মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন

“কারিগরি নার্সিং ও আমাদের দায়বদ্ধতা “

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ১৭৪৬ Time View
{"origin":"unknown","uid":"3A71FD5F-1290-453B-986C-FDA783823F69_1600937426640","source":"other"}

বিডি নার্সিং২৪ রিপোর্ট: সম্প্রতি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড নিয়ন্ত্রিত কিছু নার্সিং কোর্স চালু নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। আমরা যারা পেশায় নার্স তাদের গায়ে আঁচড় ভালোই লেগেছে।

১৯৬২ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০০৫ সালে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স পরিচালনা শুরু করলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি ২০১২ সাল থেকে নার্সিং কোর্সও চালু করে কারিগরি বোর্ড। গেল বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান। পরে বিজনেস রুলস অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে নার্সিংয়ের কোর্সগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণে চালুর জন্য বলা হয় এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ড আইন২০১৮ এর ৩০নং ধারাটি পরিবর্তনের কথা বলা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আওতায় পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি নামে একটি সার্টিফিকেট কোর্স(২সেমিস্টার) অপরটি ডিপ্লোমা কোর্স (৮সেমিস্টার)চালু রয়েছে ২০১২ সাল থেকে।শুরু থেকে এ কোর্সের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার মত কোর্স সম্পন্নকারী এবং আরো ৪ হাজার অধ্যয়নরত আছে।

কয়দিন আগে  পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নার্সিং শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াবলী পড়ছিলাম তাদের নার্সিং কাউন্সিলের ওয়েবসাইট দেখা গেছে তারা মোট ৭টি কোর্স চালায় নার্সিং শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে ANM (Auxiliary Nurse and Midwife) ও GNM (General Nursing and Midwifery ) এ কোর্সদুটি যথাক্রমে ২বছর ও ৩বছর আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রেজুয়েশন কোর্সগুলো পরিচালনা করা হয় বেসিক(৪বছর) পোস্ট বেসিক (২বছর) এমএসসি(২বছর) এমপিল(১/২বছর)পিএইচডি (৩/৫বছর) ANM কোর্সের ভর্তির বয়স সীমা ১৭-৩৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে তবে GNM ক্ষেত্রে ১৭বছর এবং কমপক্ষে এইচএসসি (মানবিক /বিজ্ঞান বিভাগ) পাশ হতে হবে এবং একজন একবারে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে করতে পারবেন। বাকী কোর্সগুলোতে বয়সসীমা ১৭রাখা হয়েছে তবে বিজ্ঞান বিভাগ আবশ্যক বেসিক বিএসসিতে। ভারত নার্সিং কাউন্সিল আইন ১৯৪৭ সালে বলা হয়েছে নিবন্ধন ব্যতীত নার্সিং শিক্ষা ও সেবা প্রদান বেআইনি এবং শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির মধ্য দিয়ে ‘বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিল’ থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান নার্সিং কাউন্সিল’ পৃথক হলেও একটি স্বতন্ত্র নার্সিং কাউন্সিল হিসেবে দাঁড়াতে ‘বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল–কে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল তার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা ও ক্ষমতা ফিরে পায়। এর আগে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রাররা ছিলেন খণ্ডকালীন। ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে জোহরা খাতুন রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিএমডিসির রেজিস্ট্রাররা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করতেন। এই সময়ে বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড নার্সের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০০। ২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন পাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অবলুপ্ত হয়ে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে পরিণত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে থাইল্যান্ডের কারিগরি সহায়তায় নার্সিং ও মিডিওয়াইফারি শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। নতুন এই কারিকুলাম অনুযায়ী এসএসসির পরিবর্তে এইচএসসি–উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডিওয়াইফারি (সব বিভাগের জন্য উন্মুক্ত) এবং চার বছর মেয়াদি বিএসসি নার্সিং (শুধু বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের) কোর্স চালু করা হয়। পরবর্তীতে ২২ডিসেম্বর ২০১৬সালে ১৯৮৩ আইনকে পুর্নাঙ্গ রুপ দিয়ে নার্সিং মিডওয়াইফরী আইন ২০১৬ প্রনয়ন বাংলাদেশ নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারী কাউন্সিল করা হয়। এই আইনের ২১ নং ১ও২ ধারায় বলা আছে নিবন্ধন ব্যতীত নার্সি/মিডওয়াইফারী বা সহযোগী পেশা গ্রহন নিষিদ্ধ এবং আইন লঙ্ঘনে অর্থদন্ড ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

এবং ২৪ নং এর ১ও২ বলা হয়েছে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেখে শিক্ষা কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এতে সহজে অনুমেয় নার্সিং কাউন্সিলের নিবন্ধন বিহীন নার্সিং শিক্ষা কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং ঐসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নেওয়াটা অবৈধ। ফলে তারা নার্সিং পেশায় আসার সুযোগ থাকে না।

নামে বেনামে ভাড়া বাড়িতে গড়ে উঠা কারিগরি শিক্ষাবোর্ড নিয়ন্ত্রিত সার্টিফিকেট ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্সের প্রতিষ্ঠান গুলোতে কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীরা নার্সিং কাউন্সিলের নিবন্ধন পাওয়ার আবেদন করছে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে আদালত স্থগিত করে রেখেছে তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম। সমাধানের পথ খুজতে নার্সিং কাউন্সিল মরিয়া তবে একটি আশংকা অমুলক নয় কারিগরি থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন পেতে পারে।

নার্সিং কাউন্সিল ২২জন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয় এতে নার্সিংয়ের প্রতিনিধি আছে ৯জন তাই বিষয়টি নিয়ে বিশদভাবে উপস্থাপনের সুযোগ সংকীর্ণ রয়ে যায়। পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি যারা তাদেরকে সরাসরি নার্স হিসেবে নিবন্ধন দিলে তখন নার্সিং শিক্ষা খাত ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে।এ প্রসঙ্গে উল্লেখকরা যায় এলএমএফ কোর্সটি এমবিবিএস এর আগে চালু ছিল কিন্তু এমবিবিএস চালু হওয়ার পরে এলএমএফ রা নিবন্ধন পাচ্ছে না বিএমডিসি থেকে।বিএসসি ডেন্টাল ডিগ্রিধারী চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন পাচ্ছে না।তাই নার্সরা এ দাবিটি রাখতে পারে পেশাগতভাবে পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্ট দের সরাসরি নার্স হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া কোন যৌক্তিকতা নাই।
চলবে…..!

লেখক: আবুল উরওয়াহ
নার্সিং কর্মকর্তা

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102