👤স্টাফ রিপোর্টার: বিভাবরী,ঢাকা।
🕤০৭/০৯/২০২০
করোনাকালীন দেশের মানুষকে টেলিফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার এক অসাধারণ প্রচেষ্টা হলো টেলিসেবা। কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার একটি স্বতন্ত্র সেবাদানকারী সেন্টার।
যেখানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ, রোগীর মেডিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট, কাউন্সেলিং, ফলোআপ, কেয়ার গিভার কাউন্সেলিং, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক সেবা যেমন- জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালে ভর্তি, খাদ্য ও জরুরি ওষুধ সহায়তা, মরদেহ সৎকার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এটুআই, আইসিটি ডিভিশনের সরাসরি পরিকল্পনা ও তত্ত্ববধায়নে কোভিড-১৯ টেলিহেলথ ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ও সার্বিক পরিচালনায় সহযোগিতা করছে স্বাস্থ্য বাতায়ন, সিনেসিস আইটি ও অবকাঠামোগত দিকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।
ইতোমধ্যে টেলিহেলথ সেন্টার তিন লাখ চার হাজার ৪২ জনকে মানুষকে এ সেবা দিয়েছে। করোনাকালীন এ টেলিসেবা সাধারণ মানুষের অনেকটা আস্থা ও ভরসার জায়গা তৈরি করেছে।
কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার থেকে ১০০ জন চিকিৎসক ও ২০ জন হেলথ ইনফরমেশন অফিসার অক্লান্ত পরিশ্রম করে সব প্রতিবন্ধকতা সামলে হাসিমুখে টেলিসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দুই সিফটে সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছেন তারা।
এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৬২৬৩ ও ৩৩৩ ছাড়াও কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টারের হটলাইন নম্বরে ০৯৬৬৬৭৭৭২২ সার্বক্ষণিক টেলিসেবা পাওয়া যাচ্ছে। এটি শুধু দেশেই না দেশের বাইরেও সেবা দিয়ে যাচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের তথ্য সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগ থেকে বিভিন্ন তথ্য যেমন- বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, পরীক্ষার তারিখ ইত্যাদি ডেটা সংগ্রহ করে আলাদা আলাদা প্রোফাইল বানানো হয় ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার থেকে যোগাযোগ করে পরামর্শ, সেবা এবং প্রয়োজনে কাউন্সিলিং করা হয়। রোগের তীব্রতা ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের উপস্থিতির ভিত্তিতে চিকিৎসকরা পরবর্তী ফলোআপের তারিখ নির্ধারণ করেন। এছাড়া আরোগ্য লাভের সময়ের মধ্যে তিন থেকে পাঁচ বার ফলোআপ করেন চিকিৎসকরা।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের মেডিক্যাল রিস্ক আসসেসমেন্টের মাধ্যমে মূলত মাইল্ড, মডারেট এবং মিডিয়াম এ তিনটি ভাগে রোগীদের ভাগ করা হয়েছে।
গত ১৮ জুন থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ২৮ হাজার ১০৭ জনকে মেডিক্যাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ও প্রায় এক লাখ নয় হাজার ৮০৪ জনকে ফলোআপ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঘরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন এক লাখ ১৮ হাজার ৩৯৬ জন, হাসপাতালে আছেন পাঁচ হাজার ৮৬৭ জন এবং বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ইত্যাদিতে আক্রান্ত আছেন ২৮ হাজার ১০৭ জন। এছাড়াও ফোন করে বিভিন্ন সেবা নিয়েছেন ৬৬ হাজার ১৩১ জন। যারা করোনা ছাড়াও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তাদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৪৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ, ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ হাঁপানি, ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ হার্টের সমস্যা, ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ কিডনি রোগ এবং ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত।
করোনার মহামারি পরিস্থিতিতে অনেক পরিবারই নানা বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। অনেকে অন্যের সেবা করতে গিয়ে নিজের পুরো পরিবারসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিল না, তাদের এ সংকটকালীন মুহুর্তে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার। এমন অনেক গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার। নিঃসন্তান দম্পতি করোনা আক্রান্ত হয়ে ঘরবন্দী, নানা সামাজিক ও মানসিক প্রতিকূলতায় ভেঙ্গে পড়েছেন তাদের কাউন্সিলিং করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করেছে এ সেন্টার। এছাড়াও জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থাসহ হাসপাতালে ভর্তি, খাদ্য ও জরুরি ওষুধ সহায়তা এবং বিভিন্ন সেবা দিয়েছে টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার।
এ প্রসঙ্গে এটুআই, আইসিটি ডিভিশনের চিফ ই-গভর্ন্যান্স স্ট্র্যাটিজিস্ট ও চিফ কো-অর্ডিনেটর, কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিসের ফরহাদ জাহিদ শেখ বলেন, ‘মার্চের শেষের দিকে যখন করোনা পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়ে যায় তখন টেলিহেলথ সার্ভিসের মাধ্যমে করোনা আক্রান্তদের সেবা দানের বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। শুধুমাত্র করোনা আক্রান্তদের জন্য ডিজি হেলথের নেতৃত্বে, এটুআই এবং আইসিটি ডিভিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে, স্বাস্থ্য বাতায়ন, সিনেসিস আইটি ও বেসিসের কারিগরি সহযোগিতায় কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার করা হয়েছে। যার মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ, প্রেসক্রিপশন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও দেশের বাইরে তিনটি দেশে প্রবাসীরা এ সেবা পাচ্ছেন। এর মাধ্যমে রোগীদের শুধু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই না বরং এর মাধ্যমে রোগীদের সময়, খরচ, যাতায়াত কমার পাশাপাশি তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমেছে। ’
সিনেসিস হেলথের সিইও ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ আমাদের জন্য কারণ, ইতোমধ্যে বহু মানুষ এ সেবা গ্রহণ করেছে। আমি মনে করি এত অল্প সময়ে অন্য কোনো উপায়ে এত মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পেত না। প্রতিদিনই চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের ফোন করেছেন। রোগীরা চিকিৎসকদের ফোন করেছেন। এ পর্যন্ত দুই লাখের বেশি মানুষ এ সেবা গ্রহণ করেছেন। ’
কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার গত ১৮ জুন থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট তিন লাখ চার হাজার ৪২ জন সেবা দিয়েছে। চিকিৎসাসেবা মূল্যায়নের জন্য সর্বমোট এক লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৯ সেবা গ্রহীতার খোঁজ-খবর নিয়েছে, ফলো আপ পরিচালিত হয়েছে সর্বমোট এক লাখ ৩৩ হাজার ১৯৯ সেবা গ্রহীতার। এছাড়া সেবাগ্রহণের জন্য সর্বমোট ৬৫ হাজার ৩২টি কল এসেছে। কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টারের সেবা নিয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯২ হাজার ৬৬৬ সেবা গ্রহীতা।