শনিবার রাতে স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে ওই ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেক বলেন, “আমাদের একটি স্বাস্থ্য নীতি করেছি, কিন্তু সেটাতে কোনো অ্যাকশন প্ল্যান নাই।
”অনেক ভালো ভালো কথা লেখা আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নাই এবং হবেও না। অ্যাকশন প্ল্যান না থাকায় এটা নীতি হয়নি। পরিকল্পনার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আমাদের আগাতে হবে।”
স্বাস্থ্য খাতে কেবল ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, তার জন্য দক্ষ জনবল তৈরিতে জোর দেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই বিকল্প নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস আমাদের শিখিয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়টাকে আরেকটু বৃহত্তর পরিবেশে দেখার। সেক্ষেত্রে আমাদের সরকারের যে সম্পদের বরাদ্দ, সেটারও পরিবর্তন দরকার।”
গ্রামাঞ্চলে মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারছে মন্তব্য করে তারেক বলেন, কিন্তু শহরে অনেক স্পেশালাইজড হাসপাতাল হলেও হাহাকার আছে।
”কারণ আমি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বেসরকারি খাতের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। এখন লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না। আপনি স্বাস্থ্যনীতিতে ঠিক করেননি, আপনি কতোটা সরকারি আর কতোটা বেসরকারি খাতে দিবেন।”
প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ধারণা সুনির্দিষ্ট করায় জোর দিয়ে ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “আমরা যখন সংস্কারের কথা বলি, তখন সেটা যেন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে। দেখা যায়, আমরা যা বলি না কেন, বলা হবে এটা নিয়ে একটা কাজ আছে।
“স্বাস্থ্যখাতের বাজেট প্রণয়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাতন্ত্রের কোনো ভূমিকা তো আমরা দেখছি না। এজন্য আমাদের বড় ইস্যুতে আলো ফেলতে হবে।”
সম্পদে সীমাবদ্ধতার উপর আটকে না থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এখনই এটা সুনির্দিষ্ট হওয়া দরকার, এই পরিস্থিতিতে কোনটা আমাদের অগ্রাধিকার, কোনটা নয়। যেগুলো অগ্রাধিকারে নেই, সেগুলো আমরা একটু দূরে রাখব আপাতত। মেগা প্রজেক্টের ইস্যুও এখানে আলোচনায় আসতে পারে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জিল্লুর বলেন, “স্বাস্থ্যখাতে ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে থাকলে হবে না। সেটা বাড়াতে হবে এবং কীভাবে বাড়াব, সেটা ঠিক করতে হবে। প্রিভেনটিভ, প্রমোটিভ এবং কিউরেটিভ সবগুলো মিলে বাড়াতে হবে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থ খরচে সমন্বয়হীনতায় অনেক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মন্তব্য করে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর খান বলেন, “একটু অনুসন্ধান করা, আসলে সমস্যাগুলো কোথায় হচ্ছে। খুব কঠিন না কাজ না যে এই তথ্যগুলো আলাদা করে নিয়ে আমরা জানব, আসলে অদক্ষতার উৎসগুলো কী এবং কীভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে এগুলো সমাধান করতে পারি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, “৯৫ থেকে ৯৮ ভাগ ব্যয় যেহেতু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েই করে, সে কারণে আমরা অনেক সময় এটাকেই গুরুত্ব দিই। ১৩টি মন্ত্রণালয়ের কথা যেহেতু বলা হয়েছে, সেহেতু ওই মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গেও আমাদের সমন্বয়ের প্রয়োজন।
”অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিভাগগুলোর মধ্যেও সমন্বয় দরকার।”
এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ, আইইডিসিআরসহ সবগুলো বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের পরামর্শ দেন তিনি।
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম’ আয়োজিত ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার।