স্টার্ফ রিপোর্টার: এ.কে সরকার।
বিডিনার্সিং ২৪.কম।
বুধবার ২১ এপ্রিল , ২০২১।
রাজশাহীতে অবশেষে ডোবায় পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার তরুণীর লাশের পরিচয় মিলেছে।
তিনি একজন মিডওয়াইফারি নার্স। নাম ননিকা রাণী রায় (২৩)।
তিনি ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুর এলাকার নিপেন চন্দ্র বর্মণের মেয়ে।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নিহত নার্সের প্রেমিক কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩) গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
নিমাই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তাকে বিয়ে করতে চাপ দেওয়ার কারণেই ননিকাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত কয়েক মাস থেকে ননিকাকে হত্যার জন্য নিমাই এবং তার সহযোগীরা পরিকল্পনা করছিলেন। হত্যাকাণ্ড নির্বিঘ্নে সম্পাদন করতে নিয়েছিলেন ছুটি।
এছাড়া পুলিশে চাকরি করলেও নিমাই বেপরোয়া।
রাজশাহী মহানগরীতে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে রয়েছে তার উঠাবসা।
রয়েছে একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক।
সোমবার দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রাজশাহী কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ।
এদিকে এর আগে রোববার সকালে রাজশাহীর পিবিআই সদস্যরা নার্স ননিকাকে খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারকে নাটোরের লালপুর উপজেলা সদরের তার বোন জামাইয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
নিমাই পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরডাঙ্গা গ্রামের মৃত হেমন্ত সরকারের ছেলে। তিনি বর্তমানে রেল পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত।
পরে নিমাইয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাস চালকসহ তার অপর সহযোগীদের গ্রেফতার করে পিবিআই।
এছাড়া এ সময় জব্দ করা হয় লাশ বহনকারী মাইক্রোবাসটিও।
গ্রেফতারকৃত নিমাইয়ের সহযোগীরা হলেন- রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ আদারিপড়ার জয়নাল আবেদিনের ছেলে কবির আহম্মেদ (৩০), শ্রীরামপুর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাস চালক বিলশিমলা এলাকার সতিশ চন্দ্র রায়ের ছেলে নবমুসলিম আব্দুর রহমান (২৫) ওরফে সঞ্জয়।
কবির ওষুধ ব্যবসায়ী,
আর সুমন মহানগরীর
শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে চটপটির ব্যবসা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকার জানান, ছয় বছর আগে ননিকা রাণী রায়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ট্রেনে পরিচয় হয়।
এরপর একে অপরকে নিজেদের মোবাইল ফোন নম্বর দেন।
শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক,ননিকা সে সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নার্সিং ইন্সটিটিউটে লেখাপড়া করতেন।
তিনি সম্প্রতি লেখাপড়া শেষ করে রাজশাহী মহানগরীর একটি ক্লিনিকে কর্মরত ছিলেন।
অপরদিকে তার (নিমাইয়ের) স্ত্রীও নার্স। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে।
তিনি বগুড়ায় কর্মরত, তবে স্ত্রীর নিমাইয়ের সম্পর্ক ভালো না। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ননিকার সঙ্গে অবাধে মেলামেশা
করতেন তিনি।
এক পর্যায়ে ননিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ননিকার পরিবারের সদস্যদের কাছে নিমাই নিজের নাম গোপন করে শুভ সরকার বলে পরিচয় দেন এবং নিজেকে অবিবাহিত বলে জানান।
পিবিআই রাজশাহীর এসআই (সহকারী পরিদর্শক) জামাল উদ্দিন জানান, গত এক বছর থেকে ননিকা বিয়ের জন্য নিমাইকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু নিমাই বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছিলেন না।
এর মধ্যে গত দুইমাস রাঙামাটিতে একটি ট্রেনিংয়ে ছিলেন ননিকা এবং
ট্রেনিং শেষ করে ফিরেন
গত ৪ এপ্রিল।
এরপর তার আগের আবাসস্থল মহানগরীর পাঠানপাড়ায় আবদুস সাত্তারের মেসে ওঠেন।
রাজশাহীতে ফিরে আসার পর ননিকা আবার নিমাইকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। বার বার বিয়ের জন্য চাপ দেবার কারণে নিমাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
এ কারণে গত ৬ এপ্রিল মহানগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় নাব্বী শাহাদত নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নেন নিমাই।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল শুক্রবার মহানগরীর উপকণ্ঠ সিটি হাটের কাছে একটি ডোবায় ড্রামের মধ্যে এক তরুণীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা।
পরে খবর পেয়ে শাহমখদুম থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় শাহ মখদুম থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরবর্তীতে পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়।