বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

গর্ভ অবস্থায় মায়েদের টিকা,কখন দিবেন??

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৪৭০ Time View

রিপোর্টার :শানু আক্তার,নারায়নগঞ্জ
🧭:২৩.০৯.২০২০

 

গর্ভকালীন সময়ে মায়ের চাই বিশেষ যত্ন। মহিলাদের গর্ভধারনের পূর্বেই নিজের স্বাস্থ্য, গর্ভধারণ ও সন্তান পালন সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। কারণ একজন সুস্থ্য মা-ই পারে একটি সু্স্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে। তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা। গর্ভকালীন যত্ন বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করতে পারে

টিকা ক্ষতিকর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। গর্ভাবস্থায় টিকা নিলে আপনি এবং আপনার সন্তান উভয়েই ক্ষতিকর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবেন।গর্ভাবস্থায় টিকা নিলে আপনার সন্তানটি জন্মের কয়েকমাস পরেও তার টিকা শুরু করার আগ পর্যন্ত নিরাপদ থাকে। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আপনার গর্ভের সন্তানকে গুরুতর অসুখ থেকে রক্ষা করবে
চলুন জেনে নেই গর্ভভর্তী মায়ের টিকা সম্পর্কে জেনে নেই।

১। ফ্লু(flu) এর টিকা
ফ্লু একটি ভাইরাস-জনিত রোগ, যার প্রকোপ বাংলাদেশে সাধারণত শীত ও বর্ষাকালে বেশি দেখা যায়।মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (CCD) ফ্লু(flu) এর ঋতুতে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চের সময়টাতে যে সকল নারীরা গর্ভবতী হবেন তাদেরকে ফ্লু শট নেয়ার পরামর্শ দেয়। ফ্লু এর টিকা মৃত ভাইরাস দিয়ে তৈরি বলে মা ও গর্ভজাত সন্তান উভয়ের জন্যই নিরাপদ। কিন্তু ফ্লুমিস্ট একধরণের ন্যাজাল স্প্রে ভ্যাক্সিন যা জীবন্ত ভাইরাস দিয়ে তৈরি হয় বলে এটি অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে প্রেগন্যান্ট নারীদের।

গর্ভাবস্থার মধ্যবর্তী সময়ে ফ্লুতে আক্রান্ত হলে তীব্র উপসর্গ বা নিউমোনিয়ার মত জটিল অবস্থার ও সৃষ্টি করতে পারে। মধ্যম মাণের ফ্লুতে আক্রান্ত হলেও জ্বর, মাথা ব্যথা, পেশীর ব্যথা, গলা ব্যথা ও কাশির মত যন্ত্রণাদায়ক উপসর্গগুলো দেখা দেয়। সাধারণত ৪ দিনেই উপসর্গগুলো কমতে থাকে। তবে কাশি ও দুর্বলতা ২ সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে থাকতে পারে।

২। টিটেনাস/ডিপথেরিয়া/পারটুসিস টিকা(Tdap)

Tdap গর্ভাবস্থার যে কোন সময়ই নেয়া যায়। তবে গর্ভকালের ২৭-৩৬ মাসের মধ্যে নেয়াটাই উপযুক্ত সময়। এই টিকা টক্সয়েড ধরণের বলে গর্ভাবস্থায় নেয়ার জন্য নিরাপদ।

টিটেনাস একটি সংক্রামক রোগ যা ক্লোস্ট্রিডিয়াম টিটানি নামে পরিচিত একটি সাধারণ জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট।টিটেনাসকে লক’জ ও বলা হয়। এর ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয় এবং পেশীতে বেদনাদায়ক খিঁচুনি হয়। টিটেনাস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মাটিতে এবং পশুর বর্জ্যে পাওয়া যায়। মানুষের শরীরের ত্বকের কোন স্থানে কেটে গেলে এটি রক্তস্রোতে প্রবেশ করতে পারে। আপনার শরীরের কোথাও গভীর ও ময়লা ক্ষতের সৃষ্টি হলে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হোন। গর্ভাবস্থায় টিটেনাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ডিপথেরিয়া শ্বসনতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগ। এর ফলে শ্বাসকষ্ট হওয়া, প্যারালাইসিস হওয়া, কোমায় চলে যাওয়া এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পারটুসিস ব্যাকটেরিয়া ঘটিত চূড়ান্ত রকমের সংক্রামক রোগ। এর ফলে ক্রমাগত ও গভীর কাশি হয় এবং উচ্চ শব্দ হয় বলে একে ‘হুপিংকাশি’ ও বলে।

৩। হেপাটাইটিস বি এর টিকা

হেপাটাইটিস নিয়ে উদ্বেগের সবচে বড় কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে সংক্রমিত দশজনের মধ্যে নয়জনই জানেন না যে শরীরে এই ভাইরাস তারা বহন করছে
গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেয়া নিরাপদ। যদি আপনি স্বাস্থ্যকর্মী হন বা আপনার পরিবারের কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে এই টিকা নিয়ে নিন।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। এর ফলে যকৃতের প্রদাহ, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি এবং জন্ডিস দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী লিভার ডিজিজ, লিভার ক্যান্সার এবং মৃত্যু ও হতে পারে।

গর্ভবতী নারী যদি হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হন তাহলে ডেলিভারির সময় এই ইনফেকশন নবজাতকের মধ্যে ছড়াতে পারে। সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হলে শিশুর পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় মারাত্মক যকৃতের রোগ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

CCD এর মতে সকল গর্ভবতী নারীরই হেপাটাইটিস বি শনাক্তকরণের পরীক্ষা করানো উচিৎ। কারণ অনেক সময় এই রোগটি তার উপস্থিতির জানান দেয় না।

৪। হেপাটাইটিস এ এর টিকা

হেপাটাইটিস এ এর টিকা যকৃতের এমন রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় যা সাধারণত ছড়ায় সংক্রমিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে। জ্বর, ক্লান্তি ও বমি বমি ভাবের মত লক্ষণগুলো দেখা দেয় এই রোগে আক্রান্ত হলে। এটি হেপাটাইটিস বি এর সংক্রমণের মত মারাত্মক কোন রোগ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অসুস্থতা গর্ভজাত সন্তানের উপর কোন প্রভাব ফেলে না। বিরল ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস এ প্রিম্যাচিউর লেবারের সৃষ্টি করতে পারে এবং নবজাতকের ইনফেকশনও হতে পারে।

৫। নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন

আপনার যদি দীর্ঘমেয়াদী কোন রোগ যেমন- ডায়াবেটিস অথবা কিডনি রোগ থাকে তাহলে আপনার চিকিৎসক আপনাকে নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন নেয়ার পরামর্শ দেবেন। যা কয়েক ধরণের নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষা দেবে। গর্ভজাত সন্তানের ক্ষতির বিষয়টি এখনো অজানা, তবে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে ঝুঁকি কম।

কোন কোন টিকা গর্ভাবস্থায় নেওয়া যাবে না:

কিছু টিকা রয়েছে, যা গর্ভকালীন সময়ে নেওয়া রীতিমতো বিপজ্জনক। মাম্পস, হাম, রুবেলা, চিকেন পক্স, বিসিজি, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, টাইফয়েডের টিকা গর্ভাবস্থায় পরিহার করতে হবে

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102