👤স্টাফ রিপোর্টারঃ লিজা খান,ঢাকা |🕐 ০২.০৯.২০২০
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি (অনুচ্ছেদ ২ক) ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা অনুসারে,
“কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে”
অথচ এই মূলনীতিটি যেন মানতে নারাজ বিভিন্ন নার্সিং কলেজের নার্সিং ইন্সট্রাক্টর এবং কতিপয় হসপিটালের নার্সিং অফিসারগণ।
নার্সিং শিক্ষার্থীদের একটা বৃহৎ অংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাদের অনেকেই ধর্মীয় রীতি অনুসারে ড্রেসের সাথে হিজাব পরিধান করে থাকে।অথচ, এটির জন্য হসপিটাল ডিউটি, ক্লাস, পরীক্ষার সময়ে বিভিন্ন ধরণের নিপীড়নের শিকার হতে হয়।।
এ বিষয়ে কতিপয় শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, সর্বত্রই এই হিজাব পরিধান নিয়ে তাদেরকে নানান ক্ষেত্রে অপমান ও লাঞ্চনার স্বীকার হতে হয়। এ সম্পর্কে উদাহরণ দিতে গেলে বলা যায়, ক্লাসের সময় হিজাব পরিধান করলে তা নিয়ে কটুক্তি পর্যন্ত শুনতে হয়। হিজাব পরিধান করার কারণে স্টুডেন্টকে ক্লাস থেকে বের করে দেবার ঘটনাও ঘটেছে।
পরীক্ষার ক্ষেত্রে, পরীক্ষার হলে প্রবেশের পূর্বে সকলকে আইডেন্টিফিকেশন করে হলে প্রবেশ করানোর পরও, পরীক্ষক হিজাব পরিধানকারীর খাতায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান এবং সেই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা হল ত্যাগ করতে উৎসাহিত করেন।
হসপিটাল ডিউটির ক্ষেত্রে যেন এ দুর্ভোগ আরও চরম পযার্য়ে পৌঁছে। বিভিন্ন হসপিটালে শুধুমাত্র হিজাব পরিধান করার কারণে ডিউটিচ্যুত করার ঘটনা অনেক বার সংঘটিত হয়েছে। বিভিন্ন নার্সিং অফিসার, নার্সিং সুপারভাইজার, ওয়ার্ড ইনচার্জ এই কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে জানা যায়, হিজাব পরিধান নাকি সেবা দানের অন্তরায় হয়ে দাড়ায়।
আমরা জানি, নার্সিং মানেই মানবতার সেবা। প্রতিটি ধর্মের মূলনীতিতেই মানবসেবাকে আবশ্যিকভাবে স্থান দেয়া হয়েছে। মানবসেবার জন্য প্রয়োজন দয়া, মায়া,স্নেহ, ভালোবাসা এবং দরদপূর্ণ একটি হাতের ছোঁয়া। সেখানে হিজাব, সেবা দানের অন্তরায় হয়ে কখনো দাড়াতে পারে না। হিজাব যদি সত্যিই সেবা দানের অন্তরায় হয়ে দাড়াতো তবে বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংকটে স্বাস্থ্যকর্মীদের PPE ( ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী) পরিধানও হয়তো সেবাদানকে মারাত্মক ভাবে ব্যহত হতো। আর শুধু নার্সিং সেক্টর নয় বর্তমানে প্রতিটি সেক্টরেই নারী কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিজাব পরিধান করে থাকেন।
বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ৷ কারো ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার অধিকার কারো থাকতে পারে না। একজন হিজাবধারী যদি তার জায়গা থেকে সেবাদান করতে সক্ষম হয়ে থাকেন তবে তার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করে এহেন বাঁধা প্রদান কখনোই সমীচীন হতে পারে না। আমরা আশা করবো অচিরেই জাতীয় সংবিধানের মূলনীতি অনুসারে, যার যার জায়গা থেকে ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।