বিডি নার্সিং২৪ রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৭৪তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বিএনএ সিলেট ওসমানী শাখার সাধারণসম্পাদক জনাব ইসরাইল আলী সাদেক।
আজ সোমবার ইসরাইল আলী সাদেক সাক্ষরিত এক চিঠিতে এ শুভেচ্ছা জানানো হয়। উল্লেখ্য, শেখহাসিনার ৭৪তম জন্মদিনে আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। সাফল্যগাথার এই কর্মময় জীবন ছিল কণ্টকাকীর্ণ। মুক্তিযুদ্ধেরনয় মাস তিনি গৃহবন্দি ছিলেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারা নির্যাতন ভোগ ওগৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টাহয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
এর বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন দেশবাসীর অকুণ্ঠ ভালোবাসা। নির্বাচনে বারবার জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বেরঅন্যতম দীর্ঘকালীন নারী সরকারপ্রধানের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ওসম্মাননা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশকরেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা।রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন তিনি। ১৯৬৫সালে তিনি ম্যাট্রিক এবং ১৯৬৭ সালে বকশীবাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ(বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। কলেজে অধ্যয়নকালেতিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েসেখান থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয়প্রধানেরদায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে গত ৩৮ বছর ধরে নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপসহীন নেতৃত্বেরমাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক–গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিতকরেছেন তিনি। বিশ্বের সমস্যা ও সংকট নিরসনে ভূমিকার পাশাপাশি শোষিত–নিপীড়িত মানুষের অধিকারআদায়ের সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে এখন বিশ্বনেতার মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে।
তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধীগণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীনবিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ।বিগত বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তার নেতৃত্বেঅসাম্প্রদায়িক–গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে প্রথমে ১৪ দলীয় জোট এবং পরে মহাজোট গড়েওঠে। ১৪ দল ও মহাজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীনতত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়কসরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয় শেখ হাসিনাকে। ওই সময় সংসদ ভবন চত্বরেরবিশেষ কারাগারে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এই পর্যন্ত চার মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে ২১বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরেরঐতিহাসিক নির্বাচনে চার–তৃতীয়াংশ আসনে বিশাল বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারিআওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরপর দ্বিতীয় মেয়াদের মহাজোটসরকার গঠিত হয়। সর্বশেষ গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারিটানা তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেয় তার নেতৃত্বাধীন সরকার।
এছাড়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে অর্থাৎ মোট তিনদফাবিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠারআন্দোলন–সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি সরকার পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয়দিয়েছেন তিনি। ১৯৯৬–২০০১ সালে তার সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টনচুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের টানা ১০বছরে দেশে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য শেষ করা, সংবিধানসংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধনিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু–১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্বঅর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেডএক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, প্রথমবারের মতো এলএনজিটার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলারে উন্নীত, প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১শতাংশ, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়া, ৯৪ ভাগ মানুষকেবিদ্যুৎ–সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশেউন্নীত করা, বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বইপৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়স্থাপন, প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোর–জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণসাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের আধুনিক ডিজিটালবাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীশিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ওদারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি–বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ওসম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে জাতিসংঘেরপরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ‘ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এছাড়াশেখ হাসিনা ভ্যাকসিন হিরো–২০১৯, সাউথ–সাউথ ভিশনারি পুরস্কার–২০১৪, শান্তি বৃক্ষ–২০১৪, জাতিসংঘপুরস্কার–২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার–২০১৩, গোভি পুরস্কার–২০১২, সাউথ–সাউথ পুরস্কার– ২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার–২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার–২০০০, সিইআরইএস মেডেল–১৯৯৯, গান্ধীপুরস্কার–১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার–১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট–বোয়েগনি শান্তিপুরস্কার–১৯৯৮ প্রভৃতি পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।