নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক মহামারি কোভিড– ১৯ মোকাবেলায় যখন অকুতোভয় সম্মুখযোদ্ধা নার্সগণ প্রাণপণে লড়াকু সৈনিকের মত লড়ে যাচ্ছেন মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে, ঠিক এমনই সংকটময় মুহুর্তে মানব সেবার এই মহান সেবক–সেবিকা নার্স হচ্ছেন চরম লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের শিকার ।
গত ০১/০৯/২০২০ ইং বেলা ২ টায় এমনি জঘন্য ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ কোভিড–১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল– ২ এর ৫০২ নংমহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকেন সেবাদানকারী কোভিড–১৯ আক্রান্ত স্টাফগণ। জানা গেছে, গত ২ দিন আগে ঐ একই ওয়ার্ড থেকে একটি দামী মোবাইল ফোন চুরি হয়।এজন্য ভর্তিকৃত স্টাফগণ একটু সতর্ক অবস্থানেই ছিলেন ।
গত ০১•০৯•২০২০ ইং দুপুর ১ টা ১৫ মিনিট এর দিকে ঐ ওয়ার্ডের পিছনের সংরক্ষিত দরজা দিয়ে বিনা অনুমতি ও নি:শব্দে অনুপ্রবেশ করে ১জন মধ্য বয়স্ক অপরিচিত ব্যক্তি। একটা সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে এরকম অযাচিত পুরুষের অনুপ্রবেশে অপ্রস্তুত কয়েকজন ভর্তিকৃত স্টাফগণ তাকে জিজ্ঞেস করে , কে আপনি? আপনিএ গেট দিয়ে কেন এসেছেন,? এটা মহিলা ওয়ার্ড, এভাবে আসা যায় নাকি? এরকম প্রশ্নের বিপরীতে ঐ ব্যক্তিবেশ দাম্ভিকতার সাথে অশোভন ভাষায় বলে, তো কি হয়ছে, তোরা কি হয়ছিস, আমাকে চিনিস? এরকম বাক–বিতর্ক শুরু করেন।
এমতাবস্থায় ঐ ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মো: জাহিদুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত হন এবং অশোভন ভাষা ব্যবহার করতে নিষেধ করেন এবং তাকে মনে করিয়ে দেন যে, এখানে ভর্তিকৃত সবাই হাসপাতালের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা। ঐ ব্যক্তি (সিভিল পোষাকে) আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বলে, এই তুই কে? আমাকে চিনিস? আমি সেক্রেটারি (তৃতীয়–চতুর্থ শ্রেনী কল্যাণ সমিতি )। কর্তব্যরত নার্স জাহিদ তাকে আবারো বিনয়ের সাথে তাকে ভাষা সংযত হতে বলেন, কিন্তু ঐ ব্যক্তি দেখে নেয়ার কথা বলে স্থান ত্যাগ করে।
কিছুক্ষণ পরেই ১০ থেকে ১২ জনের দু:ষ্কৃতিকারী (চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ) এসে ভর্তিকৃত মহিলা স্টাফগণদের (অধিকাংশ নার্স) অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।জাহিদ কে খুজতে থাকে এবং এরকম পরিস্থিতিতে জাহিদনার্সেস চেইন্জ রুম লক করে ভেতরে অবস্থান নেন। দু:ষ্কৃতিকারীরা কয়েকজন মহিলা স্টাফকে আহত করে দরজা ভেঙে নার্স জাহিদের উপর ভয়াবহ বর্বোরোচিত হামলা চালায় ।এরকম হামলায় বেশ আতংকিত হয়ে পড়েন অসহায় ভর্তিকৃত স্টাফগণ। ফোন কলের মাধ্যমে কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে দু:ষ্কৃতিকারীরা স্থান ত্যাগ করে। ততক্ষণে নার্স জাহিদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
পরে হাসপাতালের পরিচালক জাহিদকে উদ্ধারপূর্বক চিকিৎসার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন এবং সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী প্রতিনিধিদের প্রশাসনিক ভাষা ও কায়দায় বিহিতে আশ্বস্ত করেন।
জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণির ঐ দু:ষ্কৃতিকারীরা নার্স জাহিদের চিকিৎসা প্রক্রিয়ায়ও ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবংবিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে।
পিছনের অনেক ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,ঐ সব চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ইতিপূর্বেও অনেকডাক্তার, নার্স কেও নির্বিকারে নির্যাতন করেছে। একজন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসরকে তার কক্ষে আটকেনির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু এরকম অনেক ঘটনার কোনটাতেই দৃষ্টান্ত মূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারেনিঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবারই একই প্রতিশ্রুতি আর একই আনুষ্ঠানিকতা দেখতে হয়এরকম নির্যাতিতদের।
একটু গভীরের খোজ নিয়ে জানা যায়, এ সব দু:ষ্কৃতিকারী স্বঘোষিত স্টাফ অধিকাংশ বহিরাগত একটা চক্র। এদের কর্তব্যকাজে ওয়ার্ডে পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে রোগীর ভর্তি, বেড,চিকিৎসা, ঔষধ, অপারেশন প্রভৃতিতে লুফে নেয় হাজার হাজার টাকা। তাই এদের নিয়োগ বা বেতন–বোনাসের কোন প্রয়োজনপরে না। জানা যায়, এরা উত্তোরাধিকার সুত্রে (দাদা–দাদি,বাবা–মা,ভাই–বোন–ভাতিজা,নাতি–নাতনী,মামা–খালা) এই চক্রের সাথে লেগে থাকে। বহুল প্রচলিত লোক কথা আছে যে, ঢাকা মেডিকেল তাদের বাপ–দাদারসম্পত্তি ।
যাই হোক এরকম লোমহর্ষক ঘটনা হর হামেশাই হয়। কিন্তু দু:খজনক হলেও মহা সত্য তা হলো প্রশাসনের অসহায়ত্ব। তারা এই আধিপত্য বিস্তারকারী তৃতীয়–চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের কাছে জিম্মির ন্যায় সহাবস্থানকরেন। নার্সিং এর একাধিক সংগঠনের নেতৃত্ববর্গও একই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।তারা বলেন ; যেখানে ডাক্তার, নার্সগণদের অধীনস্থ হয়ে স্বাস্থ্য সেবায় সাহায্য কার্যে নিয়োজিত থেকে কাজ করার কথা এই তৃতীয়–চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের সেখানে তাদের দ্বারাই নির্যাতিত ও লাঞ্ছনার শিকার হন তাদেরই উর্ধ্বতন প্রথম ওদ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাগণদের।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সিং কর্মকর্তাদের উপর হামলার প্রতিবাদে সাধারন নার্সদের পক্ষ থেকে আগামী কাল ০৩/০৯/২০২০ইং জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে দুপুর ১২ টায় প্রতিবাদ ও মানব বন্ধন কর্মসুচি ঘোষনা করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সকল নার্সিং কর্মকর্তাদের মানব বন্ধন কর্মসুচিতে অংশ গ্রহন করে কর্মসুচি সফল করার জন্য উদাত্ত আহবান জানানো হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এন্ড রাইটস। সংগঠনটির মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।