বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন

আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফারি দিবস আজ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৫ মে, ২০২১
  • ৫০৪ Time View

জীবন বাঁচানোর কাজে মিডওয়াইফদের ভূমিকা তুলে ধরতে আজ ৫ মে উদ্যাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস

জীবন বাঁচানোর কাজে মিডওয়াইফদের ভূমিকা তুলে ধরতে আজ ৫ মে উদ্যাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য: ‘মিডওয়াইভস: সুন্দর আগামীর জন্য’। এ বছর প্রতিপাদ্যটির বিশেষ তাৎপর্য হলো, ২০১৫ সাল সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমজিডি) অর্জনের নির্ধারিত বছর।
বাংলাদেশ এ পর্যন্ত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। সেটি হচ্ছে, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ হ্রাস করেছে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যু ৩২২ (২০০১) থেকে ১৭০-এ (২০১৪) নামিয়ে এনেছে। শিশুর জন্ম-পূর্ব পরিচর্যাও (এএনসি) এ সময় বেড়েছে এবং ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী অন্তত একবার গর্ভস্থ শিশুর পরিচর্যার (এএনসি) জন্য চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন। দক্ষ পরিচর্যাকারীর উপস্থিতিতে সন্তান প্রসবের শতকরা হার ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হলেও সামগ্রিকভাবে দক্ষ মিডওয়াইফের মাধ্যমে প্রসবের হার (৪২ দশমিক ১ শতাংশ) এখনো অনেক কম।
মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাংলাদেশ তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করলেও এ ব্যাপারে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন, নারীর শিক্ষার হার এবং ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি এবং সন্তান জন্মদানের সামর্থ্যের (ফার্টিলিটি) হার হ্রাস—এগুলো হচ্ছে মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

মিডওয়াইফ কতৃর্ক সাধারন ডেলিভারী শেষে একটি বাচ্চা


মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে এখন নতুন করে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিডওয়াইফদের কাজে লাগাতে হবে। দক্ষ ও পেশাদার মিডওয়াইফরা মা ও নবজাতকের মৃত্যু রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। একজন ধাত্রী বা মিডওয়াইফ বলতে আমরা বুঝি যিনি সফলতার সঙ্গে মিডওয়াইফারি শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করেছেন। এটি অবশ্যই তিনি যে দেশে বসবাস করেন, সেখানকার বিধিবিধান দ্বারা স্বীকৃত হতে হবে। মিডওয়াইফারি চর্চার জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইভসের (আইসিএম) আবশ্যকীয় যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং শিক্ষা কার্যক্রম আইসিএম কর্তৃক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হতে হবে। মিডওয়াইফ হিসেবে যাঁরা প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করেছেন, তাঁরা মিডওয়াইফারি চর্চা কিংবা ‘মিডওয়াইফ’ পদবি ব্যবহারের জন্য নিবন্ধিত হবেন কিংবা আইনগতভাবে সনদ নেবেন এবং মিডওয়াইফরা তাঁদের যোগ্যতার প্রকাশ ও চর্চা করবেন।
মিডওয়াইফরা নারীদের গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী প্রসূতি মায়েদের প্রয়োজনীয় সেবা, পরিচর্যা ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য যথাযথভাবে দায়িত্ববান ও জবাবদিহির মধ্যে থাকবেন। সন্তান প্রসব করানো মিডওয়াইফদের দায়িত্ব এবং তিনিই নবজাতক ও শিশুর পরিচর্যা করে থাকেন। স্বাভাবিকভাবে শিশু প্রসবের জন্য মিডওয়াইফরা কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেন এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্যের জটিলতা নিরূপণ করেন এবং জরুরি ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে থাকেন। একজন মিডওয়াইফ জানেন অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতকের অবস্থার অবনতি হলে কীভাবে তা শনাক্ত করবেন এবং অস্ত্রোপচার ছাড়াই সমস্যার সমাধান করবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি জানেন যে কখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে মা ও নবজাতককে পাঠাতে হবে।
মিডওয়াইফদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো পরামর্শ ও শিক্ষা প্রদান, যা শুধু প্রসূতি মাকেই নয়; বরং পুরো পরিবারকে এবং জনগোষ্ঠীকে প্রদান করা। এ কাজে প্রসব-পূর্ব শিক্ষা ও পিতা-মাতা হওয়ার প্রস্তুতি এবং নারীস্বাস্থ্য, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য এবং শিশুর পরিচর্যা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একজন মিডওয়াইফ বসতবাড়ি, কমিউনিটি, হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা স্বাস্থ্য ইউনিটে তাঁর পেশা চর্চা করতে পারবেন।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) প্রসূতি ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সরকার, সুশীল সমাজ, পেশাদার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের মহাসচিবের ‘প্রত্যেক নারী প্রত্যেক শিশু’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মিডওয়াইফারির ওপর প্রশিক্ষণ কোর্স চালু এবং তিন হাজার নতুন মিডওয়াইফ পদ সৃষ্টির মাধ্যমে দক্ষ মিডওয়াইফের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন।
ইউএনএফপিএ মিডওয়াইফদের জন্য দুটি শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনায় সরকারকে সহায়তা করছে। প্রথমটি হচ্ছে, বর্তমানে যঁারা মিডওয়াইফ ও নার্স হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য মিডওয়াইফারির ওপর ছয় মাসের একটি সার্টিফিকেট কোর্স। ২০১০ সালে একটি অন্তর্বর্তী কর্মসূচি হিসেবে এটি চালু করা হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মিডওয়াইফারির ওপর তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স। বাংলাদেশে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে এই কোর্স চালু হয়। ৩১টি নার্সিং ইনস্টিটিউট ও কলেজ থেকে ২০২৫ জন শিক্ষার্থী (তিনটি ব্যাচে তিন বছরে) এ কোর্স সম্পন্ন করছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রথম ব্যাচের ৫২৫ জন শিক্ষার্থী মিডওয়াইফ হিসেবে সনদ পাবেন। মাতৃস্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে।
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইউএনএফপিএ সব ধাত্রী এবং যাঁরা ধাত্রীবিদ্যার ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁদের স্যালুট জানাচ্ছে। মা ও নবজাতককে নতুন জীবন দেওয়ার এই অনবদ্য পেশা বেছে নেওয়ার জন্য তাঁদের ইউএনএফপিএর এই সম্মাননা।
তথ্যসূত্র: ইউএনএফপিএ

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102