শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:২০ অপরাহ্ন

“যক্ষ্মা এর জীবাণু যখন ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট : MDR-TB ও XDR-TB “

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৪৪৩ Time View

👩স্টাফ রিপোর্টার:তানজিলা আক্তার সারা

এন্টিবায়োটিক ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু এর কথা তো আমরা কম বেশি সবাই জানি,তাই না? আচ্ছা মাল্টিড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট – টিউবারকিউলোসিস বা MDR-TB এর কথা কি আপনারা জানেন? (যক্ষ্মা এর জীবাণু)

যক্ষ্মা বা টিবি রোগের জন্য যেই ব্যাকটেরিয়া দায়ী সেটি যক্ষ্মার জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগ বা ওষুধের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্ট তৈরি করে রোগীর শরীরে। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স কি এটা আমি আরেকবার মনে করিয়ে দেই সবার সুবিধার্থে,ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হলো ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অনুজীব একটি ড্রাগকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যে ড্রাগ একবার তাদের নিস্ক্রিয় করে দেয় বা তাদের মেরে ফেলে। অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি যক্ষ্মা বা টিবিতেও ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয় যেটা MDR-TB (Multidrug-resistant TB) নামে পরিচিত। Isoniazid এবং Rifampicin এই দুটি শক্তিশালী অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ড্রাগও কাজ করে না যদি রোগির দেহে MDR-TB ডভেলপ করে।

মূলত ২ টি কারণে মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট আবির্ভূত হয় এবং ছড়িয়ে পড়ে-
🎯যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা এবং অসতর্কতা
🎯ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে সংক্রোমণ।

বেশিরভাগ যক্ষ্মা রোগী ৬ মাসের কঠোর ওষুধের কোর্স ও চিকিৎসা এবং স্বাস্থকর্মীদের সহায়তায় সুস্থ হয়।অনুপযুক্ত বা ভুল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগের ব্যবহার বা অকার্যকর ওষুধের ফর্মূলেশন,যেমন: একক ওষুধ ব্যবহার,নিম্নমানের ওষুধ, নিম্নমানের ওষুধ সংরক্ষন ব্যবস্থা এবং ওষুধের সঠিক কোর্সের নিয়ম না মানার কারনে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স হয় যা কিনা দ্রুত সংক্রমিত হয়ে পড়ে বিশেষত জনবহুল স্থান; হাসপাতাল, জেলখানার মতো জায়গায়।

যক্ষ্মা রোগের ওষুধের সঠিক কোর্স এবং চিকিৎসা নির্দেশিত নিয়মাবলি অত্যাবশ্যকীয়। কেন না ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ না করলে এবং সঠিক নিয়ম ছাড়া একই ওষুধ দীর্ঘদিন গ্রহন করলে যক্ষ্মার ব্যাক্টেরিয়াগুলো ওষুধের গঠনগত দিক চিনে ফেলে বিধায় নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে ব্যক্টেরিয়া গুলো নিজেদের মধ্যে জেনেটিক মিউটেশন করে ফেলে ও গঠনগত পরিবর্তন এবং তাদের কাজের ধরন পরিবর্তন করে সেই ওষুধকে অকার্যকর করে ফেলে।

আরেকটি ব্যাপার হলো,ব্যাক্টেরিয়া গুলো তাদের ম্যামোরিতে ঔষধের ধরন এবং কাজগুলো সেভ করে রাখে যার ফলে তাদের পরবর্তী জেনারেশন কে তারা এর বিরুদ্ধে কাজ করতে শিখিয়ে দিয়ে যায়। যার ফলে ঐ ব্যক্তির দেহে ঐ এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগ বা ওষুধটি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায় অর্থাৎ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। MDR-TB তে আক্রান্ত ব্যক্তির তেকে হাঁচি, কাশি ইত্যাদির মাধ্যমে এটি অন্য ব্যক্তির দেহে সংক্রমিত করতে পারে।
কিছু দেশে MDR-TB এর চিকিৎসা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে। চিকিৎসার বিকল্প গুলোতে রয়েছে নানাবিধ সীমাবদ্ধতা এবং এটি ব্যয় বহুল ও বটে। এই রোগের ওষুধ সবসময় পাওয়া যায় না এবং রোগিদের মধ্যে ওষুধের বিভিন্ন বিরূপ প্রভাব (adverse effect) লক্ষ্য করা যায়। XDR-TB হলো MDR-TB এর আরেকটি রূপ যেটি আরো কয়েক প্রকার অ্যান্টি টিউবারকিউলোসিস ড্রাগের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্ট তৈরি করে এবং খুব কম ওষুধে সাড়া দেয় বা কাজ করে এটি।

এবার কথা বলবো আরেকটি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট XDR-TB (Extensively Drug – Resistant tuberculosis) যেটি কিনা MDR-Tb এরই আরেকটি ফর্ম বা রূপ, যা কমপক্ষে ৪টি মূল Anti-TB drug কে রেজিস্ট্যান্ট করে। XDR-TB দুটি সর্বাধিক শক্তিশালী অ্যান্টি-টিবি ড্রাগ,আইসোনিয়াজিড এবং রিফাম্পিসিন রেজিস্ট্যান্সের সাথে জড়িত যেটিকে MDR-TB ও বলা হয়ে থাকে।এছাড়াও Fluoroquinolones জাতীয় ড্রাগ যেমন, levofloxacin বা moxifloxacin রেজিস্ট্যন্সের পাশাপাশি ইনজেকশন যোগ্য সেকেন্ড – লাইনের ওষুধের মধ্যে কমপক্ষে একটি ওষুধ (amikacin, capreomycin,kanamycin) কে রেজিস্ট্যান্স করে ফেলে।

MDR-TB এবং XDR-TB উভয়ই সাধারণ (drug – susceptible বা ড্রাগ – সংবেদনশীল) টিবির চেয়ে ট্রিটমেন্ট রোগীকে সুস্থ করতে যথেষ্ট সময় নেয়,এবং সেকেন্ড লাইনের অ্যান্টি- টিবি ওষুধের ব্যবহার প্রয়োজন,যা অনেক ব্যয়বহুল এবং ফাস্ট- লাইনের ওষুধের চেয়ে বেশি সাইড ইফেক্ট রয়েছে যা ড্রাগ – সংবেদনশীল টিবিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

XDR-TB মূলত রোগীর দেহে ডেভেলপ করে MDR-TB এর মতোই যেটি আমি উপরে উল্লেখ করেছি। তবে একটি কথা, XBR-TB একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে সংক্রমিত হলেও যদি ঐ ব্যক্তির দেহে টিবি রোগের জীবাণু তাকে তবেই সেটি সক্রিয় ভাবে কাজ করবে এবং ডেভেলপ করবে। তাই যারা সাধারন টিবি রোগে আক্রান্ত এবং যারা তাদের চিকিৎসা করেন তাদের অনেক সতর্ক থাকতে হবে।
১.এক জায়গায় অনেক ভীড়ের মধ্যে থাকা যাবে না
২.নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকতে হবে এক রোগী থেকে অন্য রোগীর
৩.যেখানে হাঁচি, কাশি দেয়া যাবে না এবং কফ,থুথু ফেলা যাবে না
৪.মুখে মাস্ক কিংবা রুমাল এবং হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে
৫.সাধারন টিবি রোগীদের অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে ওষুধ খেতে হবে এবং ডাক্তারের দেয়া নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। যদি কোন ওষুধে সমস্যা বা সাইড ইফেক্ট দেখা দেয় তাহলে সাথে সাথে সেটা ডাক্তার বা নার্স কে জানাতে হবে।

XDR-TB রোগের নিরাময় করা যায়,তবে বর্তমানে যে ওষুধ পাওয়া যায় তা সাধারণ টিবি বা এমনকি এমডিআর টিবি রোগিদের তুলনায় সাফল্যের সম্ভাবণা অনেক কম।এর নিরাময় নির্ভর করে ওষুধের প্রতিরোধের পরিমান,রোগের তিব্রতা এবং রোগীর দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা (immune system) কেমন অবস্থায় আছে তার ওপর।তবে HIV তে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এর মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কেননা তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা নেই বললেই চলে।

তবে দ্রুত যদি XDR-TB এর চিকিৎসা করানো র‍্যায় এবং সেকেন্ড -লাইন ড্রাগের সঠিক নির্বাচন এবং ব্যবহারে ডাক্তার অভিজ্ঞ থাকেন তাহলে দ্রুত নিরাময় নেই।BCG টিকাই আপাতত টিবি এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

WHO এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত MDR-TB এ বিশ্ব ব্যাপি ৪৭% মানুষ আক্রান্ত এবং এর মাত্র ৬.২% XDR-TB তে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই এটাকে এখন পর্যন্ত বিরল রোগ বলা হয়।
২০১৬ সালে, বিশ্বব্যাপি আনুমানিক ৪৯০,০০০ জন লোকের MDR-TB তে আক্রান্ত হয় এবং রিফাম্পিসিন-রেজিস্ট্যান্স টিবও সহ আরো ১,১০,০০০ মানুষ MDR-TB এ নতুন ভাবে আক্রান্ত হয়।সবচেয়ে বেশিসংখ্যক MDR-TB /RR-TB এ আক্রান্ত দেশ হলো চীন, ভারত এবং রাশিয়া।

ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স টিবি নিয়ন্ত্রণের সমাধান গুলো হলো:
১.প্রথমবারেই টিবি রোগীকে চিকিৎসা করে সুস্থ করতে হবে।
২.ডায়াগনোসিস বা টেস্ট করতে হবে।
৩.যেখানে রোগীদের চিকিৎসা করা হয় সেখানে পর্যাপ্ত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৪.প্রস্তাবিত সেকেন্ড -লাইনের ওষুধগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
স্পেশাল ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স সনাক্ত করা যায়।এই টেস্ট সাধারণত মলিকিউলার বা কালচার বেসড হয়ে থাকে।
টিবি রোগের চিকিৎসা এবং এর ওষুধের রেজিস্ট্যান্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষত WHO অনেক কাজ করছে, কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়, এর দ্রুত প্রতিকার এবং সচেতনতা নিয়ে। আমাদের ও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে শুধু এন্টিবায়োটিক বা এন্টি-টিবি ড্রাগ নয় অন্য কোনো রোগের ওষুধই যেনো আমাদের দেহে রেজিস্ট্যান্ট না হতে পারে।

🎯Information callected from a science blog🌺

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102