👤স্টাফ রিপোর্টারঃ আফিয়া মারিয়া
🕛তারিখঃ ০৪-০৯-২০২০
অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে স্ট্রোকে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। তবে জীবনযাপন-পদ্ধতি ও আচরণগত পরিবর্তন এনে ৮০ শতাংশ স্ট্রোকের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশ্বে প্রতি ২ সেকেন্ডে ১ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং প্রতি ৪ সেকেন্ডে ১ জন মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্বজুড়ে স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আট কোটিরও বেশি
স্ট্রোক কী, কেন হয়?
মস্তিষ্কে হঠাৎ রক্ত প্রবাহের ঘাটতিই হলো স্ট্রোক। রক্তনালির ভেতরের অংশে কোলেস্টেরল, চর্বি, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি জমে রক্ত চলাচলের পথ সরু বা বন্ধ হয়ে গেলে এবং রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে মস্তিষ্কের যেকোনো অংশে রক্ত সরবরাহ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। আবার রক্ত সরবরাহ বা পরিবহনের সময় যদি কোনো কারণে ব্যাঘাত ঘটে বা নালিকাগুলো ফেটে যায় তখন স্ট্রোক হয়। এ সময় যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হয়, তা না হলে কোষগুলো শরীরের যেই অংশ নিয়ন্ত্রণ করত ওই অংশগুলো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে অথবা রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
একজন সুস্থ মানুষ পথ চলতে চলতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলেন কিংবা খেতে খেতে, বাথরুমে অথবা নামাজ পড়তে পড়তে একদিকে ঢলে পড়লেন বা অজ্ঞান হয়ে গেলেন—এ সবই স্ট্রোকের লক্ষণ। এটা যে কারো ক্ষেত্রে যেকোনো সময় হতে পারে, তবে ৪০ বছর বয়সের পর এর ঝুঁকি বেশি।
স্ট্রোকের ধরন
মূলত দুই ধরনের স্ট্রোক রয়েছে। ইস্কেমিক স্ট্রোক, হেমোরেজিক স্ট্রোক। এ ছাড়াও আরেক ধরনের মিনি স্ট্রোক রয়েছে, যাকে ট্রানজিয়েন্ট ইসেকমিক আ্যাাটাক (টিআইএ) বলে।
ইস্কেমিক স্ট্রোক : রক্তবাহী নালিকা ক্লট হয়ে বা জমে গিয়ে নালি সরু হয়ে যাওয়ার কারণে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। তখন এই স্ট্রোক হয়।
হেমোরেজিক স্ট্রোক : মস্তিষ্কের ভেতরে দুর্বল কোনো রক্তনালি ফেটে গেলে বা ছিদ্র হয়ে মস্তিষ্কের চারপাশে রক্তক্ষরণের কারণে এই ধরনের স্ট্রোক হয়। রক্ত মস্তিষ্কের ভেতর বা আশপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া কোনো অংশ ফুলে যেতে পারে, মস্তিষ্কের কোষ বা টিস্যুগুলো ক্ষয়ে যেতে পারে।
ট্রানজিয়েন্ট ইস্কেমিয়া অ্যাটাক : যখন মস্তিষ্কে রক্তসরবরাহ স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং ২৪ ঘণ্টারও কম সময় স্থায়ী হয়, তখন সেটা ট্রানজিয়েন্ট ইস্কেমিয়া অ্যাটাক। এতে মস্তিষ্কে কোনো স্থায়ী ক্ষতি হয় না, কিন্তু পরে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
যেসব ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই এর মধ্যে রয়েছে –
• আপনার বয়স, বয়সের সাথে সাথে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়বেই।
• লিঙ্গ, আপনি পুরুষ হলে আপনার ঝুঁকি বেশী।
• পরিবারের কারো যদি আগে স্ট্রোকের ইতিহাস থাকে।
• আপনার আগে যদি একটি মিনি স্ট্রোক বা ট্রানসিয়েন্ট ইশকেমিক অ্যাটাক (টিআইএ) হয়ে থাকে।
• স্ট্রোকের লক্ষণগুলো জেনে রাখা আর এর বিরুদ্ধে লড়তে শেখা।
কিভাবে বুঝবেন যে কারো স্ট্রোক হচ্ছে?
• ফেইস বা মুখ – খেয়াল করে দেখুন, মুখ কি বাঁকা হয়ে গেছে?
• আর্মস বা হাত – তারা কি দুই হাতই উপরের দিকে তুলতে পারছে?
• স্পিচ বা কথা – তার কি কথা জড়িয়ে যাচ্ছে?
• টাইম বা সময় – এই লক্ষণগুলো মিলে গেলে সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
কীভাবে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়-
স্ট্রোক ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে ধূমপান, জর্দা, গুল, মাদক পরিহার করতে হবে। ধূমপান রক্তনালি সংকুচিত করে স্ট্রোক ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরও পাঁচ বছর পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যায়। নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস জীবনকে পরিবর্তন করে। স্ট্রোক প্রতিরোধের কার্যকরী পন্থা হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। নিয়ম করে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট এবং সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন হাঁটতে হবে। হাঁটার গতি হবে ঘণ্টায় চার মাইল, মিনিটে প্রায় ১০০ কদম। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, দিনের অধিকাংশ সময় বসে বসে কাজ করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যায়াম বা হাঁটা অপরিহার্য। স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা । রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এসবের জন্য কোন ওষুধ খেলে তা চালিয়ে যাওয়া, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বাদ না দেয়া, নিয়মিত চেক আপে থাকা।
মনে রাখবেন স্ট্রোক এর ক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করলে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমনকি এই লক্ষণগুলো যদি খুব অল্প সময়ের জন্যেও দেখা যায় দ্রুত হাসপাতালে যান। যত দ্রুত এর চিকিৎসা করবেন ততোই রোগীর জন্য ভালো, নাহলে মস্তিষ্কে চাপের কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। স্ট্রোকের দ্রুত চিকিৎসা হলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভব।