স্টাফ রিপোর্টার-নাদিয়া রহমান,ঢাকা
তারিখ -০৫.০৯.২০২০
পানির অপর নাম জীবন- তা আমরা সবাই কমবেশি জানি। পানি ছাড়া একদিনও চলা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।
প্রতিদিন প্রায় সব ধরণের কাজে আমাদের পানি লাগবেই। এছাড়া সারাদিন আমরা যত ধরণের খাবার খাই, তার মধ্যে একমাত্র পানিই ক্যালরি,ফ্যাট,শর্করা ও চিনি মুক্ত। যদিও পানিতে কোনো পুষ্টি নেই তবে এটি জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
শরীরের পানির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে একটু বিশদ ব্যাখ্যাই বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার করবে-
আমাদের রক্তের ৮৩ ভাগ, হাড়ে ২২ ভাগ, মস্তিষ্কে ৭৪ ভাগ, পেশিতে ৭৫ ভাগ পানি থাকে, অর্থাৎ আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে পানি।
স্বাস্থ্যের জন্য পানির গুরুত্ব বলে বোঝানোর নয়। মানুষের শরীর খাদ্য ছাড়া বাঁচতে পারে কয়েক সপ্তাহ, কিন্তু পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না মাত্র কয়েক দিনের বেশি। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য তাই পানি বড়ই প্রয়োজনীয়।
আমাদের জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য এবং জীবাণু ছড়ানো প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার পানিতে হাত ধোয়া অপরিহার্য। তাই নিয়মিত হাত ধোয়া জীবাণু সরানোর জন্য, অসুস্থ না হওয়ার জন্য ও অন্যকে জীবাণু ছড়ানো নিবারণের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়।
‘পরিষ্কার হাত বাঁচায় জীবন’
‘পানি স্বাস্থ্য’ এসব উপজীব্য বিষয় নিয়ে এ বছর মার্চ মাসে বিশ্ব পানি দিবস পালিত হচ্ছে। ‘পানি: অব্যাহত উন্নতি’ এই থিমকে এবার গুরুত্ব দিচ্ছে জাতিসংঘ।
মানব শরীরের গড়ে ৫০-৬৫ শতাংশ হলো পানি। শিশুদের শরীরে সবচেয়ে বেশি পানি নবজাতকদের শরীরের ৭৮ শতাংশ পানি। প্রতিদিন মানুষের পানির দরকার হয় পান করা, রান্না করা ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য। পয়োনিষ্কাশনের জন্যও চাই পানি অনিবার্যভাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ: বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ লোকের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন ৭ দশমিক ৫ লিটার পানি। মৌলিক স্বাস্থ্য চাহিদা ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য চাহিদা ও বিশুদ্ধ খাদ্য পানীয়ের জন্য প্রতিজনে ২০ লিটারের মতো পানি প্রয়োজন হতে পারে।
গত দশকে এ ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি ঘটেছে, ৭৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এই পৃথিবীতে বিশুদ্ধ পানি পানীয় হিসেবে পান না। ২৪৮ কোটি মানুষ সঠিক পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থার আওতায় নেই। পানিকে বিশ্ব প্রকৃতির বড় অংশ বলা অত্যুক্তি হবে না।
পৃথিবীতে ব্যাপক হারে ঘটছে নগরায়ণ। প্রতি সপ্তাহে পায় ১০ লাখ মানুষ ছুটে আসছে শহরে। এই গ্রহে দুজনের মধ্যে একজন বাস করে শহরে।
৯৩ শতাংশ নগরায়ণ ঘটছে নিম্ন আয় ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে, আর নগরায়ণের ৪০ শতাংশ বেড়ে উঠছে বস্তি এলাকায়। শহরে হাজার হাজার কিলোমিটার লম্বা নল বহন করছে পানি, সরবরাহের জন্য। এসব মল চুয়ে পানি বেশির ভাগ পানির হয় অপচয়। অনেক শহরে পয়োনিষ্কাশন নালিই নেই। এগুলো হলো চ্যালেঞ্জ।
শিল্পকারখানায় পানির ব্যবহার অসামান্য। একটি সুইমিং মিল পূর্ণ করতে যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন হয়, তার থেকে বেশি পানি লাগে এই গাড়ি নির্মাণকাজে।
পানি খাদ্যও তো বটে। খাদ্য উৎপন্ন করতেও চাই পানি। এক লিটার পানি প্রয়োজন এক ক্যালরি খাদ্যকে সেচের আওতায় আনতে।
প্রতিদিন পরিবারের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পানি সংগ্রহ নারীদের ওপর চাপ পড়ছে বেশি, দিনের ২৫ শতাংশ ব্যয় হয় পানি সংগ্রহে। অসংখ্য মানুষ বিশুদ্ধ পানির আওতায় নেই।
বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে, সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশনের অভাবে, ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত না ধোয়ার কারণে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে প্রতিবছর পৃথিবীতে মৃত্যু হচ্ছে ৮ লাখ ৪২ হাজার লোকের অর্থাৎ প্রতিদিন ২ হাজার ৩০০ জন লোকের। পৃথিবীর দরিদ্রতম অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির অভাব সবচেয়ে বেশি।
বিশুদ্ধ পানি যাতে অনেক মানুষের কাছে সরবরাহ করা যায়, এ জন্য নানা প্রকল্প পরিকল্পনা করছেন জাতিকুলের জ্ঞানী-গুণীরা।
. পানি বিশুদ্ধ করার নানা উপায় তো আছে।
. ফুটিয়ে পানি পান করা। একটি পাত্রে পানি দিয়ে স্টোভে বসিয়ে ফুটানো। অন্তত আধা ঘণ্টা। বনজঙ্গলে আগুন জ্বালিয়ে পাত্রে পানি নিয়ে ফুটিয়ে পান করা যায়।
. পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বা ফিটকিরি দিয়ে। বিশুদ্ধকরণ বড়ির মধ্যে রয়েছে আয়োডিন ট্যাবলেট। আছে ক্লোরিন ট্যাবলেট।
. পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিন দিয়েও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।
. পিউবিকায়ারযুক্ত পানির বোতলও পাওয়া যায়।
রয়েছে আলট্রাভায়োলেট পিউরিফায়ার। গ্র্যাভিটি ফিড পিউরিফায়ার।
. ঘরোয়া ও গেরস্থালি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা গেলে বিশ্বের অসংখ্য মানুষের স্বাস্থ্যের হবে উন্নতি, কমবে রোগশোক, বাড়বে কর্মোদ্দীপনা মানুষের, বাড়বে উৎপাদন।