শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

মাইগ্রেনের কারণ, প্রকারভেদ, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী জানেন?

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৫৭৮ Time View

স্টাফ রিপোর্টার: জেবিন লামিয়া,নড়াইল🕧০৫সেপ্টেম্বর ২০২০

মাথা ব্যথা কখনো হয় নি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া ভার। আমাদের সবারই কম বেশি মাথা ব্যথা হয়। মাথা ব্যথা হলেই আমরা ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলি। যা করা মোটেই উচিত নয়। ভেবে নিই মাথা থাকলে মাথা ব্যথা তো হবেই। আপনি যদি মেয়ে হয়ে থাকেন তবে আপনার মাথা ব্যথার প্রধান কারণটি হতে পারে মাইগ্রেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে মেয়ে আর ছেলেদের মাইগ্রেন হওয়ার অনুপাত ৫:১। মাইগ্রেনের ব্যথাকে অনেক সময় আধ কপালি ব্যথাও বলা হয়। আমাদের দেশের পরিবেশ দূষণ, ধূলোবালির কারণে এই সমস্যাটি এখন প্রায়ই দেখা যায় আগের তুলনায়। ভবিষ্যতে এর প্রকোপ আরও বেড়ে যাবে বলে অনেকে আশংকা করছেন। তাই এখন থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মাইগ্রেনের কারণ, প্রকারভেদ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

মাইগ্রেনের কারণ, প্রকারভেদ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

মাইগ্রেন কি?

মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথা ব্যথা। মাইগ্রেন শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ “হেমিক্রেনিয়া” থেকে এসেছে। হেমি = অর্ধেক, ক্রেনিয়া = মাথার খুলি (করোটি)। এই ব্যথা অর্ধ মাথায় হয় বলে বিখ্যাত। কিন্তু পুরো পাশেও হতে পারে। শুরু হয়ত হলো একপাশ থেকে, তারপর পুরো মাথা জুড়েই ছড়িয়ে যেতে পারে। যাদের মাইগ্রেন হবার প্রবণতা আছে, তাদের শব্দ, আলো, গন্ধ কোন কিছুই সহ্য হয় না। মাথা ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব এবং বমি-ও হতে পারে।

মাইগ্রেনের কারণ

অনেক কারণেই মাইগ্রেন হতে পারে। যেমন-
১) বংশগত বা জেনেটিক।
২) দুশ্চিন্তা/ অস্থিরতা।
৩) জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি।
৪) পরিবেশের প্রভাব।
এই চারটি কারণ মূলত প্রধান। এ ছাড়া আরও কিছু কারণ প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন –

৫) চকোলেট।
৬) পনির।
৭) মদ্যপান।
৮) কোমল পানীয়।
৯) পিরিওডের সময়।
১০) অতিরিক্ত গরম, প্রচণ্ড শীত।
১১) বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে থাকা।
১২) অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ করা।

মাইগ্রেনের প্রকারভেদ

মাইগ্রেনকে কয়েকভাবে ভাগ করা যায়। যেমনঃ ক্লাসিক্যাল, কমন, অপথেলমোপ্লেজিক, ব্যাসিলার আর্টারি, হেমিপ্লেজিক, ফেসিওপ্লেজিক মাইগ্রেন ইত্যাদি। এর মধ্যে ক্লাসিক্যাল এবং কমন এই দুই ধরণের মাইগ্রেন বেশি দেখা যায়।

ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন

– প্রাথমিক পর্যায়ে দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে। এমতাবস্থায় চোখের সামনে আলোর ঝলকানি দেখা যেতে পারে। হাত, পা, মুখের চারপাশে ঝিনঝিনে অনুভূতিসহ শরীরের এক পাশে দুর্বলতা ও অবশভাব হতে পারে। তারপর শুরু হয় মাথাব্যথা, যা মাথার এক পাশ থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে পুরো স্থানেই বিস্তৃত হয়। প্রচণ্ড দপদপে ব্যথা, প্রচুর ঘাম বের হওয়া সহ বমি কিংবা বমি বমি ভাব একেবারে কাহিল করে ফেলে।
– দৃষ্টির সমস্যা ১ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়। ব্রেইন অথবা চোখে অন্য কোন সমস্যার কারণে দৃষ্টির এ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
– কখনো কখনো মাথাব্যথা ছাড়া শুধুমাত্র দৃষ্টির সমস্যা নিয়েও এই রোগটি দেখা দিতে পারে।

কমন মাইগ্রেন

কমন মাইগ্রেন-ই বেশি হয়ে থাকে। এ ধরণের মাথাব্যথা ৪-৭২ ঘণ্টাব্যাপী হয় এবং কমপক্ষে নিচের যে কোনো দুটি লক্ষণ থাকতে পারে –

ক) চিন চিন বা দপ দপ করে ব্যথা।
খ) অর্ধেক মাথায় ব্যথা।
গ) বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া।
ঘ) আলো ভীতি বা শব্দ ভীতি।
ঙ) অতীতে এ ধরনের মাথাব্যথার কমপক্ষে পাঁচবার অভিজ্ঞতা ও কোনো মস্তিস্কের অভ্যন্তরীন রোগ না থাকা।
কমন মাইগ্রেন এ মাথার ২ পাশে কানের উপরে চাপ দিলে এবং মাথার চুল টানলে ভাল লাগে।

অপথেলমোপ্লেজিক মাইগ্রেন

চোখের উপরি ভাগ থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত প্রচণ্ড ব্যথাসহ দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে। এক্ষেত্রে আলো একদম সহ্য হয় না। অন্ধকার ঘরে থাকতেই ভালো লাগে।

ব্যাসিলার আর্টারি মাইগ্রেন

মাথার পেছন থেকে এ ব্যথা শুরু হয় এবং সঙ্গে মাথা ঘোরাভাব থাকতে পারে।

হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন

শরীরে অবশভাব থাকে। ব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এটি সারতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে।

মাইগ্রেন কিভাবে হয়?

আমাদের ব্রেইন এর ধমনী, শিরা, আবরণ, পেশী, সাইনাস এবং চোখ, দাঁত এগুলোতে কিছু ব্যথা গ্রাহক কোষ থাকে। এগুলো উদ্দীপিত হলে ব্যথা অনুভূত হয়। বিজ্ঞানীরা ১টি হরমোনকে এজন্য দায়ী করেন – সেরোটোনিন। মেকানিক্যাল কারণে বহিঃমস্তিস্কের ধমনিগুলোর প্রসারণ ঘটে। সেরোটোনিন এবং মেকানিক্যাল কারণে যখন এই গ্রাহক কোষগুলো উদ্দীপিত হয়, তখন মাথায় ব্যথা হয়।

মাইগ্রেন এর পূর্ববর্তী লক্ষণ

মাথাব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন আগে এই স্টেজ হতে পারে। এই সময় মানসিক ও স্নায়বিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিষন্ন, উল্লসিত, ঝিমুনি, অতি সচেতন, অতি উৎসাহী কিংবা খিটখিটে, শান্ত ধীরগতি ভাব হতে পারে। কারো কারো বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। অনেক সময় এ লক্ষণগুলো চোখ এড়িয়ে যায়। এগুলো শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরুর করা জরুরী।

মাইগ্রেন এর পরবর্তী লক্ষণ

ব্যথা শেষ হওয়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। যেন প্রচণ্ড কোন শারীরিক ধকল গেল। মনোযোগহীনতা ও ক্ষুধামন্দা দেখা যায়।

রোগ নির্ণয়

সাধারণত রোগীর দেয়া তথ্য থেকেই রোগ নির্ণয় করা হয়। এ ছাড়া চোখ পরীক্ষা করতে হবে। সাইনাসের জন্য প্রয়োজনীয় এক্স-রে করতে হবে। বারবার এক জায়গায় ব্যথা হলে ব্রেনের সিটি স্ক্যান করাতে হবে। কেননা শুধুমাত্র মাইগ্রেন না হয়ে অন্য কোন রোগ থাকলে তা নির্ণয় করতে হবে। প্রতিটা রোগের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা।

মাইগ্রেন সমস্যাতে করণীয়

১) যাদের এ রোগ আছে, তাদের অন্তত দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক।
২) কফি, চকোলেট,পনির, কোমল পানীয়, মদ এড়িয়ে চলতে হবে।
৩) দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা যাবে না।
৪) জন্মবিরতিকরণ পিল না ব্যবহার করে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
৫) পরিশ্রম, মানসিক চাপ, দীর্ঘ ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে।
৬) অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
৭) কড়া রোদ বা তীব্র ঠাণ্ডা পরিহার করতে হবে।
৮) উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।

৯) বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।

মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধকারী খাবার

১) ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারঃ তিল, আটা, বিট
২) ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত, আলু, বার্লি
৩) সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি
৪) হারবাল টি, যেমন গ্রিন টি
৫) আদার রস বা টুকরো
৬) খেজুর ও ডুমুর জাতীয় ফল

যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

১) দুধ ও দুধজাত খাবার
২) আপেল, কলা ও চিনাবাদাম, টমেটো
৩) পেঁয়াজ

চিকিৎসা

চিকিৎসা মানেই শুধু ওষুধ নয়। নিয়ম মেনে চলা, সচেতন হওয়াও এর মধ্যে পড়ে। মাথাব্যথা শুরু হলে প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ওষুধ, বমির ভাব কমানোর জন্য মেটোক্লোরপ্রোমাইড, ডমপেরিডন-জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। বারবার মাইগ্রেনের আক্রমণ কমানোর জন্য পিজোটিফেন, অ্যামিট্রিপটাইলিন, বিটাব্লকার জাতীয় ওষুধ কার্যকর। নতুন এক গবেষণায় ভিটামিন বি এর কার্যকারীতা সম্পর্কে জানা গেছে।
সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়। সেক্ষেত্রে আগে রোগ নির্ণয় করা জরুরী। এজন্য আপনার মাঝে লক্ষণ গুলো থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সঠিক ভাবে মাইগ্রেন এর চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং সুস্থ থাকুন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102