স্টাফ রিপোর্টার: জেবিন লামিয়া, নড়াইল,
৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
পেপ্টিক আলসার ডিজিজ হলো এসিড পেপ্টিক জুসের কারনে পাকস্থলী ও ডিওডেনামে ক্ষত বা ঘা হয়ে উপরের পেটে ব্যাথা হওয়া। গ্রামের রোগীরা কেউ কেউ বলে কলিজার গোড়ে ব্যাথা। কেউ কেউ বলে নাইয়ের গোড়ে (নাভির গোড়ে) ব্যাথা।
লক্ষণ :
উপরের পেটে চিন চিন করে ব্যাথা করে। খালিপেটে বেশী ব্যাথা হয়। নাভির কাছে বেশী ব্যাথা হয়। বমি বমি ভাব হয়। কারো কারো বমি হয়। বুক জ্বলে। কালো পায়খানা হতে পারে। শরীরের ওজন কমে যেতে পারে।
পেপ্টিক আলসার একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। কয়েকমাস ভোগার পর কিছুদিন ভাল থাকে। রোগীরা নানা রকম ঔষধ খায় পেট ব্যাথা হলে। এক সময় ঔষধ ছাড়াই ভাল হয়ে যেতে পারে। সেই সময় যে ঔষধটি সেবন করা হচ্ছিল রোগী মনে করে সেই ঔষধের জন্যই তার রোগ ভালো হয়ে গেছে। এমনও মন্তব্য করে ফেলে “কত ডাক্তর গুইল্লা খাইলাম আমার পেট বেদনা ভালা অইল না, সামান্য কয় টেহা দামের ঔষধেই আমার বেদনা ভালা অইয়া গেলো!”
কারণ :
বিভিন্ন কারণে পেপ্টিক আলসার হতে পারে। হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক কুন্ডলী আকৃতির এক প্রকারের ব্যাকটেরিয়ার কারণে এই আলসার শুরু হয়ে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়াটি পাকস্থলীর অম্লীয় পরিবেশে বিস্তার লাভ করে। এস্পিরিন ও অন্যান্য NSAID জাতীয় ঔষধও অনেক সময় আলসারের সূচনা করে। অধিকাংশ ক্ষত ডিওডেনাম (ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ)-এ হয়ে থাকে।
জটিলতা :
ডিওডেনাম অথবা পাকস্থলীতে ঘা হলে কোন কোন সময় ঘা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। এই রক্ত বমির সাথে বের হতে পারে, যাকে বলা হয় হিমাটেমেসিস। এই রক্ত ক্ষুদ্রান্ত্র দিয়ে নিচের দিকে যাওয়ার সময় হজম হয়ে কালো রং ধারন করে। পায়খানার সাথে মিশে পায়খানা লালির মতো কালো রং হয়, যাকে বলা হয় মেলেনা। ঘা বেশী বড় হয়ে পাকস্থলী অথবা ডিওডেনাম ছিদ্র হয়ে যেতে পারে, যাকে বলে পারফোরেশন। এই ছিদ্র দিয়ে পাকস্থলীর এসিড জুস, গ্যাস ও খাদ্য লিক হয়ে ভুড়ির বাইরে চলে গিয়ে পেট শক্ত হয়ে যায়। রোগী তখন নড়াচড়া না করে সোজা চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে। ঘা শুখানোর সময় জায়গাটা শক্ত হয়ে যায়। বারবার ঘা হওয়া ও শুখানোর কারনে পাকস্থলীর শেষের অংশ সরু হয়ে যায়, যাকে বলা হয় পাইলোরিক স্টেনোসিস। ফলে খাদ্যদ্রব্য সহজে পাকস্থলী থেকে ডিউডেনামে প্রবেশ করতে পারে না। তাই পেট ফিকে থাকে। পঁচা ঢেঁকুর আসে। বমি হয়।
করণীয় :
পেপ্টিক আলচার হয়েছে সন্দেহ হলে চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে। পারলে পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে। চিকিৎসক সাধারণত এন্ডোস্কোপি নামে একটা পরীক্ষা দেন। গলা দিয়ে একটা নরম নল ঢুকিয়ে ডাক্তার সাহেব পেটের ভিতরে ক্ষতস্থান দেখেন। তারপর ঔষধ লিখে দেন। মেলেনা আছে কিনা জানার জন্য পায়খানার ওকাল্ট ব্লাড টেস্ট (ওবিটি) পরীক্ষা করান। পারফোরেশন সন্দেহ হলে দাড়া করিয়ে পেটের এক্সরে করান। পেটের উপরের পর্দার নিচে গ্যাস দেখা গেলে মনে করা হয় পারফোরেশন হয়ে গেছে। পারফোরেশন হলে সার্জারি বিশেষজ্ঞগণ অপারেশন করে ছিদ্র বন্ধ করে দেন। পাইলোরিক স্টেনোসিস দেখার জন্য বেরিয়াম মিল এক্সরে করা হয়। সার্জারি বিশেষজ্ঞগণ গ্যাস্ট্রোজেজুনোস্টমি নামের অপারেশন করে পাকস্থলী ও জেজুনামের সাথে লাইন করে দেন। ফলে খাদ্য সরাসরি পাকস্থলি থেকে জেজুনামে চলে যায়।
আজকাল পেপ্টিক আলসারের ঔষধ সহজলভ্য হওয়াতে এবং সাধারনের কাছে পরিচিত হওয়াতে রোগী নিজে নিজেই ঔষধ কিনে খায়। ফলে পেপ্টিক আলসারের জটিলতা কম হয়।