শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

কীভাবে আলসেমি ঝেড়ে ফেলা যায়? জেনে নিন

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৩৯০ Time View

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ রুবেল হোসাইন, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

করি করি মনে করি, করতে গেলে আর পারি না। অনেকে নিজের সঙ্গেই এই বাক্যের মিল খুঁজে পাবেন। আর শরীরচর্চার ক্ষেত্রে তো কথা পুরোপুরি সত্য। অধিকাংশ মানুষই এমনটা করে থাকেন। নিজেকে ‘ফিট’ দেখাতে সবারই ইচ্ছা করে। তবে তার জন্য সময় বের করে যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা করার মতো সময়টা আর হয়ে ওঠে না। ‘কাল থেকে ঠিক শুরু করব।’ মনে মনে এই বাক্য আওড়াই আমরা। তবে সেই কাল আর আসে না। এদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শরীরে মেদ জমতে থাকে। বাসা বাঁধে নানা অসুখ।

ইংরেজিতে ‘টুমরো নেভার কামস!’ বলে একটা বাক্য প্রচলিত। শরীরচর্চায় এই কথার কোনো স্থান নেই। যোগাসন বা শরীরচর্চায় আজ থেকে বা এখন থেকে কথাটায় জোর দেওয়া উচিত। আবার অনেকে প্রবল আগ্রহ নিয়ে শুরু করলেও কয়েক দিন পরই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এটা আসলে অল্প কজনের সমস্যা নয়, বেশির ভাগ মানুষই এটা করে। শারীরিক কসরতের সঙ্গে একটা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে এখানে বলতে চাই।

বর্তমানে কোভিড–১৯ মহামারিতে আমরা সবাই অনুধাবন করছি যে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব কতটুকু। যাঁদের ইমিউনিটি পাওয়ার (রোগ প্রতিরোধক্ষমতা) কম, তাঁরাই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। এখন জানতে হবে এই ইমিউনিটি কী বা কারা এর জন্য কাজ করে এবং কীভাবে এই শক্তি বাড়ানো যায়? আমাদের মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের আঙুলের নখ পর্যন্ত সবই কোষ দিয়ে গঠিত। পুরো শরীর কোষ দিয়ে তৈরি হলেও সব কোষ কিন্তু প্রতিরোধের জন্য কাজ করে না। রোগ প্রতিরোধক্ষমতার জন্য কাজ করে শুধু রক্তকণিকা এবং তা–ও শুধু শ্বেতরক্তকণিকা। এই শ্বেতরক্তকণিকার সবচেয়ে ভালো কাজ করার জন্য দুটি অবস্থা থাকা জরুরি। (১) নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং (২) সুস্থ ও ফুরফুরে মানসিক অবস্থা।

তাহলে বুঝতেই পারছেন ব্যায়ামের গুরুত্ব কতখানি। নিয়মিত ব্যায়ামে মানসিক অবস্থাও ফুরফুরে ও চাপমুক্ত থাকে। একজন যোগ প্রশিক্ষক হিসেবে যোগসূত্রপ্রণেতা ঋষি পতঞ্জলীর কথা বলতেই হয়। ঋষি পতঞ্জলী যোগশিক্ষার জন্য ১৯৬টি সূত্র দিয়েছেন, যার মধ্যে মনের ওপরই ১৯৩টি। বুঝতেই পারছেন তাহলে মনের গুরুত্ব কতখানি। প্রকৃতপক্ষে আমরা ব্যায়ামসহ অন্যান্য কাজ যে জমিয়ে রাখি, তার প্রধান কারণ দৈহিক দুর্বলতা নয়। এটা মানসিক দুর্বলতা বা আলস্য।

যেভাবে কাটাবেন আলস্য
গাফিলতি বা আলস্য জয় করার কিছু পদ্ধতির কথা বলছি, যেগুলো প্রয়োগ করে আপনি সহজেই সাফল্য পেতে পারেন। আর নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবেন।

অল্প থেকেই হোক শুরু

ব্যায়ামের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই নির্দিষ্ট একটা সময় ঠিক করুন। ধরুন সকাল ৮টা। এবার ঠিক করুন আজ থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা বাজলেই আপনি ব্যায়াম করবেনই। সেটা যেকোনো পরিস্থিতিতেই। হতে পারে সেটা ১-৫ মিনিটের জন্য। হাতের কাছে ব্যায়াম করার জায়গা বা সরঞ্জাম না থাকলেও আপনি যেকোনো অবস্থায় বা স্থানে কমপক্ষে ১০ বার ডিপ ব্রিডিং (শব্দ করে ফুসফুস ভরে শ্বাস নেবেন ও শব্দ করে ছাড়বেন) করবেন। এই নিয়মানুবর্তিতাই আপনাকে শুধু ব্যায়াম নয়, অন্যান্য দিক থেকেও সফলতা এনে দেবে।

ভাবনা

প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে মাত্র ২ মিনিটের জন্য আপনি ব্যায়াম বা ইয়োগা করছেন। এরপর শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছেন, এটা কল্পনা করবেন। আপনি আগামী দিন কী কী ব্যায়াম বা ইয়োগা করবেন, চোখ বন্ধ করে পুরো সেই দৃশ্যটা কল্পনা করবেন। এ পদ্ধতি আপনাকে যে কতটা আনন্দ আর সাফল্য এনে দেবে, তা আপনি ১৫-৩০ দিন অনুশীলন করলেই বুঝবেন।

শক্তপোক্ত মনোভাব চাই
খেয়াল করে দেখবেন, সাধারণত আমরা তিন ধরনের মনস্থির করে থাকি। যে বিষয়গুলো শক্ত মনোভাব দিয়ে জয় করা যায়। তিন ধরনের মনস্থিরের মধ্যে আছে—

১. দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা অনিশ্চয়তা

এ ক্ষেত্রে আমরা কী করব আর কী করব না, এটা চিন্তা করতে করতেই সময় পার করে দিই। যেমন আমরা জানি ধূমপান করা খারাপ, অনেকেই ছাড়ব ছাড়ব করেন, কিন্তু কখনোই ছাড়া হয় না। এ ধরনের চরিত্র খুবই দুর্বলতার প্রতীক। তাই শরীরচর্চার ক্ষেত্রে আপনাকে মনে করতে হবে আমি এটা পারবই। এখানে কোনো দ্বিধা থাকবে না।

২. দুর্বল মনস্থিরতা

অনেকে আছে কোন একটা কিছু করার জন্য উৎসাহ নিয়ে মনস্থির করে শুরু করেন, কিন্তু কিছুদিন পর আবার পুরোনো অভ্যাসে ফিরে আসেন। যোগাসনের ক্ষেত্রে মনে হতে পারে ধৈর্য থাকবে তো! এমন প্রশ্ন মনে আনা যাবে না। কারণ, এটা কোনো কঠিন কাজ নয়, শুধুই অভ্যাসের ব্যাপার। তবে আপনি যদি হাল ছেড়ে দিয়ে আবার আলস্যে প্রবেশ করেন, তাহলে হবে না। এ ধরনের কাজ আমাদের মানসিকভাবে ধীরে ধীরে দুর্বল করে আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দেয়।

৩. লক্ষ্য হোক অটুট

এ ক্ষেত্রে একজন যেটা মনস্থির করে, সেটা যেকোনো মূল্যে করে ছাড়ে। এ ধরনের মানুষের ব্যক্তিত্ব চমৎকার ও খুব আত্মবিশ্বাসী। এ সংখ্যাটা খুব কম। শুধু যোগের ক্ষেত্রে নয়, অন্য যেকোনো বিষয়েই এ ধরনের আত্মবিশ্বাস কাজে লাগে। নিজের ক্যারিয়ারেও এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। ফলে আপনার সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য এ মনোবল ধরে রাখুন।

আমার বিষয়গুলো আমি লিখলাম। এবার বল আপনার ঘরে। সিদ্ধান্ত আপনার হাতে, আপনি কোন পথে হাঁটবেন ঠিক করুন।

লেখক: যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102