বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন

ওষুধ তৈরির পদ্ধতি জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৩৫৫ Time View

👤স্টাফ রিপোর্টার : বিভাবরী, ঢাকা।
🕗০৭/০৯/২০২০

আমরা কোনো রোগে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার সাহেব প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখে দেন। আমরা ফার্মেসি থেকে সে ওষুধ কিনে খাই। মেডিকেল ট্রিটমেন্টের প্রথাটা চলে এসেছে বহুদিন ধরে। এই সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সাইড ইফেক্ট।ওষুধগুলো একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রস্তুত করা হয়।রোগীভেদে প্রয়োজনের ভিন্নতা থাকলেও উৎপাদন ব্যবস্থার কারণে ডাক্তারকে বাধ্য হয়ে সেই ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে হয়।ধরি, আপনার রোগের জন্য প্রয়োজন ৭ মিলিগ্রামের কোনো অ্যান্টি হিস্টামিন বা পেইন কিলার ট্যাবলেট।কিন্তু বাজারে সচরাচর পাওয়া যায় ৫ অথবা ১০ মিলিগ্রামের ওষুধ।ফলে প্রতিবার সেবনে রোগীকে কিছু ওষুধ কম বা বেশি খেতে হচ্ছে। আর এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সাইড ইফেক্ট। এজন্য খেতে হয় আবার অন্য ওষুধ। এভাবেই চলছে। তাই বলা যায়, রোগ শুধু রোগ নয়। বর্তমান নব্য-উদারনৈতিক অর্থনৈতিক বাজারে রোগকে একটা বাজারের পণ্যর মতো করেই বুঝতে হবে। মানবতার জন্য বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো বা হাসপাতালগুলো কাজ করে না। দিন শেষে তারা ব্যবসায়ী। যে কারণে বাঁচার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত টাকা দিয়ে ওষুধ খাই ‘সেবা’ ক্রয় করি।

আমাদের দেশে চড়ক, সুশ্রুত, জীবক, নাগার্জুন প্রভৃতি নানা ধরনের সংস্কৃতি ভাষার নাম চিকিৎসাবিদ্যা ও ভেষজবিদ্যায় বিখ্যাত। কে না জানে, অর্জুন গাছের ছাল, পাতা ও ফল ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। অর্জুনের ছাল বাকল থেকে তৈরি হয় হৃদরোগের ওষুধ, পাতার রস দিয়ে আমাশয় রোগের ওষুধ বানানো হয়। ওষুধের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, প্রাচীন চীন, মিশর প্রভৃতি স্থানেও ভেষজ ও রাসায়নিক গবেষণা যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল। অতীতে ভেষজ গবেষক ও প্রস্তুতকারকরা ওষুধ তৈরি ও তার কার্যকারিতা নির্ধারণের জন্য, বিভিন্ন রাসায়নিক ও গাছপালা থেকে আহরিত পদার্থগুলো নিয়ে বা জীবাণু অণুঘটিত করে ভেষজ ওষুধ তৈরি করতো। এসব প্রক্রিয়া ছিলো সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং কিছুটা অনির্ভরযোগ্য। সেসব ওষুধ দেহের মধ্যে গিয়ে ঠিক কীভাবে কাজ করতো তা-ও জানা ছিলো না। সেজন্য বর্তমানের ভেষজ ওষুধ কারিগর প্রাণির দেহাভ্যন্তরস্থ বিভিন্ন অণুর গঠনতান্ত্রিক খবরাখবর নিচ্ছেন এবং সেই জ্ঞান নতুন ভেষজ ওষুধ তৈরিতে কাজেও লাগাচ্ছেন। ওই ভেষজ ওষুধের উপাদানে প্রয়োজনীয় অণুর আকৃতি ও গুণাগুণগুলো বর্তমান থাকছে। এই ভেষজ অণুগুলো দেহে গিয়ে রোগ সারাবে। কিন্তু দেহে কোন বিষক্রিয়া করবে না। অণুগুলো শরীরের অভ্যন্তরে থাকবে এবং শরীরে সহজেই গ্রহণীয় হবে।

আণবিক জৈব্যবিদ্যা আমাদের কী শেখায়?প্রাণির দেহকোষের মধ্যে ডিএনএ নামক এক পদার্থের দীর্ঘ আণবিক শৃঙ্খল সাপের মতো কুণ্ডলী পাকানো থাকে। যেমন কয়েকটি অক্ষর দিয়ে একটি শব্দ ভাষা তৈরি হয়। ডিএনএর গঠন বৈচিত্র্যও তেমন কয়েকটি ভিত্তির উপর নির্ভর করে। ডিএনএর একেক অংশকে ‘জিন’ বলে। এর উপরেই নির্ভর করে পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের সাদৃশ্য। বিজ্ঞানী ক্রিক ও ওয়াটসন ১৯৫৩ সালে ডিএনএ ‘ডাবল হেলিকস’ আবিষ্কার করার পর ‘জিনের কোড’ বা সংকেত জানা যায়। আরও জানা যায় যে ‘জিনের বা ডিএনএর পর্যায়ক্রম পরপর তিনটি নিউক্লিও ভিত্তির মধ্যেই লিখিত রয়েছে, ঠিক কী কী অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি হতে চলেছে। যাদের সমন্বয়ে গঠিত হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ‘প্রোটিন’ অণু। কাজেই অ্যামাইনো অ্যাসিডের বিন্যাসেই সুপ্ত রয়েছে তার গঠন বিন্যাস ও প্রোটিনের কার্যকারিতা। যা প্রোটিনের গঠনতন্ত্র দ্বারাই মূলত নিয়ন্ত্রিত হয়।

একটি প্রোটিন অনুঘটক, না নিয়ন্ত্রক, না ধারক প্রোটিন হবে তা ওই প্রোটিনের গঠনের মধ্যেই নিহিত থাকে। অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে জীবদেহের কোষগুলোকে দেখা যেতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে অসংখ্য ছোট-বড় অণুর যে ছন্দোবদ্ধ খেলা চলছে, তা জানা সম্ভব নয়।তা প্রকাশ পেয়েছে এনএম আর এক্স-রে স্ফটিকবিদ্যা, কম্পিউটার মডেলিং প্রভৃতি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক কৌশল আবিষ্কারের ফলে।এগুলোর মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে গবেষণায় জীবকোষের অনেক তথ্য এবং প্রোটিন, নিউক্লিয়িক অ্যাসিড, আয়ন প্রভৃতি গঠন জানা গেছে।বর্তমানে বড়-বড় ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কার্যকরী ওষুধ তৈরি করছে। কোন এনজাইম প্রোটিনের আণবিক গঠন জানতে পারলে তার নিবর্তকও প্রস্তুত করা সম্ভব। যা প্রয়োজনে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।এভাবে ক্যান্সার থেকে শুরু করে এইচআইভি ও সাম্প্রতিক করোনার ওষুধ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে।জিন না প্রোটিন, কিসে মানুষের শরীরের মূল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে?এ ব্যাপারে আজও সংশয় রয়েছে। কেউ বলেন জিন আবার কেউ বলেন দেহের মূল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে দীর্ঘ প্রোটিন অণুগুলোর গঠনতন্ত্রে। একটা সুস্থ দেহের মেটাবলিজমের (ক্যাটাবলজিম+অ্যানাবলিজম) সমতা থাকে।আর দেহস্থ এনজাইমগুলো সুষ্ঠুভাবে প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে। কিন্তু কোনো কারণে যদি এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, তবে মানবদেহে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় এবং তখনই প্রয়োজন হয় ওই এনজাইমের কিছু নিবর্তকের।যাতে ওই এনজাইম আবার তার আগের মতো স্বাভাবিক মাত্রায় কাজ করতে পারে।দেহ অভ্যন্তরস্থ ও তার নিবর্তক অণুগুলোর গঠনতান্ত্রিক পরিচিতি ও তাদের কার্যকারিতার বিশদ জ্ঞান লাভ ক্রমশ এই নিবর্তকগুলোকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসাবে বাজারে আনছে।যেমন, পিউরিন নিউক্লিওসাইড ফসফোরাইলেজ এনজাইমের পিএনএম’র কথা।এই এনজাইম পিউরিন নিউক্লিওসাইড মেটাবলিজমের সমতা রক্ষায় বিশেষ প্রয়োজন এবং এর কার্যপথে কোনো প্রকার বিঘ্ন হলে ‘টি’ কোষের প্রতিরোধক শক্তি হ্রাস পায়।সে কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে পিএনএম নিবর্তক।যা পিউরিন নিউক্লিওসাইড-এর অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডে রূপান্তর বন্ধ করে এবং ‘গাউট’ নামক বাত রোগ প্রতিরোধ করে।আধুনিক ন্যানো প্রযুক্তি,জৈব প্রযুক্তি,এক্স-রে স্ফটিক বিদ্যার সাহায্যে এই অণুর গঠনতন্ত্র জেনে নতুন নতুন সঠিক ইনহিবিটর তৈরি হচ্ছে,যা বিভিন্ন বাত রোগে আশ্চর্য কার্যকরী হচ্ছে।ধরি,সামান্য রূপান্তরিত নিউক্লিওসাইডের কথা।এরা ভাইরাসের রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ নামক এনজাইমের কার্যকরী গর্ভে ঢুকে ডিএনএ অণুর কাজকর্মে বাঁধা সৃষ্টি করে।ফলে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি প্রতিহত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102