বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩১ অপরাহ্ন

সঠিক নিয়মে পানি পান করুন আর সুস্থ থাকুন

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৫৩৭ Time View

স্টাফ রিপোর্টার-নাদিয়া রহমান,ঢাকা

তারিখ -০৬.০৯.২০২০

 

সুস্বাস্থ্যের জন্য পানি খেতে হবে সে কথা সবাই জানেন। আমরা সবাই জানি- পানির অপর নাম জীবন; আবার জীবনের অপর নামও পানি। পুষ্টিবিদেরা এর সঙ্গে ‘বিশুদ্ধ’ শব্দটি যোগ করে বলেন- বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। কথা ঠিক। পানি যদি বিশুদ্ধ না হয়, সেটি শরীরের উপকারের চাইতে ক্ষতিই বেশি করে। দুষিত পানি পান ও ব্যবহার করার কারণে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হন; এমনকি মৃত্যুবরণ করেন!

জীবনের জন্য অক্সিজেন-এর পরেই পানির স্থান। পৃথিবীর মতো প্রত্যেকটি মানুষেরও শরীরের ৭২% হলো পানি। এমনকি হাড়ের এক-চতুর্থাংশ, পেশির তিন-চতুর্থাংশ ও মস্তিষ্কের ৮৫% পানি দিয়ে গঠিত। আমাদের রক্ত ও ফুসফুসের ৮০% পানির তৈরি। সুস্থ ও সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। পানি কিডনির মাধ্যমে আপনার শরীরের সব ক্ষতিকারক উপাদান দূর করে দেয়। তবে পানি পান করার বিশেষ কিছু নিয়ম আছে। অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করে থাকেন, যে কারণে উল্টো নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন!

কেউ যদি শুধুমাত্র নিয়ম মেনে সারাজীবন বিশুদ্ধ পানি পান ও জলবিয়োগ করতে পারেন, তবে তাঁকে কখনোই কোনো রোগ-বালাই স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারবে না। এমনকি কেউ ইতোমধ্যে রোগাক্রান্ত হলেও যেদিন থেকে নিয়ম মানতে শুরু করবেন, ১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি- সেদিন থেকেই রোগের মাত্রা উল্টো কমতে শুরু করবে। বিশেষ করে চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিক, আলসার, উচ্চ-রক্তচাপ, হাই কোলেস্ট্রেরল থাকলে কমে যাবে। হৃৎপিন্ডের সমস্যাও ক্রমশ ভালো হতে শুরু করবে।

আমাদের শরীরের ৭২% যেহেতু পানি দিয়ে তৈরি, সে কারণে পানির উপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলেই মানুষকে আর অযাচিত রোগ-বালাইয়ে ভুগতে হবে না। মানুষের শরীরের প্রত্যেকটি কোষের খাদ্য অক্সিজেন- যা কিনা পানকৃত পানি আর শ্বাসগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগৃহীত অক্সিজেন থেকে আহরিত হয়। আর আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো খাদ্য হিসেবে যে অক্সিজেন গ্রহণ করে, তার পুরোটাই আহরিত হয় পানকৃত পানি থেকে। এবারে বিশুদ্ধ পানি পানের নিয়মগুলো বলে দিচ্ছি, যা সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে হবে তো জেনে নিন অতি সাধারণ কিছু কার্যকর নিয়মগুলো।

• সকালে ঘুম থেকে উঠেই শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া চালু করার জন্য বাসি মুখে কমপক্ষে এক লিটার (তিন-চার গ্লাস) পানি পান করতে হবে। মুখ-গহ্বরে জমে থাকা ক্ষার (alkalinity) পানির সঙ্গে গুলিয়ে পাকস্থলিতে চলে যাবে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতিশয় দরকারি।

• সারাদিনে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুন। যত বেশি পরিমাণে পানি পান করতে পারবেন, কিডনিদ্বয় তত বেশি সক্রিয় থাকবে এবং রক্তকে পরিশোধন করে শরীরের সকল দুষিত পদার্থ বের করে আনবে। রোগজীবাণু শরীরের ভেতরে বেশিক্ষণ অবস্থানের সুযোগ না পেলে রোগ বাসা বাঁধারও সুযোগ পাবে না!

• জলবিয়োগ এড়াতে পানি কম পান করা বোকামি। সম্ভব হলে নিয়মিত ডাবের পানি, আখের রস, লেবুর পানি, সরাসরি ফলের রস, চিনি ছাড়া শরবত পান করবেন।

• প্রত্যেক পূর্ণবয়ষ্ক মানুষের শরীরে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লিটার অথবা ততধিক পানির প্রয়োজন। পানি পানের মাত্রা সঠিক আছে কি-না বোঝার উপায় হলো প্রস্রাবের রঙ খেয়াল করা। প্রস্রাবের রঙ যত গাঢ় হবে, তত বেশি পানির ঘাটতি আছে শরীরে। ফলে অবিলম্বে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এভাবে প্রস্রাবের রঙ যখন পানকৃত পানির মতো প্রায় স্বচ্ছ হবে, তখন বোঝা যাবে পানি পানের মাত্রা সঠিক ছিল।

• শরীরে পানির ঘাটতি শুরু হলে মানুষের ঠোঁটের অংশ শুষ্ক হতে শুরু করে। এ থেকেও পানি পানের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

• প্রতিবার অবশ্যই পরিষ্কার ফুটানো পানি পান করতে হবে। কখনোই ঠান্ডা পানি পান করবেন না। সব সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করবেন। খুব ভালো হয় সব সময় হালকা কুসুম গরম পানি (শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানানসই) পান করতে পারলে।

• গোসলের আগে শরীরের রক্তচাপ কমানোর জন্য এক গ্লাস পানি পান করবেন।

• কখনোই দাঁড়িয়ে পানি পান করবেন না। মহানবী (স.) সব সময় বসে পানি পান করতে বলতেন। সব সময় পানি পান করবেন বসে, দুই হাতে পানির পাত্র ধরে কমপক্ষে তিন শ্বাস তথা ঢোক-এ ধীরে ধীরে। প্রত্যেক ঢোক-এর আগে পর্যাপ্ত বিরতি নিন।

• আয়ুর্বেদিক মতে, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে vata তৈরি হয়, যা বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থলকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং আর্থ্রাইটিস রোগের অন্যতম কারণ।

• যখন কেউ দাঁড়িয়ে পানি পান করেন, তখন পানি সরাসরি পাকস্থলিতে চলে যায়। তারপর খুব দ্রুতই প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এর ফলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

• দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হতে পারে। এই বদ-অভ্যাসটি শরীরের অক্সিজেন সরবরাহকে বাধাগ্রস্থ করে। এর ফলে ফুসফুসেরও ক্ষতি হতে পারে।

• দাঁড়িয়ে পানি পান করলে নার্ভ-এ প্রদাহ বেড়ে যায়। ফলে কোনো কারণ ছাড়াই দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ বেড়ে বদহজমের সমস্যাও হতে পারে!

• দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরে এসিড লেভেলে তারতম্য ঘটে। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পানি পান শরীরে ক্ষরণ হতে থাকা অ্যাসিডকে তরল করতে পারে না। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি এই বদঅভ্যাসের কারণে আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন।

• পানি গলগল করে গলধঃকরণ না করে বরং প্রতি ঢোক পানি মুখে নিয়ে ২০-৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করবেন, যেন মুখের লালা পানির সঙ্গে মিশতে পারে। প্রত্যেক ঢোক-এর মধ্যে ২০-৩০ সেকেন্ড বিরতি নিন।

• শরীরের ওজনের সঙ্গে পানি পানির পরিমাণের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। কারো শরীরের ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয়, তার জন্য প্রত্যেকদিন ৬০ আউন্স পানির প্রয়োজন হবে।

• পানি স্বল্পতার কারণে শরীরের শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায়! বেশি পানি পান করলে শরীর থেকে অতি সহজে বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে যায় এবং দেহের প্রত্যেকটি কোষে পর্যাপ্ত পুষ্টি ঢুকতে পারে।

• প্রত্যেকদিন আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করলে ৮০% ভুক্তভোগীর পিঠ ও গিঁটের ব্যাথা সেরে যায়।

• আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো যে অক্সিজেন গ্রহণ করে, সেগুলো আসে পানকৃত পানি থেকে (নিঃশ্বাস থেকে নয়)। সে কারণে শরীরে মাত্র ২% পানি স্বল্পতা দেখা দিলে সাময়িকভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে।

• পর্যাপ্ত পানি পান করলে মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪৫%, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭৯%, ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০% কমে যায়।

• অনেকেই মনে করেন- চা, কফি ও কোমল পানীয় শরীরে পানির যোগান দেয়! কিন্তু না, সেটি অন্যভাবে ক্রিয়াশীল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত চা কফি পান মানবদেহের জন্য উল্টো ক্ষতির কারণ। কোমল পানীয় নামে কোমল হলেও কিডনির মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে।

• যখনই খাবেন, পাকস্থলির কিছু অংশ যেন খালি থাকে। মহানবী (স.) খাদ্য গ্রহণকালে প্রথমে পাকস্থলির এক-তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা পূর্ণ করে এক-তৃতীয়াংশ শক্ত খাবার এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ খালি রাখতেন।

• হজম ভালো হওয়ার জন্য খাবার খাওয়ার ৪০ মিনিট আগে প্রথমে বিশুদ্ধ পানি পান করুন; তারপর শক্ত খাবার খান।

• ভারী খাবার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে যদি পানি পান করেন, তাহলে বিভিন্ন এনজাইমগুলো সঠিক মাত্রায় খাবারের সঙ্গে মিশতে পারবে না। ফলে হজম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়, যা কিনা সকল রোগের উৎস! খাওয়ার ৪০ মিনিট পরে একটি লেবুর রস হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।

• স্ট্রোক বা হার্ট এটাক এড়াতে ঘুমের কিছুক্ষণ আগে সামান্য পানি পান করবেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102