বিডিনার্সিং২৪ঃ- বাংলাদেশের ডাক্তার নার্স, ডেন্টিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রোফিস্ট, স্পিস থেরাপিস্ট, অকোপেশনাল থেরাপিস্ট, ভেটেনারি সায়েটিস্টসহ স্বাস্থ্যসেবায় বিভিন্নভাবে নিয়োজিতদের যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কেবল একটি ইংরেজি কোর্স এবং ডাক্তারদের জন্য প্লাব টেস্ট সম্পন্ন করে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আবেদন করতে পারবেন। তবে আবেদনটি করতে হবে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)’র নিবন্ধিত প্রতিনিধি ফিউচার পারফেক্ট হেলথ নামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
এ ব্যাপারে ফিউচার পারফেক্ট হেলথ এর কোঅর্ডিনেটর (বাংলাদেশ অঞ্চল) যুক্তরাজ্য প্রবাসী গোলাম মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) ইউকের একটি সরকারি সংস্থা এবং এটি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বৃহত্তম চাকরিদাতা সংস্থা। এনএইচএস যুক্তরাজ্যে এর চাকুরে সংখ্যা ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম চাকরিদাতা সংস্থা। এনএইচএস ২০২০/২১ সালের বাজেট হচ্ছে প্রায় ১৪০ বিলিয়ন পাউন্ড বা বাংলাদেশি টাকায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ব্রিটেন ইউরোপ থেকে বেরিয়ে আসার কারণ এবং অন্যান্য কারণে ব্রিটেনে স্বাস্থ্য সেবা খাতে প্রচুর দক্ষ ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্যদের চাহিদা রয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যখাতে মোট ৮৪ হাজার পদে জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। জনবলের নানাবিধ স্বল্পতার কারণে ইউকে সরকার বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহ থেকে স্বাস্থ্য সেবায় বিভিন্ন পদের জন্য বিনাশর্তে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের এসএইচএস‘র তত্ত্বাবধানে ইউকে মিনিস্ট্রি অব হেলথ‘র সহযোগিতায় যুক্তরাজ্যের ফিউচার পারফেক্ট হেলথ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন পদের জন্য যুক্তরাজ্যে চাকরিও ট্রেনিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক উন্নতির (দেশীয় মুদ্রা) জন্য ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম। এ জন্য প্রয়োজন উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)।
তিনি বলেন, ‘ফিউচার পারফেক্ট হেলথ বাংলাদেশের ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য পেশাজীবীদের জন্য যুক্তরাজ্যে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির নিশ্চয়তা দেবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পেশার ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করবে। এতে করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিতদের চাকরির ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি তারা তাদের পরিবারকেও সেখানে নিয়ে যেতে পারবেন। এতে করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।’
‘ফিউচার পারফেক্ট হেলথ’র কো-অর্ডিনেটর গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি হবে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে লাভবান হবে।’
তিনি বলেন, ‘ইউকে নিজস্ব তহবিল থেকে বাংলাদেশে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। এর জন্য বাংলাদেশ সরকারের কোনো অনুদানের প্রয়োজন হবে না। ফিউচার পারফেক্ট হেলখ ইউকে এবং সিইএন-হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক যৌথভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে।’
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য খাতকে উন্নত করার পাশাপাশি সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)‘র কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মী পাশ করে বের হচ্ছে। তাদের সবার কর্মসংস্থান সরকার দিতে পারছে না। অনেকে স্বল্প বেতনে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। যাদের মেধা, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কোনো ট্রেনিং এর ব্যবস্থা নেই বা থাকলেও খুবই অপ্রতুল। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য সেবার বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দক্ষ ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবার সকল পদের ট্রেনিং ও মেধার উন্নয়ন। এ অবস্থা নিরসনের জন্য ব্রিটেনে স্বল্প মেয়াদে চাকরি গ্রহণ ও ট্রেনিং এ অংশগ্রহণ করলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা সহ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, ফিউচার পারফেক্ট হেলথ বাংলাদেশের ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য পেশাজীবীদের জন্য যুক্তরাজ্যে চাকরির নিশ্চয়তাসহ ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করবে। এতে করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের ডাক্তার, নার্স সহ স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিতদের চাকরির ব্যবস্থা হবে। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়বে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন হবে। বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল আয় বৃদ্ধি পাবে রেমিটেন্স এর মাধ্যমে। দেশের অভ্যন্তরে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন ট্রেনিং মাধ্যমে প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে।
সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এন্ড রাইটস এর সাধারণ সম্পাদক সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, এই সুযোগ বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদ স্বরুপ। দীর্ঘদিন আমেরিকায় বাংলাদেশের নার্সদের কর্মক্ষেত্রের সু্যোগ ছিলো না। নার্সরা আমেরিকায় ওয়ার্ক পারমিট পেলে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আর্জন করতে পারবে। তাই সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বাস্তবায়ন করা। তাহলে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন বেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশী নার্সদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।
দেশের তরুন নার্সদের শিক্ষা জীবন থেকেই ভালো পড়াশোনা ও ইংরেজিতে দক্ষতা ও গবেষণার উপর জ্ঞান অর্জনেরও পরামর্শ দেন এই নার্স নেতা।