👤 স্টাফ রিপোর্টারঃ তিলক বালা,ঢাকা
🕛 ৩১-০৮-২০২০
চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের যে সুযোগ সরকার দিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এ বি এম আবদুল্লাহ। তবে আরও যেসব দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারে চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে তাদেরও ট্রায়ালের সুযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। এতে বাংলাদেশ সহজে টিকা পাবে এবং কোনটা বেশি কার্যকরী সেটা যাচাই করা সহজ হবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট এই চিকিৎসক।
রবিবার রাতে বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের একটি টক শোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘২৪ ঘণ্টা’ নামের অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মীর আহসান।দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘করোনার ঝুঁকি যেমন কমেনি তেমনি খুব একটা বাড়েওনি। এখনো ১৮ পার্সেন্টের মতো আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন ৩০-৪০ জন করে মারা যাচ্ছে। তবে এখন যারা মারা যাচ্ছে তারা অনেক আগে আক্রান্ত। এখন যে সংক্রমণ সেটার সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাটি একই রকম নয়। তবে যতগুলো তথ্য আমি কালেক্ট করেছি, তারা অনেকেই কিন্তু বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। কারও ডায়বেটিস, কারও প্রেসার, কারও কিডনি রোগ, লিভারের রোগ, স্ট্রোক, হার্টের রোগ, কিছু আছেন যারা ক্যানসারে ভুগছিলেন। এমনিতেই তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি।’
মৃত্যুর সংখ্যা না কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আরেকটি কারণ যেটা আমি মনে করছি, আক্রান্ত যারা হাসপাতালে যেতে চান না। ঘরে বসে চিকিৎসা নিতে চান। আমি বারবার বলছি ঘরে বসে চিকিৎসা নিতে পারেন, ৮০ ভাগ রোগী ভালোও হয়ে যায়, কিন্তু অন্য কোনো সমস্যা হলে, অক্সিজেন কমে গেলে, শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত হাসপাতালে চলে আসবেন। ঘরে থাকবেন না। কিন্তু কেউ কেউ এই অবস্থায়ও দেখছি বসে থাকেন। এতে হঠাৎ করে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাতেও বেশ কিছু লোক মারা যাচ্ছে। ৬০ এর উপরের বয়সীরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এর কম বয়সীও অনেকে মারা যাচ্ছেন।’
মৃত্যুর সংখ্যা কমানো নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ দেখছেন কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। অন্তত ডেড অ্যানালাইসেস করা দরকার। কেন মারা যাচ্ছে, কোন বয়সে, অন্য কোনো রোগ আছে কি না সেটা দেখতে হবে।’
ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যে চেষ্টা করছে না তা নয়, আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি। হাসপাতালে আমরাও রোগীদের ভালো ট্রিটমেন্ট করার চেষ্টা করছি। বাস্তবতা হলো, এর তো পেসিফিক চিকিৎসা নেই। আমরা সাপোর্টিং চিকিৎসা দিচ্ছি। কিছু কিছু রোগী আমি দেখেছি, বাসায় থাকেন, যখন বেশি সিরিয়াস হয়ে যায় তখন হাসপাতালে আসেন। সেটা খুব ক্ষতিকর। এতে অনেকে ফিরে আসেন না।’
আক্রান্ত রোগীরা কেন হাসপাতালে আসছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জটিল ও বাস্তব প্রশ্ন। জনগণ যায় না কারণ ঘরে বসে তারা চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। খাওয়া-দাওয়া ভালো পাওয়া যায়, আত্মীয়-স্বজনের কাছে থাকা যায়। তারা তো জেনেও গেছে খুব যে পেসিফিক চিকিৎসা আমরা দিই তা তো না। সাপোর্টিং বিভিন্ন চিকিৎসা দিই।’
‘আরেকটি কারণ স্বীকার করতেই হবে, জনগণের মধ্যে কিছুটা আস্থাহীনতার ভাব তৈরি হয়ে গেছে। মানুষ মনে করে রিপোর্ট না করে পজেটিভ-নেগেটিভ দেয়, এটাও একটা কারণ। আর মনে করে হাসপাতালে গিয়েই আর কী করার আছে, চিকিৎসা তো একই রকম।’
ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘শুরুতে হাসপাতালগুলোতে কিছুটা অব্যবস্থা ছিল এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। রোগীরা কমপ্লেইন করত ডাক্তার আসে না, নার্স আসে না, দূর থেকে দেখে। খাওয়া ঠিকমতো দেয় না। তখন সেটা ছিল। কিন্তু আগে থেকে এখন ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। সরকারি-প্রাইভেট সব হাসপাতালেই।’
দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে। সেটা কিসের ভিত্তিতে? এটি বিজ্ঞানসম্মত নাকি পলিটিক্যাল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণে আছে এটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। টেস্ট বেশি হচ্ছে না এটা সত্য। তবে এটাও সত্য জনগণের একটা বিশাল অংশ টেস্ট থেকে বিমুখ হয়ে গেছে। অনেকে টেস্ট করাতেই চায় না। শুরুতে রোগীরাও যেতো, অন্যরাও যেতো। এতে লম্বা লাইন থাকত। কিন্তু এখন তারা যেতে চায় না।’ তাছাড়া টেস্টের জন্য ফি নির্ধারণও একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি।
ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘অস্বীকার করার উপায় নেই, অনৈতিক কিছু কাজ তো আমরা ইতিমধ্যে করে ফেলেছি। টেস্ট না করে পজেটিভ নেগেটিভ করেছি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতার ভাব এসেছে।’
প্রধানমন্ত্রীর এই চিকিৎসক বলেন, ‘এই করোনাকালেও একটার পর একটা দুর্যোগ লেগেই আছে। দেশের বড় অংশে চলছে বন্যা। অসংখ্য মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে বন্দি। তাদের চুলা জ্বলে না, বিশুদ্ধ পানি নেই, এগুলোর কারণে করোনা নিয়ে তারা চিন্তাই করে না। বাস্তবতার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না।’
টেস্টের রিপোর্ট পেতে অনেক সময় লাগে এটাও মানুষের বিমুখ হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি। এজন্য র্যাপিড টেস্ট চালু করা গেলে দ্রুত রেজাল্ট পাওয়া যেতো বলে মনে করেন তিনি।
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। এতে অনেক লাভ। ভ্যাকসিনটার কার্যকারিতা কতটুকু তা আমরা বুঝতে পারবো। সাইট ইফেক্ট আছে কি না জানতে পারবো। তাদের সঙ্গে আমাদের লোকও থাকবে। এতে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে।’
ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘তবে অন্যান্য দেশের ভ্যাকসিন যারা প্রায় ফাইনাল স্টেজে তারাও যদি ট্রায়াল দিতে চায় তাদেরও সুযোগ দেয়া উচিত। আমরা যাচাই বাছাই করে দেখব যেটা কার্যকরী বেশি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সেটাই আমরা নেব। সরকারের উচিত তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া। যেটা দ্রুত সময়ে পাওয়া যাবে সেটাই আনার ব্যবস্থা করা।