সব মুমূর্ষু করোনা রোগীদের জন্য। এখন বিশ্ববাসীর সামনে একটিই আশার আলো ‘একটি নিরাপদ, কার্যকর করোনা ভ্যাকসিন’ এ জন্য। বিশ্বের নামিদামি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হিমশিম খাচ্ছে কত দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করে করোনাকে প্রতিরোধ করা যায়। চলছে কূটনীতি, চলছে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা, চলছে রাজনীতি, চলছে গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের প্রতিযোগিতা। যাই চলুক, বিশ্ববাসী চায় একটি নিরাপদ, কার্যকর, দীর্ঘস্থায়ী ভ্যাকসিন। এ নিয়ে অতি সম্প্রতি বেশ কিছু নতুন তথ্য যুক্ত হয়েছে –১. করোনার টিকা সংগ্রহ-বিতরণে নেতৃত্ব দেবে ইউনিসেফ (৬ সেপ্টেম্বর, ২০) ২. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আকারে টিকাদান আগামী বছর মাঝামাঝির আগে নয় (৪ সেপ্টেম্বর, ২০)। ৩. নোভাভ্যাক্সের টিকার ও নিরাপদ (২ সেপ্টেম্বর,২০) ৪. রাশিয়ার টিকা করোনা প্রতিরোধ করেছে (৫ সেপ্টেম্বর, ২০)। তাছাড়া অন্যান্য খবর তো আছেই। এর আগে ১১ জুলাই পত্রিকার পাতায় যে আশার খবরটি পেয়েছি, ‘অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অক্টোবরে, দাম থাকবে নাগালে।’ খবরটি অবশ্যই আমাদের কিছুটা আশ্বস্ত করেছে।
ভ্যাকসিনের ইতিহাস : বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে ভ্যাকসিন যা মানুষকে দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য দিয়েছে। ভ্যাকসিন মূলত ভাইরাসের প্রতিরূপ বা ভাইরাসের অংশ যা সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জাগিয়ে এন্টিবডি উৎপন্ন করে। তবে ভ্যাকসিন তৈরিতে অন্য ওষুধের চেয়ে উন্নত নিরাপত্তা মান বজায় রাখতে হয়। কারণ, এটি লাখো মানুষের শরীরে দেওয়া হয়ে থাকে। রোগ প্রতিষেধক (টিকার) ব্যবহারের চর্চা কয়েকশ বছর আগের। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাপের বিষ পান করতেন। গুটিবসন্তকে প্রতিরোধ করার জন্য চামড়া কেটে কাউপক্সের ঘায়ের পুঁজ ঢুকিয়ে দিতেন। ১৭৯৬ সালে অ্যাডওয়ার্ড জেনার কাউপক্সের উপাদান ব্যবহার করে গুটিবসন্তের (স্মলপক্স) প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন যা খুব দ্রুত প্রসার লাভ করে। এ জন্য জেনারকে ভ্যাকসিনেশন বা ইমিউনোলজির প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। ভ্যাকসিন শব্দটি ভ্যাকা মানে গরু থেকে আসে। তার উদ্ভাবন পরবর্তী দুইশ বছর ধরে চিকিৎসা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করে যার ফলে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়। লুইস পাস্তুর-এর পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে কুকুর কামড়ানোর প্রতিষেধক (রাবিস ভ্যাকসিন) আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানব দেহে রোগ প্রতিরোধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তখন অনুজীব বিজ্ঞানের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩০ সালের মধ্যে দ্রুত ডিপথেরিয়া, টিটেনাসস, কলেরা, প্লেগ, টাইফয়েড, যক্ষ্মাসহ অনেক প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য একটা উর্বর সময় হয়ে উঠে। পরীক্ষাগারে ভাইরাস বৃদ্ধির জন্য পদ্ধতিগুলো পোলিও ভ্যাকসিন দ্রুত আবিষ্কারে ব্যবহৃত হয়। গবেষকরা তখন শিশুদের সাধারণ রোগ যেমন হাম, মাম্পস এবং রুবেলার ভ্যাকসিন তৈরিতে মনোযোগী হয় এবং সফলতা অর্জন করে। এতে শিশুরা এ সমস্ত রোগের কষ্ট থেকে মুক্তি পায়। উদ্ভাবনী কৌশলগুলো এখন রিকম্বিন্যান্ট ডিএন প্রযুক্তি এবং নতুন বিতরণ কৌশল বিজ্ঞানীদের নতুন দিকে নিয়ে যাওয়ায় ভ্যাকসিন গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে। এখন রোগের লক্ষ্যমাত্রা অনেক প্রসারিত হয়েছে। এডওয়ার্ড জেনার, লুইস পাস্তুর এবং ম্যাক্স হিলম্যান ভ্যাকসিন বিকাশের অগ্রগামী হিসেবে বিশেষভাবে সম্মানিত হন।
ভ্যাকসিন উন্নয়ন ও পরীক্ষার ধাপসমূহ : একটি ভ্যাকসিন তৈরিতে সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগে, কখনো ১২-২৪ মাস লেগেছে আবার কখনো সফলভাবে তৈরিই করা যায়নি। তবে করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে মাত্র তিন মাসে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে জরুরি প্রয়োজন ও বিশ্বব্যাপী এর মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে। সব দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরিতে মোটামুটি এক ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরন করে। সাধারণত ধাপগুলো নিম্নরূপ :

ক) প্রথম ধাপ : ল্যাবরেটরি ও অ্যানিমেল পরীক্ষা

১) গবেষণামূলক (Exploratory)

এ সময় মৌলিক ল্যাব গবেষণা করা হয়। গবেষকরা নির্দিষ্ট রোগের বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ বা চিকিৎসার জন্য প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম এন্টিজেন প্রস্তুত করে। এর জন্য সাধারণত ২-৪ বছর সময় লাগে।

২) প্রিক্লিনিক্যাল : এ সময়ে প্রার্থী ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও রোগ প্রতিরোধ সৃষ্টির ক্ষমতা দেখার জন্য টিস্যু কালচার এবং পশুর ওপর পরীক্ষা করা হয়। পশু হিসেবে ইঁদুর বা বানর পরীক্ষা করে মানব দেহে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে সে রকম একটি ধারণা নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে এ ধাপেই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। এ ধাপে সাধারণত ১-২ বছর সময় লাগে।

৩) পরীক্ষামূলক নতুন ওষুধের আবেদন : যুক্তরাষ্ট্রে এফডিএ এর কাছে একটি স্পন্সরের মাধ্যমে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার রিপোর্টসহ সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে প্রস্তাবিত গবেষণার একটি প্রটোকল জমা দিতে হবে। যেখানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে সেই প্রতিষ্ঠানের রিভিউ বোর্ডের অনুমোদন পরবর্তী ধাপের জন্য বাধ্যতামূলক। এফডিএ সাধারণত ৩০ দিনে অনুমোদন দিয়ে থাকে।

খ) মানব দেহে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা : এটি সাধারণত তিন পর্যায়ে (Phase) হয়।

জ -১ : ভ্যাকসিন ট্রায়াল : প্রথমে প্রাপ্তবয়ষ্ক ২০-৮০ জনের একটি ছোট গ্রুপে প্রার্থী ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। শিশুদের জন্য হলেও প্রথমে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে পরীক্ষা করতে হবে। এ পর্যায়ে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও রোগ প্রতিরোধ ধরন ও সক্ষমতা দেখা হয়। প্রথম পর্য়ায় সফল হলে পরবর্তী পর্যায়ে যাবে।

২) ফেইজ-২ : ঝুঁকিপূর্ণ মানুষসহ কয়েকশ মানুষের একটি বড় গ্রুপে এ পর্যায়ে পরীক্ষা চালানো হয়। কন্ট্রোল গ্রুপ থাকবে এখানে। এ সময় ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা, রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা, প্রস্তাবিত ডোজ, শিডিউল এবং ব্যবহারের পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করা হয়।

৩) ফেইজ-৩ : ফেইজ-২ সফল হলে এ পর্যায়ে হাজার হাজার মানুষের ওপর পর্যবেক্ষণ চালাতে হবে। এ পর্যায়ে বড় গ্রুপে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা, নিরাপত্তা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়।

৪) ফেইজ-৪ : অনুমোদনের পরও ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। গ) অনুমোদন এবং বিশেষ অনুমতিপত্র গ্রহণ (Licensure) : মানবদেহে সফল পরীক্ষার পর ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা এফডিএ’র কাছে বায়োলজিকস লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। এফডিএ সমস্ত কিছু সরেজমিনে যাচাই-বাছাই, ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে যোগ্য হলে অনুমতি প্রদান করে। পাশাপাশি এফডিএ ভ্যাকসিন প্রস্তুতির সব প্রক্রিয়া ও মান সব সময় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

ঘ) লাইসেন্স পরবর্তী পর্যবেক্ষণ : ভ্যাকসিন অনুমোদিত হওয়ার পরে তাদের নানা ধরনের পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি রয়েছে। সব দেশেই এ ধরনের পদ্ধতির মধ্য দিয়ে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে হয়।

করোনা ভ্যাকসিনের সর্বশেষ পরিস্থিতি : করোনা মহামারীর আট মাস অতিক্রম করেছে বিশ্ব। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে শনাক্ত হয়েছিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী। এরপর সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। সংক্রমণ ও মৃত্যুর ভয়ানক পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় অধিকাংশ দেশ। এখনো দিন দিন পরিস্থিতি অবনতির দিকেই যাচ্ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির সফঙ্গ বেড়ে চলেছে মৃত্যু। ভ্যাকসিন ছাড়া এ ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী এখন বিশ্বে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে ১৭৬টি উদ্যোগ চালু আছে। এর মধ্যে ৩৪টি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে যার মধ্যে তৃতীয় ধাপে ৮টি সবচেয়ে এগিয়ে আছে।

উল্লেখযোগ্য ভ্যাকসিনের পরিস্থিতি :

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন : অক্সফোর্ড ও এস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে যাতে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ব্রাজিলে পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবী এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। দুটি ধাপ সফল হওয়ার পর এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে মানবদেহে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১০টি সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার চুক্তি সই হয়েছে। জুনের শুরুতে এস্ট্রাজেনেকার সিইও বলেছেন, এই টিকার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে এক বছরের জন্য। তারা আরও বলেছেন, ইতোমধ্যে ২০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির আদেশ পেয়েছেন। প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম তিন ডলার বা এক কাপ কফির দাম হতে পারে। ভ্যাকসিনের ফলের অপেক্ষার পাশাপাশি ভ্যাকসিন উৎপাদন চলছে। সব কিছু ঠিকঠাকই থাকলে অক্টোবরেই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা যাবে।

চীনের ক্যানসিনোর ভ্যাকসিন : চীনে মোট আটটি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। চীন ও চীনের বাইরে ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে পরীক্ষা চালানোর পর অ্যাড ৫-এনকোভ নামের এ ভ্যাকসিন নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে। এ ভ্যাকসিনটি কানাডাতেও মানবপরীক্ষার জন্য অনুমতি পেয়েছে। চীনের সেনাবাহিনী পরীক্ষামূলকভাবে এ ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে।

রাশিয়ার ভ্যাকসিন : গত ১১ আগস্ট অনুমোদনের পর দ্রুতগতিতে এ টিকা অনুমোদন দেওয়া নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। খ্যাতিমান মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এর গত ৪ সেপ্টেম্বরের সংখ্যায় রাশিয়ার গবেষকরা টিকাটি নিয়ে তাদের গবেষণাসংক্রান্ত প্রথম নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা গেছে, টিকার প্রাথমিক পরীক্ষায় এটি প্রতিরোধে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। শরীরে তাদের টিকা দেওয়ার পর সক্ষম এন্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং টিকাটির বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এ ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হবে।

চূড়ান্ত ধাপে মডার্নার ভ্যাকসিন : যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিন জুলাই মাসে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে। মডার্নার এমআরএনএ-১২৩৩ ভ্যাকসিন তৈরি প্রতিযোগিতায় অক্সফোর্ডের পরের অবস্থানেই আছে। ইতোমধ্যে এ সংস্থা উৎপাদনের চুক্তিও করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রেরই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ক্যাটালেন্টের সঙ্গে। প্রথম ব্যাচেই ক্যাটালেন্ট ১০ কোটি টিকার উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সম্প্রতি মডার্নার সিইও স্টিফেনন বানসেল বলেছেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল আগামী নভেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

তৃতীয় ধাপে ফাইজার : আমেরিকার ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি বিএনটি-১৬২ ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে সুরক্ষা এবং কার্যকারিতায় সফল হয়েছে। সম্প্রতি ৬০ হাজার মানুষের দেহে প্রয়োগ শুরু করার মাধ্যমে চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে ফাইজার-বায়োএনটেক। ফাইজার আশা করছে, ট্রায়ালে সব কিছু ঠিকমত থাকলে আগামী শরতে জরুরি ব্যবহারের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিন : যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি নোভাভ্যাক্সের টিকাটি কার্যকর ও নিরাপদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ এক নিবন্ধে টিকাটি নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলে বলা হয়েছে।

এছাড়াও প্রতিযোগিতায় রয়েছে চীনের সিনোফার্ম, সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের গবেষকদের ভ্যাকসিন, ফ্রান্সের সানোফির ভ্যাকসিন, লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ, জনসন অ্যান্ড জনসনসহ বেশ কিছু বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠান।

ভারতীয় ভ্যাকসিন : ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদক সংস্থা যা বিশ্বের বছরে ৬০ ভাগ টিকার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। সংস্থাটি অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ৪০ কোটি ডোজের এবং নোভাভ্যাক্সের ১০ কোটি ডোজের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে চলেছে। ভারতের হায়দরাবাদভিত্তিক ভারত বায়োটক ‘কোভ্যাক্সিন’ নামের একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সফল হওয়ার দাবি করেছে। এ ভ্যাকসিন তৈরিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ ও ন্যাশনাল ইনস্টিউট অব ভাইরোলজি একত্রে কাজ করছে।

বাংলাদেশ ও করোনা ভ্যাকসিন : ইতোমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত ২ জুলাই বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো টিকা গ্রহণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি চীনের সিনোভ্যাকের সঙ্গে বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি ভ্যাকসিন ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছে এবং দাবি করেছে তাদের প্রাথমিক পরীক্ষা সফল।

লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102