শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন

ডাক্তার-নার্স সংকটে চলছে সীমান্তবর্তী জেলা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১
  • ২৮৭ Time View

নিউজডেস্কঃসীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কোভিড-১৯ এর সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় সংক্রমণ রোধে অনেক জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে। তবে এই জেলাগুলোর অধিকাংশ হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স।

অপর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নিয়েই এই হাসপাতালগুলোকে সামাল দিতে হচ্ছে অব্যাহতভাবে খারাপ হতে থাকা করোনা মহামারি।

নাটোর জেলা হাসপাতালের ৫০ শয্যার কোভিড ইউনিটে পাঁচ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স রোগীদের ভিড় সামালাতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। দুদিন আগেও এখানে মাত্র তিন জন চিকিৎসক ও তিন জন নার্স ছিলেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রোগী বাড়তে থাকায় নতুন করে এখানে দেওয়া হয়েছে দুজন চিকিৎসক ও সাত জন নার্স।

এই ১৫ জন ডাক্তার ও নার্সকে দুটি দলে ভাগ করা হয়েছে। একটি দল টানা ১৪ দিন কাজ করেন এবং অপর দল এই ১৪ দিন থাকেন কোয়ারেন্টিনে। ফলে, প্রতিদিন কোভিড ইউনিটে মাত্র সাত থেকে আট জন দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

এই সাত থেকে আট জন আবার সকাল, সন্ধ্যা ও রাতের শিফটে ভাগ হয়ে প্রতিদিন আট ঘণ্টা করে কাজ করেন।

নাটোর জেলা হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ৮৮ শতাংশ শয্যা গত সোমবার সকালেও পূর্ণ ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা যায়, গত মঙ্গবার সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলার করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ছিলো।

কোভিড রোগীদের জন্য কোনো আইসিইউ সুবিধা থাকা নাটোর হাসপাতালের ডা.পরিতোষ কুমার রায় বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চালিয়ে নিচ্ছি। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কী করব জানি না। প্রতিদিনই দু-একজন গুরুতর রোগীকে বগুড়ায় পাঠাচ্ছি। আগে তাদের রাজশাহীতে পাঠাতাম। কিন্তু সেখানে কোনো শয্যা খালি নেই।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও ক্রমবর্ধমান করোনা রোগীর চাপে রয়েছে। নাটোর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। নাটোর থেকে গুরুতর কোনো রোগীর সেখানে দ্রুত পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়।

রাজশাহী মেডিকেলে জনবল সংকট নাটোর হাসপাতালের মতো তীব্র নয় বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।

বগুড়ায় কোভিড রোগীদের জন্য তিনটি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী জেলা হাসপাতাল ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জনবলের দিক থেকে ভালো অবস্থানে থাকলেও টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রাফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতাল অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।

গতকাল সকাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের ৫৬টি কোভিড শয্যার মধ্যে ৫৩টিতে রোগী ছিল। আজ সকাল পর্যন্ত জেলায় শনাক্তের হার ৩১ শতাংশের ওপরে।

তবে এই হাসপাতালে মাত্র ১১ জন চিকিৎসক এবং ২২ জন নার্স রয়েছেন। এখানেও ডাক্তার ও নার্সদের দুটি দলে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি দল আবার তিন শিফটে বিভক্ত হয়ে পালা করে দায়িত্ব পালন করেন।

আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. তাপস সরকার বলেন, ‘পালা করে কাজ করতে আমাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা আরও বেশি চিকিৎসক ও নার্স পাব। জরুরি ভিত্তিতে আমাদের পাঁচ জন চিকিৎসক ও ৫০ জন নার্স প্রয়োজন। এখানকার ১১ জন চিকিৎসকই মেডিকেল কর্মকর্তা।’

হাসপাতাল প্রশাসন জানিয়েছে, হাসপাতালটিতে প্রায় এক চতুর্থাংশ পদ শূন্য রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতালের ১৫০টি কোভিড-১৯ শয্যার জন্য ১৮ জন ডাক্তার ও ৬৫ জন নার্স রয়েছেন।

সিভিল সার্জন জেনারেল এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মারুফ হাসান বলেন, ‘দেড়শ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের উদ্বোধনের সময় আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল দেওয়া হয়নি। আমরা বিদ্যমান জনবল দিয়ে রোস্টার অনুযায়ী কাজ করছি এবং রোগীদের ঘরে থেকেই চিকিৎসা নিতে উত্সাহিত করছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত রোববার জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ৫০ শতাংশ। তার আগের দিন ছিল ৫৬ শতাংশ।

পাশের জেলা মেহেরপুরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ৫২টি কোভিড-১৯ শয্যার জন্য পাঁচ জন চিকিৎসক রয়েছেন। জেলায় শনাক্তের হার ৩৯ শতাংশ।

হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে আমি আরও দুজন চিকিৎসক পেয়েছি। তবে জরুরি ভিত্তিতে এখানে অন্তত আরও চার জন চিকিৎসক প্রয়োজন। আমাদের চিকিত্সকদের দুটি দলে ভাগ করে একটি দলকে ১৫ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ডায়নামিক ফ্যাসিলিটি ড্যাশবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, নড়াইলের এখনকার কোভিড পরিস্থিতি ভয়াবহ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নড়াইল জেলা হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য ১২০টি শয্যার বিপরীতে চিকিৎসক আছেন মাত্র নয় জন।

এই জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার ৪৪ শতাংশের বেশি।

যশোরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গতকাল ৪৪টি কোভিড-১৯ শয্যার মধ্যে ৪১টিতে রোগী ছিল। এই হাসপাতালে মাত্র ১২ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন।

করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ এই জেলায় গতকাল দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ৫৬ শতাংশ। ফলে দক্ষিণের এই বিভাগের সব রোগী যাচ্ছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০টি কোভিড-১৯ শয্যা রয়েছে। এর সবগুলোতে রোগী ভর্তি হওয়ার পরেও অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। এখানে ৩৪ জন চিকিৎসক আছেন।

হাসপাতালের পরিচালক রবিউল হাসান জানিয়েছেন, শয্যা খালি থাকুক আর না থাকুক রোগীদের ভর্তি করাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের হাসপাতালে ১৪১ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন।’

তিনি বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার বা নার্সের সংকট নেই।

গতকাল খুলনায় শনাক্তের হার ছিল ২৫ শতাংশ। প্রতিবেশী জেলা বাগেরহাটে ছিল ২৬ শতাংশ এবং এর মোংলা উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ৫৩টি কোভিড-১৯ শয্যা রয়েছে। এর ৪০ শতাংশ পূর্ণ। হাসপাতালটি মাত্র ২২ জন চিকিৎসক নিয়ে তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

সংকট মোকাবিলায় এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসকই নেই এবং জনবলের অভাবে নব নির্মিত ১৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল খালি পড়ে আছে।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রিদওয়ানুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কর্মীদের পদায়নে এলাকাভিত্তিতে বিশাল বৈষম্য আছে।

‘স্বাস্থ্য খাতে জনবল বাড়ানোর বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। জনবল বাড়ানোর চেয়ে তারা চিকিত্সা সামগ্রী ক্রয়ের দিকে বেশি মনোযোগী এবং এখন স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়েছে,’ বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ফরিদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি

বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহ করেছি। পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই শূন্য পদগুলো কত দ্রুত পূরণ করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102