স্টাফ রিপোর্টার:সৈকত চন্দ্র দাস,ঢাকা তারিখ-৩১-৮-২০২০
মেয়ের প্রেমিক ও তার সহযোগীদের দিকে ঠিকাদারের ছোড়া গুলিতে আহত হওয়ার তিনদিন পর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্রী লামিয়ার। সোমবার (৩১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে এ অস্ত্রোপচার করা হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও অর্থপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মেহেদী নেওয়াজের নেতৃত্বে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের একটি দল লামিয়ার অস্ত্রোপচার করেন।
ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, এটি একটি জটিল অস্ত্রোপচার। প্রায় তিনঘণ্টা ব্যয় হয়েছে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করতে। তবে তারা সফল হয়েছেন।
এর আগে রোববার (৩০ আগস্ট) লামিয়ার থ্রি-ডি সিটি স্ক্যান এবং হাই আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন।
লামিয়ার নানা হাবিবুর রহমান বলেন, গত শুক্রবার (২৮ আগস্ট) গুলি লাগার পর থেকে এ তিনদিন ব্যথা ও যন্ত্রণায় ছটফট করছিল লামিয়া। অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। এখন মেয়েটা ভালো হয়ে যাবে।
লামিয়া মহানগরীর আরাফাত জামে মসজিদ এলাকার জামাল হোসেনের মেয়ে। সে ইকবালনগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর বাড়ি গিয়েছিল তার মেয়ের প্রেমিক ও প্রেমিকের বন্ধুরা। তাদের পরিচয় পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দেন ঠিকাদার। পরিস্থিতি খারাপ বুঝে বাড়ির লোকেরা তাদের বের হয়ে যেতে বলেন। তারা বের হতে না হতেই পিস্তল হাতে বেরিয়ে পড়েন ঠিকাদার। পরে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির স্কুলপড়ুয়া লামিয়া কৌতুহলবশত ঠিকাদারের বাড়ির সামনে আসে। এ সময় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে একটি গুলি লাগে লামিয়ার বাম পায়ে।
তবে নিজেকে বাঁচাতে ও ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ঠিকাদার মেয়ের প্রেমিক ও প্রেমিকের বন্ধুদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।
ঠিকাদার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদের পাশের বাবু খান রোডের সংস্কারের কাজ পান ঠিকাদার ইউসুফ আলী। কিছু দুষ্কৃতকারী এ কাজটির জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। দুষ্কৃতকারীরা কাজটা কিনতে চায়। তারা চাঁদা নিতে এলে তিনি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন।
অভিযুক্ত ঠিকাদার ইউসুফ আলী জানান, ঠিকাদারি একটি কাজ নিয়ে চার যুবক তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার এক পর্যায়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি পিস্তল নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এ সময় পিস্তলে তিন রাউন্ড গুলি ছিল। তিনি দুই রাউন্ড গুলি করেন। ওই চার যুবকও দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করেছিলো। তাদের গুলি লামিয়ার পায়ে বিদ্ধ হয়েছে।
তবে যুবকদের স্বজনদের দাবি, ঠিকাদারের দায়ের করা মামলা ও এজাহারে যা তিনি উল্লেখ করেছেন তার সব তথ্যই মিথ্যা।
তারা জানিয়েছেন, ঠিকাদার ইউসুফ আলীর মেয়ে রুকাইয়া বানরগাতির সোহরাওয়ার্দী কলেজে পড়েন। রুকাইয়ার সঙ্গে শাহিদ নামে একটি ছেলের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঠিকাদার তার পছন্দের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মেয়ের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। কয়েকদিন মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে প্রেমিক শাহেদ তার তিন বন্ধু মেহেদি, ইসমাইল ও সাইফুলকে নিয়ে যান ইউসুফ আলীর বাড়িতে। প্রেমিকা রুকাইয়ার বাবা ঠিকাদার ইউসুফকে তারা র্দীঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের কথা খুলে বলেন।
এমন সময় ইউসুফ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে তাদের গালিগালাজ শুরু করেন। তখন সেখানে উপস্থিত রুকাইয়ার মামা তাদের বের হয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তারা বের হয়ে দরজা পর্যন্ত আসার পরে ইউসুফ পিস্তল নিয়ে বের হয়ে গুলি ছোড়েন।