সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন

দুধের উপকারিতা ও কিছু সাবধানতা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৫৫৪ Time View

স্টাফ রিপোর্টার-নাদিয়া রহমান,ঢাকা

তারিখ-০৬.০৯.২০২০

 

দুধ মহান আল্লাহর বড় একটি নেয়ামত। এ নেয়ামতের কথা পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। তার উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।’ (সুরা নাহল : ৬৬)।
প্রিয় নবী (সা.) দুধ খুব পছন্দ করতেন। মেরাজের রাতে নবী (সা.) এর সামনে জিবরাইল (আ.) দুধ আর মধু পেশ করে যে কোনো একটি গ্রহণের কথা বলেন। নবী (সা.) দুধ গ্রহণ করে পান করেন।

দুধের উপকারিতা:
১। দুধ ক্যালসিয়ামের সব চাইতে ভালো উৎস। ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি এর সাহায্যে আমাদের হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে হাড় ও দাঁতের গড়ন দৃঢ় করে এবং দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। বাচ্চাদের ছোটকাল থেকেই দুধ পানের অভ্যাস করানো উচিৎ। এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই অভ্যাসটি অপরিবর্তিত থাকলে দেহে বার্ধক্যও আসবে দেরিতে।
২। কর্মব্যস্ততার পর ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস গরম দুধ খুবই উপকারী। গরম দুধ ক্লান্ত পেশি সতেজ করতে সাহায্য করে। এছাড়া, দুধ খেলে শরীরে মেলটনিন ও ট্রাইপটোফ্যান হরমোন নিঃসৃত হয়, এই হরমোনগুলো ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে।
৩। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মাংশপেশির গঠনে অনেক বেশি সহায়তা করে। দুধ মাংশপেশির আড়ষ্টতা দূর করতে সক্ষম।
৪।। দুধে রয়েছে পটাশিয়াম যা হৃদপিণ্ডের পেশির সুস্থতা বজায় রাখে। তাছাড়া এর খনিজ উপাদান হৃদপিণ্ড সতেজ রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণও করতে পারে।
৫। দুধে আছে প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা চুলের জন্য খুব উপকারী।
৬। প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধ পান করলে আজেবাজে খাবারের চাদিহা কমে। এতে করে ওজনও কমে যায়।
৭। দুধে রয়েছে নানা ধরণের ভিটামিন মিলারেস ও নানা পুষ্টিগুণ। প্রতিদিন দুধ পান করলে ত্বকে এর বেশ ভালো প্রভাব পড়ে। ত্বক হয় নরম, কোমল ও মসৃণ।
৮। দুধের অন্য একটি বড় গুণ হচ্ছে এটি মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। দুধ পানে ঘুমের উদ্রেক হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল হয়ে যায় এবং মানসিক চাপ দূর হয়। সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে শান্তির নিদ্রা চাইলে প্রতিদিন রাতে ১ গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করা উচিৎ।
৮। অনেক ধরণের খাবার আমরা খাই যার ফলে আমাদের অ্যাসিডিটি হয় এবং বুক প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া করে। এর সব চাইতে সহজ এবং সুস্বাদু সমাধান হচ্ছে দুধ পান। দুধ পানে পাকস্থলী ঠাণ্ডা হয় এবং বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর হয়।তবে অপানার যদি হাইপার অ্যাসিডিটি থেকে থাকে তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনার দুধ এড়িয়ে চলাই ভাল।
৯। দুধে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, মিনারেল রয়েছে যা দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি কলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
১০। বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে পর্যাপ্ত দুধ পান মলাশয় ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করে । মলাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ক্যালসিয়াম ও দুধে স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট ‘Conjugated Linoleic Acid (CLA)’ প্রতিরোধমূলক কাজ করে থাকে বলে বিবেচিত হয় । যারা নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে মলাশয়ের ক্যান্সার হবার হার কম ।
১১। নিয়মিত কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
১২। নিয়মিত দুধ খেলে আর্টারিওস্ক্যারোসিস ( arteriosclerosis) –এ আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচা যায়। এ রোগ হলে আমাদের আর্টারিগুলোর দেয়াল পুরু, শক্ত ও অস্থিতিস্থাপক হয়ে যায়। এতে শরীরের রক্তচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
১৩। দুধ খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
১৪। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে রাতে ঘুমনোর আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।

দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা:
১। যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনির পাথরের একটি উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। আর দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। তাই এ ধরনের রোগীর উচিত দুধ কম খাওয়া এবং রাতে একেবারেই দুধ না খাওয়া।
২। যাদের শরীরে ‘ল্যাক্টেজ’ (lactase) নামক এনজাইমের অভাব আছে, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া। ল্যাক্টেজ দুধ হজম করতে আমাদের সাহায্য করে। এটি দুধের উপাদান ল্যাক্টোজ (lactose)–কে ভেঙে দেয়। বস্তুত আমাদের শরীর সরাসরি ল্যাক্টোজ গ্রহণ করতে পারে না। তাই ল্যাক্টেজের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, যাদের শরীরে ল্যাক্টেজের অভাব আছে, তাদের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ শুনতে হবে।
৩। যাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশের আলসার তথা ডিউডেনাল আলসার আছে বা যাদের ‘কোলেসিসটিটিস’ (cholecystitis) তথা গলব্লাডারের সমস্যা আছে তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া। কারণ, দুধ এই দুই ধরনের রোগীর রোগ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪। যাদের পেটে অপারেশান করা হয়েছে, তাদের দুধ খাওয়া ততদিন বারণ, যতদিন না তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠছেন। অর্থাৎ ঘা শুকিয়ে গেলে, তখন দুধ খাওয়া যাবে।
৫। যাদের শরীরে আয়রন বা লোহার অভাব পূরণের জন্য নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন, তাদের উচিত দুধ না খাওয়া। দুধে ক্যালসিয়াম আছে, আছে ফসফেটও। এই পদার্থগুলো আয়রনের সাথে বিক্রিয়া করে আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই যতদিন আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন, ততদিন দুধ খাওয়া বন্ধ থাকুক। যখন আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া বন্ধ করবেন, তখন দুধ চলতে পারে আগের মতোই।
৬। যারা লিড (lead) বা সিসা নিয়ে কাজ করেন, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া। সিসা আসলে এক ধরনের বিষ। অন্যদিকে, দুধে আছে ল্যাক্টোজ। ল্যাক্টোজ আমাদের শরীরে সিসাকে জমে থাকতে সাহায্য করে।ফলে শরীরে সিসার বিষক্রিয়াসহ পেট ব্যাথা , মাথা গরম হওয়া, অনিদ্রা রোগ হতে পারে।
৭। যারা পাকস্থলীর আলসার তথা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী, তাদেরও দুধ খাওয়া উচিত নয়। এ ধরনের রোগী দুধ খেলে পেট ব্যথা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।

৮। যারা প্যানক্রিয়েটিটিস (Pancreatitis) বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ রোগে আক্রান্ত, তাদের উচিত দুধ না-খাওয়া। দুধে স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। এ ধরনের উপাদান হজমের জন্য পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত এনজাইম প্রয়োজন হয়। যদি অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দুধ খান, তবে তার অসুস্থতা বেড়ে যাবে।
৯। এলার্জি থাকলে, দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। কারণ, এলার্জির রোগীদের দুধ খেতে নিষেধ করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। দুধ আপনার এলার্জি বাড়িয়ে দিতে পারে। এলার্জির রোগী দুধ খেলে তার পেট ব্যথা ও ডায়রিয়াও হতে পারে। তা ছাড়া, অন্ত্র ফুটো হয়ে রক্তপাতও হতে পারে।

গরুর দুধে হজমে সমস্যা, পেটের গণ্ডগোল কিংবা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত লোকের কয়েকটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প যা দুধের মতোই পান করা বা রান্নায় ব্যবহার করা যায়:
১। সয়া দুধ।
গরুর দুধের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিকল্প হলো সয়া দুধ। সয়াবিনের নির্যাস থেকে এ দুধ তৈরি হয়। এটি চিনি মিশিয়ে মিষ্টি করে কিংবা চিনি ছাড়াও খাওয়া যায়। এ ছাড়া বাজারে এটি চকলেট ও ভ্যানিলা স্বাদেও পাওয়া যায়।
২। রাইস দুধ।
চালে খুব কম মানুষেরই অ্যালার্জি বা অনুরূপ সমস্যা হয়। আর এ কারণে সেদ্ধ চালের গুঁড়া থেকে তৈরি এ দুধ অনেকেই পছন্দ করে। গরুর দুধের সঙ্গে তুলনায় এ দুধে রয়েছে উচ্চমাত্রার কার্বহাইড্রেট ও নিম্নমাত্রায় প্রোটিন।
৩। নারিকেল দুধ।
গরুর দুধের সঙ্গে তুলনায় নারিকেল দুধ ঘনত্ব ও রঙের দিক দিয়ে মিল রয়েছে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্যাট। অনেকটা বাদামের মতো স্বাদ থাকায় এটি বেকিংয়ে ব্যবহার করা যায়।
৪। অ্যামন্ড দুধ।
অ্যামন্ড বা কাঠ বাদামের নির্যাস থেকে এ দুধ তৈরি হয়। এতে গরুর দুধের তুলনায় কম কম প্রোটিন থাকলেও স্বাদ ও গন্ধ আকর্ষণীয়। এটি রান্নাতেও ব্যবহার করা যায়।
৫। হেম্প দুধ।
যারা দুধে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত তাঁরা পান করতে পারেন হেম্প দুধ। এটি হেম্প বীজ, মিষ্টি ও পানি মিশ্রণ করে তৈরি হয়। সাধারণ দুধের চেয়ে বেশি সময় এটি সংরক্ষণ করা যায়।

প্রতিদিন খাবার তালিকায় মাত্র এক গ্লাস দুধ আমাদের দেহের যতোটা উপকার করে তা অন্য কোনো খাবার করতে পারে না। এই কারনেই দুধকে বলা হয় সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার অর্থাৎ ‘সুপারফুড’।দুধ খুবই ভালো একটি খাদ্য; অথচ এ খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রেও আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
“পুষ্টি বিষয়ে সচেতন হলে,
মেধাবী জাতি উঠবে গড়ে।”

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102