বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন

আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে করোনার টিকা ক্রয়ে

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০
  • ৫৫০ Time View
{"uid":"3A71FD5F-1290-453B-986C-FDA783823F69_1598382565743","source":"other","origin":"gallery"}

👤 স্টাফ রিপোর্টারঃ আফিয়া মারিয়া 🕐 তারিখঃ ২৬.০৭.২০২০

করোনা মহামারি থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিন কিনতে চায় সরকার। এজন্য সরকারের অর্থ, স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোরালোভাবে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশে মাথাপিছু আয় কম হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে মোট জনগণের ২০ শতাংশের জন্য ফ্রি ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। তবে, সেক্ষেত্রে দেরি হতে পারে। তাই দ্রুত ভ্যাকসিন পেতে কেনার দিকেই আগ্রহী সরকার। আর আমাদের সবার কাছে এ ভ্যাকসিন পৌঁছাতে আনুমনিক কত টাকা খরচ হতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পেরেছি প্রায় আট হাজার কোটি টাকা লাগতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন কেনার জন্য বাজেটে আলাদা তেমন কোনো বরাদ্দ রাখা নেই। তবে, করোনা সংক্রান্ত জরুরি প্রয়োজনে খরচ করার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বরাদ্দ থেকেই ভ্যাকসিন কেনা সংক্রান্ত ব্যয় করা হবে। এজন্যই আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এখনও ১০ কোটি টাকা থেকে কোনো বরাদ্দ দিচ্ছি না। তাদের জন্য যে অর্থ রাখা হয়েছে সেখান থেকেই বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি ভ্যাকসিনের দাম ৪০ ডলার হতে পারে বলে শুনেছিলাম। তবে পরে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা জানতে পারলাম ভ্যাকসিন কিনতে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। তবে ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে সেখানে সঠিক নিয়মে কার্যকরী ভ্যাকসিনটা যেন কেনা হয় সে শর্তাবলি দেয়া হবে’।

এদিকে করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ে জানতে চাইলে ২৪ আগস্ট সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, যেখানে দ্রুত ও সাশ্রয়ী মূল্যে কার্যকর ভ্যাকসিন বা টিকা পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সংগ্রহ করা হবে।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন উৎপাদনের অ্যাডভান্স স্টেজে চলে গেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, চায়নার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও রাশিয়া অ্যাডভান্স স্টেজে আছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজা এবং মডার্না অ্যাডভান্স স্টেজে আছে’।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত জুলাই মাসে এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের জানান, যখন তারা ভ্যাকসিন পাবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি দিতে পারবে। এমন আশ্বাস তাদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি’।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন উৎপাদনে এগিয়ে আছে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা জানিয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীই নেবেন। যখন সময় হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত পেয়ে যাব। সিদ্ধান্ত পেলেই জানাতে পারব’।

এদিকে, মহামারির প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশে সুলভ মূল্যে পাওয়া নিশ্চিতে গত ১০ আগস্ট সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে-

>> করোনা ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে সঙ্গে গ্যাভির (টিকাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট) মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

>> গ্যাভি, কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির (ফ্রি’তে ভ্যাকসিন পাওয়া) পাশাপাশি নগদ অর্থে ভ্যাকসিন ক্রয়ের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

>> গ্যাভি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ ভ্যাকসিন তৈরির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে।

>> কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ফান্ড সংগ্রহে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

>> ভ্যাকসিন সংক্রান্ত (সহজে বাংলাদেশের প্রাপ্তির লক্ষ্যে) একটা রোডম্যাপ প্রস্তুত করতে হবে।

>> বিদেশ থেকে করোনার ভ্যাকসিন আনার ব্যাপারে সম্পূর্ণ প্রসিডিউর সম্পর্কে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

>> স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ভ্যাকসিন আমদানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

>> পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভ্যাকসিন আমদানি ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করতে ১৩ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিশ্বের কোন দেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় টিকা আনা হবে সে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও দর কষাকষি শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সময়মতো প্রয়োজনীয় টাকা সরবরাহে অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। কোন দেশের টিকা অধিক কার্যকর ও সহজলভ্য হবে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া করোনার টিকা দেশের নাগরিকরা বিনামূল্যে পাবেন নাকি এর একটি আর্থিক মূল্য ধার্য থাকবে কিংবা কারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন সে বিষয়েও রোডম্যাপে গাইড লাইন দেয়া হবে।

সূত্র আরও জানায়, সরকার এখন পর্যন্ত চার দেশের কাছে ভ্যাকসিন বিষয়ে তথ্য জানতে চিঠি দিয়েছে। দেশ চারটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং রাশিয়া। তবে তাদের কারও কাছ থেকেই ফিরতি কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র চীন বাংলাদেশে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল দিতে চাইলেও অজানা কারণে তা এখনও সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, বিভিন্ন দেশ করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পেছনে বিনিয়োগ করেছে। টিকা আবিষ্কার অনেক দূর এগিয়েছে। তাদের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ রাখছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ভ্যাকসিনগুলো আসছে বা আসবে সেটি কীভাবে দ্রুত এবং সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। এজন্য যে অর্থসংস্থান, সেটি রাখা আছে। প্রথম অবস্থায় ১৬ কোটি লোককে দেয়া যাবে না, তবে যারা স্বাস্থ্যকর৷

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102