স্টাফ রিপোর্টার-নাদিয়া রহমান,ঢাকা
তারিখ -০৬.০৯.২০২০
মুখের ভেতরের ঝিল্লি আবরণ বা মিউকাস মেমব্রেন কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মুখে ঘা হতে দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি মারাত্মক কোনো রোগ নয়। এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু বারবার মুখে ঘা হলে এবং তা না সারলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাজে যেতে হবে। ঘায়ের আকার ও প্রকৃতি দেখে অনেক সময় বোঝা যায় এটি ক্যানসার কি না। চিকিৎসার পরও যদি মুখের ঘা দু-তিন সপ্তাহে না সারে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এর সঠিক কারণ বের করা উচিত।
ঢাকার শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দন্ত বিভাগের প্রধান ডা. হুমায়ুন কবির বললেন, সাধারণত অজান্তে মুখ বা জিবে কামড় লাগলে, শক্ত টুথব্রাশ বা সুচালো বাঁকা দাঁতের আঘাতে মুখে ঘা হয়। এ ছাড়া দাঁতের ক্ষয়রোগ এবং মুখের পরিচ্ছন্নতা বজায় না থাকলেই ঘন ঘন মুখে ঘা হয়। আবার নানা ধরনের ভাইরাস বা ছত্রাক সংক্রমণ, ভিটামিনের অভাব, বিভিন্ন ওষুধের প্রতিক্রিয়াতেও ঘা হতে পারে।
কারা বেশি আক্রান্ত হন?
যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ রয়েছে; যাঁদের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা কম এবং দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাঁদের মুখে জীবাণু বিস্তার করে ঘা সৃষ্টির আশঙ্কা বেশি থাকে। লিউকেমিয়া, লাইকেন প্লানাস ইত্যাদি কারণেও মুখে ঘা হতে পারে। তবে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে মাড়ির রোগ বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে।
সবচেয়ে বেশি যে কারণে মুখে ঘা হয়, সেটিকে বলে অ্যাপথাস আলসার। জিব, মাড়ি বা মুখের ভেতরের দিকে অনেকটা ব্রণের মতো দেখতে সাদা ফুসকুড়ি হয়। এটি বারবার হতে থাকে এবং বেশ বেদনাদায়ক।
কেন হয়?
দুশ্চিন্তা, ভিটামিন-স্বল্পতা, অনিদ্রা, মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা, মানসিক অস্থিরতা প্রভৃতি কারণে অ্যাপথাস আলসার বেশি হয়। রক্ত পরীক্ষার পর জেনে নিতে হবে কী কারণে এ ধরনের ঘা হচ্ছে এবং সেভাবে চিকিৎসা দিতে পারলে ঘা তাড়াতাড়ি সেরে যায়। নয়তো অনেক সময় এই ঘা আরও প্রকট হতে পারে।
করণীয়
* প্রচুর পানি পান করুন।
* লবণ পানি দিয়ে কুলি করুন।
* মেডিকেটেড মাউথওয়াশ বা অ্যান্টিসেপটিক জেল ব্যবহার করতে পারেন।
* মাড়িতে প্লাক জমলে তা অবশ্যই স্কেলিং করিয়ে নিতে হবে।
* ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের সঠিক চিকিৎসা বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
* ভিটামিন বি-র স্বল্পতা, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, মুখ অপরিষ্কার, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
* নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।
* ধূমপান, জর্দা দিয়ে পান খাওয়া ত্যাগ করা।
* প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন।
মুখ ও জিবের পরিচ্ছন্নতা
* প্রতিদিন দুবার অন্তত দুই মিনিট করে দাঁত ব্রাশ করবেন।
* দুই থেকে তিন মাস অন্তর অন্তর টুথব্রাশ পরিবর্তন করবেন।
* চিনি, চিনিযুক্ত খাবার¦যেমন মিষ্টি, চকলেট, জুস, কোলাজাতীয় পানি ইত্যাদি বেশি খাওয়া বা পান করা ঠিক নয়। আঠালো চকলেট আরও ক্ষতিকর। বাজারের বোতলজাত জুসে চিনি ছাড়াও বেশি থাকে অ্যাসিড, যা মুখের পিএইচ কমিয়ে দেয়, দাঁতের অ্যানামেলের ক্ষতি করে।
* প্রতিদিন লবণ-পানি দিয়ে কুলি করার অভ্যাস থাকা ভালো।
* ধূমপান বন্ধ করুন। গুল-জর্দা বা তামাক ব্যবহার করবেন না।
* বছরে একবার অন্তত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।