সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

করোনাকালে পাগলা মসজিদে দানে রেকর্ড, নগদ পৌনে দুই কোটি টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ-রূপা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২০
  • ৫১৮ Time View

সৈকত, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক থেকে এবার এক কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭১ টাকা পাওয়া গেছে। যা দানবাক্সগুলো থেকে পাওয়া দানের হিসাবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। শনিবার (২২ আগস্ট) সকাল ১০টায় দানবাক্স খোলার পর গণনা শেষে বিকালে টাকার এই হিসাব পাওয়া যায়।

বিপুল পরিমাণ দানের এই নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দান হিসেবে বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার অন্যবারের চেয়ে পরিমাণে কম পাওয়া গেছে। করোনার কারণে মসজিদে মহিলাদের প্রবেশাধিকার সীমিত করে দেয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার কম পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর দানবাক্সগুলো থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি ৫০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৯৮ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

সাধারণত তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার ৬ মাস ৭ দিন পর এসব দান সিন্দুক খোলা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন এক কোটি ৫০ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৮ টাকা পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার (২২ আগস্ট) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দান সিন্দুক খোলা হয়। দান সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা।

টাকা গণনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদ মাদরাসার ৬০জন ছাত্রশিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ অংশ নেন।

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী পাগলা মসজিদের টাকা গণনার কাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় পাগলা মসজিদের সাধারণ সম্পাদক কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ ও সদস্য সাইফুল হক মোল্লা দুলু সহ জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার তত্ত্বাবধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা, রূপালী ব্যংকের এজিএম অনুফ কুমার ভদ্র প্রমুখ টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন।

এ সময় সিন্দুক খোলা কমিটির সদস্যরা ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তা, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।

টাকা গণনার এই এলাহী কাণ্ড নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন।

 

কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্চা পূর্ণ হয়। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন।

তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর লকডাউনের সময়ে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল সীমিত করে দেয়া হয় এবং মহিলাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়। এ রকম পরিস্থিতিতেও মসজিদটিতে মানুষ দান করে আসছেন।

টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে এবার এক কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭১ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাগলা মসজিদের দান বাক্সে জমা পড়েছে।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল।

সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন।

দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ। এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102