সিনিয়র রিপোর্টার-নাদিয়া রহমান,ঢাকা
স্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান হল মনের সুস্থতা বা মানসিক স্বাস্থ্য। মানুষের চিন্তা ,আবেগ ও আচরণ এই তিন মিলেই হল মানসিক স্বাস্থ্য।
মানসিক সমস্যার রূপ গুলি নানা প্রকার। যেমন – অবসাদ , মানসিক উদ্বিগ্নতা ,এছাড়াও রয়েছে স্কিৎজোফ্রেনিয়া এবং বাইপোলার সমস্যা।
সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য শরীরকে সুস্থ রাখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হল মনকে সুস্থ রাখা। ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে সে –
১) দৈনন্দিন কাজকর্ম সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে পারে।
২ ) বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।
৩ ) পরিবার ও সমাজের সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করে চলতে পারে। স্বাভাবিক ও সুষ্ঠ অভিযোজনে সক্ষম হয়।
৪ ) বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
৫ ) আরও উৎপাদনশীল হয়ে ওঠে এবং নিজের ও সমাজের উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়ঃ
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমরা যা যা করতে পারি-
১ ) নিজের যত্ন নেয়াঃ
মানসিক সুস্থতা ও সুস্থ ভাবাবেগ পেতে নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। অবদমিত আবেগ প্রকাশের ফলে মানসিক চাপ ও জটিলতা কমে যায়। নিজের জন্য কিছুটা সময় আলাদা রাখো , নিজের মনের কথা শোনো ,বই পড়ো গান শোনো। অতীত ও ভবিষ্যৎ ভুলে বর্তমানে থাকার চেষ্টা করো।
২ ) পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণঃ
বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এটাই দেখেছেন যে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার কেবল আমাদের শরীরকেই নয় , মনকেও ভালো রাখে। অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটি খাবার আমাদের বিষন্নতার জন্য মারাত্মক দায়ী। ভিটামিন বি -১২, ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার আমাদের মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলোকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া তাজা ফলমূল ও সবজি একটা বড় ভূমিকা রাখে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে।পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যই সুস্থ থাকে।
৩) পর্যাপ্ত ঘুমঃ
শরীর সুস্থ রাখতে যেমন পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই তেমনই মনকে সুস্থ রাখতেও ঘুমের কোন বিকল্প নেই। কারণ পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে ফলে আমরা ক্লান্তিবোধ করি , কমে যায় কর্মস্পৃহাও। ঘুমের সময় আমাদের শরীর ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি সারিয়ে তোলে আমাদের মন ও মেজাজকে চাঙ্গা রাখে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম জরুরি।
৪) শারীরিক ব্যায়ামঃ
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক ব্যায়াম খুবই জরুরি। স্ট্রেস ও বিষন্নতা কাটাতে ব্যায়াম ভীষণ কাজে আসে। ব্যায়ামের ফলে শরীরে স্ফূর্তি আসে , ক্লান্তি ও মানসিক চাপ হ্রাস পায়। তাই মনকে চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যেস গড়ে তোলো।
৫) শখের কাজ করাঃ
নিজের শখের কাজগুলি করতে পারলে মন ভালো থাকে, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। দুশ্চিন্তা মাথায় আসে না এবং অবদমিত আবেগগুলিও প্রকাশ পায়। যেমন – বাগান করা , রান্না কিংবা সেলাই করা, নতুন কোনো কিছু শেখা ইত্যাদি। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
৬) নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখাঃ
নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখলে জীবনে এগিয়ে চলার সাহস পাওয়া যায়। আমরা কেউই নিখুঁত নই। অন্যের সাথে নিজের তুলনা করে নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে চিন্তা করা বোকামির কাজ। এতে করে হীনমন্যতা ,হতাশা ,বিষন্নতা বৃদ্ধি পায়। তার থেকে নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে কিংবা তা দূর করার প্রয়াস করলে নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়বে।
৭) কৃতজ্ঞ থাকাঃ
সারাদিন কি কি পেয়েছো তার একটা লিস্ট বানাও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো। যা পাও নি তা নিয়ে কষ্ট পেও না, যতটুকু পেয়েছো তাতে খুশি থাকার চেষ্টা করো এতে করে মনের ভেতর ইতিবাচকতা জন্ম নেবে।
৮) প্রিয়জনদের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটানোঃ
প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটালে মন সুস্থ থাকে। নিজেকে ঘরবন্দি রাখলে হতাশা ও দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকবে ফলে মানসিক সমস্যার দেখা দিতে পারে। বন্ধুবান্ধব ,পরিবারের সাথে মন খুলে মেশো। একটু হাসি একটু আলিঙ্গন মনকে সুস্থ করে তুলতে দারুন উপযোগী।
৯) সক্রিয় থাকাঃ
অলস হয়ে বসে থাকলে নানা দুশ্চিন্তা মাথায় ভিড় জমাতে থাকে। তাই সবসময় কাজের মধ্যে থাকো তাহলে মন এমনিতেই ভালো থাকবে।
১০) ক্ষমা করাঃ
দীর্ঘদিন ধরে কারো প্রতি ক্ষোভ জমতে থাকলে মানসিক অসুস্থতার সূত্রপাত হতে পারে। তাই ক্ষমা করে দাও ক্ষমাই পারে মানসিক প্রশান্তি দান করতে। ক্ষমা করো সুস্থ থাকো।
গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যা নিরাময় এর জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। শারীরিক ক্ষতি ভালো হলেও মানসিক ক্ষতি সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। আমাদের চারপাশে রোজ কিছু নৃশংস ঘটনা ঘটছে , যারা ভুক্তভোগী তাদের মধ্যে সাংঘাতিক মানসিক চাপ ,ভয় ,বিষন্নতা,হতাশাসহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের উচিত তাদের পাশে থাকা ,তাদের হেয় চোখে না দেখে কিভাবে তারা পুরোপুরি সুস্থ জীবন পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা। নিজেও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকি অন্যকেও মানসিক ভাবে সুস্থ হতে সাহায্য করি।