শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

শিক্ষানীতি সংস্কারে তোড়জোড়ের পেছনে কী?

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৫৪২ Time View

স্টাফ রিপোর্টার-আকিব জাভেদ🕛০৮সেপ্টেম্বর২০২০

হালে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বেশ সরব। তিনি বাংলাদেশে শিক্ষায় বড় পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছেন। এ জন্য ২০১০ সালের শিক্ষানীতি সংস্কারের কথা বলছেন। বলছেন, দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার কথা। বলছেন, কেরানি তৈরির শিক্ষায় তিনি ইতি টানবেন এবং চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার বিকাশ ঘটাবেন। মোটা দাগে শিক্ষামন্ত্রীর চিন্তা বাজারমুখী। সে বাজার আবার শুধুই দেশে সীমাবদ্ধ নয়; তাঁর কথাবার্তায় আভাস মিলছে, তিনি বিশ্ববাজারের কথা ভাবছেন। বাজারে যে ধরনের দক্ষ জনশক্তির চাহিদা আছে বা বাড়ছে বা আগামী দিনে যেমন চাহিদা সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে; তিনি তেমন শিক্ষাপরিকল্পনা করতে চান। তিনি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা বলছেন বেশ জোরেশোরে। তাঁর এ চিন্তা আলোচনার দাবি রাখে।

শিক্ষামন্ত্রীর কথাবার্তায় স্পষ্ট হচ্ছে যে তিনি ২০১০ সালের ঢাকঢোল পেটানো জাতীয় শিক্ষানীতিতে আস্থা রাখতে পারছেন না। তাঁর মতে, ইতিমধ্যে ১০ বছর পেরিয়ে গেছে এবং অতিদ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে এ শিক্ষানীতি কার্যকারিতা হারিয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি বলে পরিচিত ২০১০ সালের শিক্ষানীতি চমৎকার কথামালার এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার চেয়ে বড় কথা, এই শিক্ষানীতির বনিয়াদ বাস্তবায়নের সামান্য প্রয়াসও জাতি লক্ষ করেনি। অথচ এটি বাস্তবায়নে সরকার সময় পেয়েছে গোটা এক দশক এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নিজে সময় পেয়েছিলেন ৯ বছর। ইতিহাসে এত দীর্ঘকাল কেউ শিক্ষামন্ত্রীর পদে থাকার নজির নেই। জাতীয় শিক্ষানীতি সংসদে পাস হওয়ার পর দীর্ঘ আট বছরেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ শেষ করতে পারেনি। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের দেওয়া কোনো অঙ্গীকারই পূরণ হয়নি। তবে বছরের প্রথম দিনেই কয়েক কোটি শিশুর হাতে পাঠ্যবই তুলে দিয়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত প্রশংসার কাজটি করেছেন। এ জন্য জাতি তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
মতামত

শিক্ষানীতি সংস্কারে তোড়জোড়ের পেছনে কী?

হালে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বেশ সরব। তিনি বাংলাদেশে শিক্ষায় বড় পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছেন। এ জন্য ২০১০ সালের শিক্ষানীতি সংস্কারের কথা বলছেন। বলছেন, দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার কথা। বলছেন, কেরানি তৈরির শিক্ষায় তিনি ইতি টানবেন এবং চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার বিকাশ ঘটাবেন। মোটা দাগে শিক্ষামন্ত্রীর চিন্তা বাজারমুখী। সে বাজার আবার শুধুই দেশে সীমাবদ্ধ নয়; তাঁর কথাবার্তায় আভাস মিলছে, তিনি বিশ্ববাজারের কথা ভাবছেন। বাজারে যে ধরনের দক্ষ জনশক্তির চাহিদা আছে বা বাড়ছে বা আগামী দিনে যেমন চাহিদা সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে; তিনি তেমন শিক্ষাপরিকল্পনা করতে চান। তিনি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা বলছেন বেশ জোরেশোরে। তাঁর এ চিন্তা আলোচনার দাবি রাখে।

শিক্ষামন্ত্রীর কথাবার্তায় স্পষ্ট হচ্ছে যে তিনি ২০১০ সালের ঢাকঢোল পেটানো জাতীয় শিক্ষানীতিতে আস্থা রাখতে পারছেন না। তাঁর মতে, ইতিমধ্যে ১০ বছর পেরিয়ে গেছে এবং অতিদ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে এ শিক্ষানীতি কার্যকারিতা হারিয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি বলে পরিচিত ২০১০ সালের শিক্ষানীতি চমৎকার কথামালার এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার চেয়ে বড় কথা, এই শিক্ষানীতির বনিয়াদ বাস্তবায়নের সামান্য প্রয়াসও জাতি লক্ষ করেনি। অথচ এটি বাস্তবায়নে সরকার সময় পেয়েছে গোটা এক দশক এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নিজে সময় পেয়েছিলেন ৯ বছর। ইতিহাসে এত দীর্ঘকাল কেউ শিক্ষামন্ত্রীর পদে থাকার নজির নেই। জাতীয় শিক্ষানীতি সংসদে পাস হওয়ার পর দীর্ঘ আট বছরেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ শেষ করতে পারেনি। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের দেওয়া কোনো অঙ্গীকারই পূরণ হয়নি। তবে বছরের প্রথম দিনেই কয়েক কোটি শিশুর হাতে পাঠ্যবই তুলে দিয়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত প্রশংসার কাজটি করেছেন। এ জন্য জাতি তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

 

প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কোনো ক্ষেত্রেই জাতীয় শিক্ষানীতি সামান্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেনি। প্রাথমিক শিক্ষা যেমন আট বছর মেয়াদি হয়নি, তেমনি মাধ্যমিক শিক্ষাও দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা যায়নি; বাদ দেওয়া হয়নি উচ্চমাধ্যমিকের মধ্যবর্তী স্তর। এ কাজে সামান্য কোনো পদক্ষেপও জাতি লক্ষ করেনি। চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স প্রান্তিক শিক্ষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি এবং জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ করে লাখ লাখ তরুণ-তরুণী আরও এক বছরের মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য পেরেশান হয়েছেন।

সরকারি, বেসরকারি কর্মখালি বিজ্ঞাপনেও চার বছরের অনার্স ডিগ্রিকেই যথাযথ বলে ঘোষণা করা হয়নি। অর্থাৎ সরকার নিজেই তার শিক্ষানীতি মানেনি বা কার্যকর করেনি। ফলে সাধারণ জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। শিক্ষা আশ্রয় পেয়েছে কোচিং আর নোট-গাইড বণিকদের পক্ষপুটে। অন্যদিকে পেশাভিত্তিক স্নাতক তৈরিতে নজিরবিহীন অবনমন সবাইকে পীড়িত করেছে। দক্ষ পেশাজীবীর অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ পূর্ণ হয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে সর্বগ্রাসী।

জাতীয় শিক্ষানীতি শিক্ষাক্ষেত্রে আরও নানা সর্বনাশা নজির সৃষ্টি করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে পীড়াদায়ক হলো শিক্ষার্থী, বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের কাঁধে দুটি পাবলিক পরীক্ষার বোঝা চাপানো। এই শিক্ষানীতি প্রণয়নে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের একজন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি একাধিকবার লিখেছেন ও বলেছেন যে এই দুই পরীক্ষার সুপারিশ তাঁরা করেননি। কে বা কারা; কখন, কীভাবে এ দুটো পরীক্ষা এই শিক্ষানীতিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, তা এখনো রহস্যাবৃত।
শুধু তা-ই নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অনাবশ্যক বইয়ের বোঝা বাড়ানো হয় এবং শিক্ষার্থীদের বিভাজিত শিক্ষার ঘেরাটোপে আটকে দেওয়ার মৌরুসিপাট্টা দেওয়া হয় এক শ্রেণির বিদ্যা বণিকদের। পৃথিবীজুড়ে যখন মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সমন্বিত বা একমুখী শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে, তখন এই শিক্ষানীতি শিক্ষার্থীদের খণ্ড খণ্ড শিক্ষার দিকে ঠেলে দেয়। শিক্ষা যখন জীবনদক্ষতা অর্জনের কৌশল, তখন জাতীয় শিক্ষানীতি তত্ত্বের কচকচানি শেখাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কাজেই জাতীয় শিক্ষানীতি আমাদের অগ্রবর্তী শিক্ষার দলিল না হয়ে, তা আমাদের আরও পেছনে ঠেলে দিয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা ও বেতন স্কেল দেওয়ার মূল লক্ষ্য

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102