ডেস্ক রিপোর্টঃ
========
১৮২০ সালের ১২ মে ইতালীর ফ্লোরেন্স শহরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা মহিয়ষী নারী নাইটিংগেল এর হাত ধরে আজকের আধুনিক নার্সিং পেশার অগ্রযাত্রা। নার্সিং একটা সেবামূলক পেশা। বিশ্বের হাজারো পেশার ভিড়ে এই পেশাটি এখন দিনে দিনে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে । বিশ্বের প্রতিটি দেশেই নার্সের চাহিদা রয়েছে।
‘নার্স মানে সাদা, পোশাকে সাদা, আচরণ ও কর্মে সাদা একদল সেবক সেবীকা । সবকিছুতেই যেন সাদার সমাহার । শান্তির প্রতীক এই সাদাকে তাঁরা মনে, মননে ধারণ করে জীবন / যৌবনকে উৎসর্গ করেন অসুস্থ রোগিদের সেবা প্রদানে।’
সেবাই যাদের মূল ধর্ম, সেবাই যাদের ব্রত । নার্স রাতের অন্ধকার দিনের আলোর ঝলকানী কে তুচ্ছ করে সেবা দিয়ে যান সকল সময় । দেশের যে কোন দুর্যোগ মহামারীতে নার্সিং সমাজ তাদের নানা সীমাবদ্ধতা কে তুচ্ছ করে সেবার ব্রত নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন। সংসার পরিবার সন্তানের পিছুটান কে অবহেলা করে যে কোন মহামারীতে নার্সিং সমাজ রোগির সবচাইতে কাছে থেকে সেবা প্রদান করেন।
বর্তমান করোনা কালীন সময়ে একজন নার্স যে কত টা অপরীহার্য মানুষ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শত প্রতীকুলতার মাঝেও নার্সিং সমাজ করোনা মহামারী মোকাবেলায় সন্মুখ সারীতে থেকে সেবা প্রদানের মাধ্যামে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন । করোনা মহামারীতে লকডাউনের সময় রাস্তায় যখন কোন গাড়ি চলেনা তখনও কোন নার্স তার ডিউটিতে আসার সঠিক সময়টি ভুল করেন নাই। অনেক সময় মাইলের পর মাইল যানবাহন না পেয়ে রাতে/ দিনে কর্মস্থলে হেটে আসা যাওয়া করেছেন নার্সিং সমাজ। নার্সের চাকুরী করার কারনে ভাড়া বাড়ী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তবুও নার্সিং সমাজ করোনা যুদ্ধে পিছু হটেন নাই । নার্সিং সমাজ সকল প্রতিকুলতা ও প্রতি বন্ধকতাকে উপেক্ষা করে, মানুষের সেবায় এগিয়ে চলেছেন। অনেক সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্তানের প্রাপ্য ভালবাসা টুকু এবং পরিবার কে পর্যাপ্ত সময় দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন সাদা পোষাকের নার্সরা । নার্সিং বিভাগ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভাগের একটি অন্যতম অংগ। নার্সিং বিভাগ কে বাদ দিয়ে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভাগের সফলতা চিন্তা করা যায় না।
সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশের এ স্বাস্থ্য সেবা পেশার সঙ্গে লাখ লাখ নার্স স্বাস্থসেবা বিভাগকে গতিশীল রেখেছেনে, তাদের সেবা এবং দক্ষতা দিয়ে, যদিও এই নার্সিং সমাজ বিভিন্ন ভাবে অবহেলার স্বীকার । নানা সময়ে তারা তাদের প্রপ্য সন্মান থেকে বঞ্চিত।
এই মহান পেশার সাথে জড়িত এই সকল সেবক/সেবিকাদের কেউ নার্স, কেউবা সিস্টার, কেউবা ব্রাদার ডেকে নিজের অসুবিধার কথা তুলে ধরে সেবা গ্রহন করেন। নার্সিং সমাজের কাছে সেবা নিতে আসা মানুষ গুলো কেউ তাদের ব্যথা বেদনার কথা বলেন, কেউবা না পাওয়ার কথা বলেন, অনেকে আবার উদ্ভট অভাব অভিযোগ কিংবা আবদারের কথা বলে থাকেন। নার্সিং সমাজকে বিনয়ের সাথে সকল ধরণের রোগী বা রোগীর সঙ্গীর কথা শুনতে হয়। শত অপ্রতুলতা, অপর্যাপ্ততা থাকার পরও সবার চাহিদা কম বেশী মিটাতে হয় এই নার্সিং সমাজকে । কাউকে দিতে হয় শান্তনা , কাউকে দিতে হয় উপদেশ, কারো ব্যাথায় হতে হয় ব্যাথিত , কাউকে দিতে হয় ঔষধ পথ্য ইনজেকশান । জটিল কঠিন, মৃত্যু পথযাত্রী রোগী কিংবা তার আত্মীয় স্বজনের আর্তনাদে সবচাইতে বেশি কাছে থাকে নার্স । রোগির আহাজারী, যত কান্না, যত চিৎকার, যত অভাব অভিযোগের বাণী নার্সদেরই খুব কছে থেকে শুনতে হয়।
অথচ এসব নার্সদের মর্যাদা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবহেলীত থেকে যায়। নার্সদেরও অভাব অভিযোগ রয়েছে, রয়েছে না পাওয়া আর বঞ্চনার ইতিহাস । তাদের সুযোগ সুবিধার কথা সঠিক ভাবে আমলেই নেওয়া হয়না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। বরং তাদেরকে অবজ্ঞা করা হয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে। কেউ কেউ একটু এগিয়ে গিয়ে নার্সিং পেশাকে অমর্যাদাকর বানাতেও দ্বিধা করছেন না।
জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেক্টরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নার্সিং বিভাগের নার্সদের ক্ষেত্রবিশেষ দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণি পেশার মর্যাদা দিয়েছেন, এরপরও অনেকেই তা মেনে নিতে পারছেন না। কেউ কেউ মানলেও তা কেবলই মানার জন্য মানা মানা পর্যন্ত সীমাবন্ধ রাখেন ।অনেক সময় সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে নার্সিং সমাজের ওপর অনেক দোষ চাপিয়ে দেয়া হয়। রোগির সকল দায় দায়িত্ব বহন করতে হয় নার্সিং সমাজ কে কারণ রোগী ও রোগীর স্বজনদের আশপাশে নার্সরা সদা বিচরণ করেন। সহজেই তাদেরকে কাছে পাওয়া যায়। নার্সরা রোগীর পাশে রাত দিন ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করেন। দ্বিতীয় শ্রেনীর পদমর্যদার হয়েও দ্বিতীয় শ্রেনীর সুযোগ সুবিধা ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত থাকেছেন নার্সিং সমাজ। নার্সিং বিভাগ স্বাস্থ্য বিভাগের একটি অন্যতম অংগ হলেও নানা ধরনের বৈশম্যের স্বীকার এই নার্সিং সমাজ, অথচ স্বাস্থ সেবায় নার্সিং সমাজের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
তবুও আমরা স্বপ্নদেখি, আশা জাগিয়ে রাখি, আমাদের মহামান্য সন্মানীত ডিজিএনএম মহোদ্বয়গনের উপর, যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আমাদের এই মহান পেশাকে আরো উন্নত আর আর সমৃদ্ধশালী করার জন্য। আমাদের সর্ব্বোচ্চ নার্সিং প্রশাসন (ডিজিএনএম) নার্সিং সেক্টরের উন্নতির জন্য খুবই আন্তরিক ভাবে কাজ করে চলেছেন। নিরাশার অন্ধকারে আশার আলো জালাতে এগিয়ে এসছেন ডিজিএনএম এর কিছু তুখোড় সত্যনিষ্ঠ আর নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা কর্মচারী, আশা করি উনাদের সততা আর নিষ্ঠায় নার্সিং পেশা তার প্রাপ্য মর্যদা পাবে, মুছে যাবে নার্সদের প্রতি অবহেলার ইতিহাস।
সভাপতি
মোসা : শাহাদাতুন নুর “ লাকি”
বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশান
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা।