স্টাফ রিপোর্টারঃমরিয়ম, চাঁদপুর
০৭.০৯.২০২০
কোন ফলে কী সুফল মিলবে, এবার রইল তারই হদিশ।
ত্বকের ব্যাপারে আজকাল সকলেই কমবেশি সচেতন। মুখে ব্রণ, চোখের নীচে কালো দাগ কিংবা গায়ে র্যাশ দেখলেই ভুরুতে ভাঁজ! দাগহীন, মসৃণ ত্বক পেতে কখনও ভরসা বাজারচলতি কসমেটিক্সের উপর, আবার কখনও ফল-টল নিয়ে ত্বকের উপর চলে আনাড়ি পরীক্ষা। মুশকিল হল, কোন ধরনের ত্বকে, কেমন প্রডাক্ট বা প্যাক ব্যবহার করা উচিত, সেটা অনেকসময়ই আমরা বুঝে উঠতে পারি না। বুঝে উঠলেও কেনার সময় নামী কোম্পানির প্রডাক্টটির প্রাইজ় ট্যাগটা হয়ে দাঁড়ায় সমস্যা! তাই অতসব ঝুটঝামেলায় না গিয়ে যদি ঘরোয়া উপায়ে ফল-টল দিয়ে ত্বকের যত্ন করা যায়, মন্দ কী! এতে না আছে সাইড এফেক্টসের ভয়, আর না দাম নিয়ে ভাবনা। উলটে মুক্তি মিলবে ত্বকের বহুরকম সমস্যা থেকে। ফলের ভিটামিন, মিনারেল ত্বকে আনে বাড়তি লাবণ্য।
চুলে চাকচিক্য আনতে ও দৈর্ঘ্য বাড়াতে: চুলে শাইন আনতে কলার বিকল্প নেই। দু’চামচ মধুর সঙ্গে দু’টো কলা চটকে চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। তবে চ্যাটচেটে বলে অনেকেরই চুলে কলা লাগাতে আপত্তি থাকে, তারা একটা পাতিলেবুর রসের সঙ্গে এক গেলাস চায়ের জল মিশিয়ে চুলে লাগাতে পার। শ্যাম্পু করার পর শেষবার ধোয়ার সময় এই মিশ্রণটা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুলে ঔজ্জ্বল্য আসবেই, ‘বোনাস’ হিসেবে পাব বাড়তি বাউন্স। চুল খুব রুক্ষ হলে শ্যাম্পু করার পর এক লিটার জলের সঙ্গে এক চামচ মধু এবং এক চামচ ভিনিগার মিশিয়ে চুল ধোব। অনেকের আবার চুলের গোড়া খুব নরম হয়। ফলে সহজেই চুল উঠে যায় এবং লম্বা হতে চায় না। তারা তিনটে কলার খোসার সঙ্গে একটা ডিম ও দু’ চামচ শিকাকাই মিশিয়ে চুলে লাগাতে পার। প্যাকটি আধঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
খসখসে কনুই ও হাঁটুর সমস্যায়: অনেকের কনুই ও হাঁটু খুব খসখসে হয় ও কালচে ভাব থাকে, তারা এই প্যাকটা ব্যবহার করতে পারে। দু’টো কলার সঙ্গে দু’চামচ চিনি মিশিয়ে ওই অংশে ঘষব। শুধু কনুই বা হাঁটু নয়, অনেকের হাতও খুব শক্ত হয়। তারা দু’টো চটকানো কলার সঙ্গে দু’চামচ ওটমিল এবং পাতিলেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারে। মিনিটকুড়ি মতো প্যাক হাতে লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে ক্লকওয়াইজ গোল করে ঘষে তুলব।
ঘরোয়া উপায়ে ম্যানিকিয়োর: এক চামচ চিনি এবং অর্ধেক পাতিলেবু দিয়েই এই কাজটি সেরে ফ্যালা যায়। চিনি হাতের উপর লাগিয়ে লেবুর রস দিয়ে ভাল করে ঘষতে হবে। চিনিগুলো গলে গেলে জল দিয়ে হাত ধুয়ে নেব।
সানবার্নের ‘ওষুধ’: এক চামচ ক্রিম, এক চামচ চিনি আর একটা চটকানো পেপের তিন ভাগের একভাগ ভাল করে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দাও। মিশ্রণ ঠান্ডা হলে এক চামচ নিয়ে মুখে মাসাজ করতে হবে, যতক্ষণ না চিনির দানাগুলো পুরোপুরি গলে যায়। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। কয়েকদিন এভাবে মাসাজ করলে ত্বকের কালচে ভাব দূর হবে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য: মুখের অতিরিক্ত তেল থেকে দেখা দেয় ব্রণ-অ্যাকনের সমস্যা। মুখের তেলতেলে ভাব কমাতে একটা টম্যাটোর অর্ধেকটা নিয়ে মুখে ভাল করে ঘষব, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিতে হবে। অথবা এক চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে একটা পাতিলেবুর রস ও অর্ধেক টম্যাটো মিশিয়েও মুখে লাগাতে পার। এতেও ত্বকের তৈলাক্তভাব কমে।
ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে: অয়েলি স্কিনে যেমন ব্রণ-অ্যাকনের সমস্যা হয়, তেমনই ত্বক শুষ্ক হলেও সহজেই বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া, শীতকালে গাল ফাটার মতো সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকের আর্দ্রতা ফেরাতে এই প্যাকটি খুব উপকারী। দু’টো চটকানো কলার সঙ্গে একটা ডিম ফেটিয়ে মুখে গলায় লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট রাখার পর প্রথমে দুধ তারপর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলব।
মুখের দাগছোপের সমস্যায়: শুকনো মটরশুঁটি গুঁড়ো করে লেবুর রসের সঙ্গে মেশাতে হবে। এর মধ্যে দিতে হবে অল্পপরিমাণ দুধ এবং সাম্যন্য একটু কর্পূর। এর পর মিশ্রণটা পুরু করে গলায়-মুখে লাগিয়ে মিনিট পনেরো রেখে দিতে হবে। শুকিয়ে এলে দুধ দিয়ে ঘষে তুলে ফেলব। দাগছোপ থেকে মুক্তি পেতে এই ঘরোয়া টোটকাটির জুড়ি নেই।
ব্ল্যাকহেড্স, হোয়াইটহেড্স থেকে মুক্তি পেতে: দু’ চামচ চালের গুঁড়ো, দু’টো চটকানো পেঁপে, এক চামচ ওটমিল ভাল করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে বৃত্তাকারে ঘষে-ঘষে তুলব। নিয়মিত এই প্যাক ব্যবহারে মুখের মরা কোষ, অবাঞ্ছিত ব্ল্যাকহেড্স উঠে যাবে।
স্ক্রাবার হিসেবে: শুষ্ক, দাগছোপে ভরা ত্বকের জন্য বাদামের স্ক্রাব খুব উপকারী। পাঁচটা বাদাম থেঁতো করে এক চামচ ক্রিম আর অর্ধেক পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগাব। পনেরো মিনিট পরে ক্লকওয়াইজ ঘষে তুলব।
ক্যারট যখন ক্লেনজার: একটা থেঁতো করা গাজরের সঙ্গে দু’চামচ নিমপাতা বাটা ও এক চামচ বেসন, গোলাপ জলের সঙ্গে গুলে মুখে, গলায় লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নেব। এতে মুখ ভাল পরিষ্কার তো হয়ই, সেই সঙ্গে ত্বকও থাকে নরম।
ডার্ক সার্কলের জন্য: থেঁতো করা একটা আলুর সঙ্গে লেবুর রস, ফ্রেশ ক্রিম ও এক চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে ঘন একটা প্যাক বানাতে হবে। মিনিটদশেক চোখের নীচে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলব।
দাঁতের সমস্যায়: দাঁতের বিচ্ছিরি হলদে ছোপ দূর করতে একচামচ পাতিলেবুর খোসার গুঁড়োর সঙ্গে দু’চামচ কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে দাঁতে ঘষতে হবে। একটানা করে গেলে দাঁত হবে ঝকঝকে।