স্টাফ রিপোর্টার : তাহমিনা আক্তার
তারিখ: ০৪.০৯.২০২০ইং
দুধ ও চিনির সঙ্গে ডুমুরের- বাংলাদেশে আগে অনেক ভেষজ উদ্ভিদে পরিপুর্ন ছিল। আর সেগুলোর ছিল নানা রকমের ঔষুধিগুণ। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে গাছগাছালি কাটার ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সেই সব উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ ও এদের ঔষুধি ফুল ও ফল।
এই হারিয়ে যাওয়া ঔষুধি ফলের মধ্যে অন্যতম হল ডুমুর_ফল। মোরাসিয়ে গোত্রভূক্ত ৮৫০টিরও অধিক কাঠজাতীয় গাছের প্রজাতি বিশেষ হল ডুমুর। এ প্রজাতির গাছ, গুল্ম, লতা ইত্যাদি। সম্মিলিত ভাবে ডুমুর গাছ বা ডুমুর নামে পরিচিত।
ডুমুর ফল নরম ও মিষ্টি জাতীয় ফল। ফলের আবরণ ভাগ খুবই পাতলা এবং এর অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। এর ফল শুকনো ও পাকা অবস্থায় ভক্ষণ করা যায়। উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এ প্রজাতির গাছ জন্মে। কখনো কখনো জ্যাম হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।এছাড়াও, স্ন্যাক জাতীয় খাবারেও ডুমুরের প্রয়োগ হয়ে থাকে। শহর-নগর সর্বত্র ডুমুর পাওয়া যায় না। গ্রামগঞ্জে যেখানে-সেখানে ডুমুর গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ডুমুরগাছ কেউ লাগায় না,তবে ডুমুর খুবই উপকারী।
দুই ধরনের ডুমুর দেখা যায়– গোল ডুমুর ও যজ্ঞ ডুমুর।
ডুমুরের পাতা খসখসে হয়। গোল ডুমুরের পাতা লম্বা এবং যজ্ঞ ডুমুরের পাতা গোল।
ডুমুর হাটবাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। গোল ডুমুর ডালনা ছেঁচকি খাওয়া যায়। তবে ডুমুর ফুটতে সময় লাগে। কারণ ডুমুরের বাইরের অংশ কেটে নিয়ে রান্না করা হয়।
ডুমুর কয়েক প্রজাতির হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে সচরাচর যে ডুমুর পাওয়া যায়। তার ফল ছোট এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত। এর আরেক নাম ‘কাকডুমুর’।
এই গাছ অযত্নে-অবহেলায় এখানে সেখানে ব্যাপক সংখ্যায় গজিয়ে ওঠে। গাছ তুলনা মূলক ভাবে ছোট। এটি এশিয়ার অনেক অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়।
পাখিরাই প্রধানত এই ডুমুর খেয়ে থাকে এবং পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে বীজের বিস্তার হয়ে থাকে। অনেক এলাকায় এই ডুমুর দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। এই ডুমুরের পাতা শিরিশ কাগজের মত খসখসে। এর ফল কান্ডের গায়ে থোকায় থোকায় জন্মে।
বিভিন্ন দেশে একে তীন,আঞ্জির ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে যে ডুমুর পাওয়া যায়, তার ফল বড় আকারের; এটি জনপ্রিয় ফল হিসেবে খাওয়া হয়।
বানিজ্যিক ভাবে এর চাষ হয়ে থাকে–
আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত।
ডুমুরের অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানি না- — ১.ডায়াবেটিস রোগে ডুমুর গাছের মূলের রস খুবই উপকারী।
২.উচ্চ_রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে :
ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। নিয়মিত ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস না থাকলেও আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে থাকি। ডায়েটে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হাইপারটেনশনের সমস্যা হতে পারে। তাই ডায়েটে রাখুন ডুমুর ফল। এর পটাশিয়াম হাইপারটেনশন প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
৩.ওজন কমাতে সাহায্য করে :
খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ ডুমুর ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আপনার খাদ্যতালিকায় ডুমুর রাখুন। ডুমুর বিদ্যমান পেকটিন রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৪.ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :
সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, মেনোপজ পরবর্তী পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে ডুমুর সাহায্য করে। আঁশ সমৃদ্ধ ডুমুর খাদ্যতালিকায় রাখার ফলে ৩৪% মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম দেখা দিয়েছে।
৫.ডায়াবেটিসের সমস্যায় উপকারী :
ডায়াবেটিসে ডুমুর যেমন উপকারী, তেমনি ডুমুরের পাতাও উপকারী। ডায়াবেটিসে অনেক সময় রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, নিয়মিত ডুমুর খেলে ইনসুলিন গ্রহণের পরিমাণ কম করতে সাহায্য করে।
হাড় বৃদ্ধিতে সহায়ক :
ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে।
৬.ক্যালসিয়াম রয়েছে। অতিরিক্ত হাই-সল্ট ডায়েট মেনে চললে ইউরিনের মধ্য দিয়ে অনেক ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায়। এই ক্যালসিয়াম লস প্রতিরোধ করতে ডুমুরের পটাশিয়াম সাহায্য করে। এভাবে ডুমুর হাড় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া ডুমুর হাড়ের ক্ষয়রোগও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৭.হার্ট ভালো রাখে :
গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, ডুমুর ও ডুমুরের পাতা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হার্ট ভালো থাকে। এছাড়া ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাংগানিজ। যা বয়েসজনিত কারণের নানা অসুখ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকায় রাখুন ডুমুর।
৮.পেটের সমস্যা দূর করে :
ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ। ফলে পেটের সমস্যার জন্য ডুমুর খুব ভালো কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যাও কমাতে সাহায্য করে।
আমরা ডুমুরের এত উপকারিতা সম্পর্কে না জানার কারনে এর সঠিক ব্যাবহার কখনো করিনি। তাই সবার উচিৎ ডুমুরের এই উপকারিতা গুলোকে কাজে লাগানো…..