ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনা পরিস্থিতি
👩স্টাফ রিপোর্টারঃ দীপিকা চৌধুরী, বিডিনার্সিং২৪.কম
দেশে করোনা পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। মার্চ মাসের শুরুর দিন (১ মার্চ) রাজধানীসহ সারাদেশে ১৭ হাজার ৫৭০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৮৫ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। একই সময়ে মৃত্যু হয় আটজনের। সেদিন করোনা শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।
তিন সপ্তাহের ব্যবধানে সোমবার (২২ মার্চ) সারাদেশে ২৫ হাজার ১১১টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ২ হাজার ৮০৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। একই দিনে মৃত্যু হয় ৩০ জনের। করোনা শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী শনাক্তের হার প্রায় পাঁচগুণের কাছাকাছি বেড়েছে। মৃত্যু প্রায় চারগুণ এবং ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশী।
করোনা রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গত ১০ দিন যাবত যে হারে রোগী বেড়েছে সেটা আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে করোনা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যে অবকাঠামো রয়েছে তা ভেঙে পড়ার আশংকা রয়েছে। ইতোমধ্যেই রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করা কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আইসিইউতে বেড একেবারেই ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে গত বছরের মতো রোগী নিয়ে হাসপাতাল হাসপাতাল ঘুরতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা মহানগরীর ১০টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউতে শয্যা সংখ্যা ৯৫টি। হাসপাতালগুলো হলো- উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৫০০ শয্যা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।
গতকাল সোমবার (২২ মার্চ) আইসিইউতে রোগী ভর্তি ছিল ৯০ জন। গতকালের হিসাবে আইসিইউ বেড ফাঁকা ছিল মাত্র ৫টি। বেসরকারি পর্যায়ের করোনা হাসপাতালের ২৬৩টি আইসিইউ বেডের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ২১১ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত আইসিইউ বেড নেই (মাত্র ৫টি ফাঁকা রয়েছে), বেসরকারি পর্যায়ে অর্ধশতাধিক আইসিইউ বেড ফাঁকা থাকলেও এর আর্থিক খরচ অনেক বেশি হওয়ায় অনেকেই সেখানে ভর্তি হতে পারবেন না। ফলে রোগী আরও বৃদ্ধি পেলে বাসায় বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে অনেক রোগীর।
এদিকে কোভিড সংক্রমণ পরিস্থিতির সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় ২২ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ড. বিলকিস বেগম রাজধানীর পাঁচটি সরকারি হাসপাতালকে সার্বিকভাবে নতুন করে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে চিঠি দেন।
হাসপাতাল পাঁচটি হলো- মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, বাবুবাজারের ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহাখালীর ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার এবং ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল।
বিএসএমএমইউ’র ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে আশঙ্কা করে বলেন , গত কয়েকদিন যাবত ক্রমাগতভাবে শনাক্তকৃত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে গত বছরের মার্চের চেয়ে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি এবার আরও ভয়াবহতার দিকে চলে যাচ্ছে। করোনার এ গতিকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো যেটা আছে সেটা ভেঙ্গে পড়বে।
তিনি বলেন, সব দেশেরই করোনা রোগীদের চিকিৎসা দানের নির্ধারিত সামর্থ্য রয়েছে। তার বাইরে চলে গেলেই শনাক্তকৃত রোগী ও মৃত্যু বাড়ে। ফলে সামাজিকভাবেও তখন নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও অসহায়ত্ব চলে আসে।
সরকারি হিসাবে হাসপাতালে বেড এখনও অনেক ফাঁকা রয়েছে এমন তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারিভাবে সারাদেশের বেড সংখ্যার কথা বলা হয় কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আজও যদি রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি ও বেড সংখ্যা হিসাব করা হয় তখন দেখা যাবে, হাসপাতালগুলোর সামর্থ্যের শেষ দিকে চলে এসেছে। যেসব এলাকায় রোগী বেশি যেমন- ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালগুলোর সামর্থ্য প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন কোনো সমাধান নয়, এটি সহায়ক মাত্র। মুখে মাস্ক পরিধান করা, ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলাটাই এখন করোনা সংক্রমণ রোধের উপায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমইউ/এআরএ/জিকেএস