কামরুজ্জামান মিন্টু, ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল। এই হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন ডা. সোহেলী শারমিন। তার বিরুদ্ধে একের পর এক নানা অনিয়মের অভিযোগে উঠেছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এবার হাসপাতালের সকল অনিয়ম ফাঁস করলেন কর্মরত সকল নার্সরা।
ইতোমধ্যে লিখিতভাবে হাসপাতালের সকল অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারীতা, সমন্নয়হীনতা, মনগড়া কার্যকলাপ, ক্ষমতার অপব্যবহার, অহেতুক কারণ দর্শানোর নোটিশ, বেতন বিল আটকে বিনা কারনে হয়রানি করা, হাসপাতালে সবার সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ সামাজিকভাবে সকল নার্সদের হ্যায়প্রতিপন্ন করার অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভালুকার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনুর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
গত রবিবারের (১৩ ডিসেম্বর) লিখিত আবেদন পত্রটি ইতিমধ্যে সময়ের কন্ঠস্বরের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাক্ষর করেছেন।
এতে আরো দেখা যায়- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ময়মনসিংহের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন, বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি বরাবর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে।
লিখিত অভিযোগপত্রে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সকল নার্সদের পক্ষ থেকে নার্সিং সুপারভাইজার শারমিন আক্তারের স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রেরমাধ্যমে বলা হয়- স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.সোহেলী শারমিনের কর্মকাণ্ডে এই সরকারি হাসপাতালের সকল নার্সিং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। যার ফলে সেবাকার্যে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর কর্তৃক এই হাসপাতালে একজন নার্সিং সুপারভাইজার পদায়ন থাকা সত্ত্বেও তার সাথে কোনো সমন্নয় না করেই যখন তখন মনগড়া ডিউটি চাপিয়ে দেন ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এছাড়া ১২ ঘন্টার পরিবর্তে একাধিকবার রোষ্টার করা হচ্ছে। যার ফলে তাদের কার কখন ডিউটি তা জানাও দুষ্কর হয়ে পড়ছে।
নার্সিং হাজিরা খাতা সুপারভাইজারের কাছে না রেখে নিজের কক্ষে রাখেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। আর তাই তার অফিস কক্ষে স্বাক্ষর করার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সকল নার্সদের। মাঝে মধ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজের রোম তালাবদ্ধ রাখার ফলে খাতায় স্বাক্ষর দিতে দেরি হয়। এই অযুহাতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিন তাদের অনুপস্থিত লিখে রাখেন। আর অহেতুক কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়ে করেন হয়রানি।
সময়ের কন্ঠস্বরের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়মে ঠাসা হাসাপাতাল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি বরাদ্দের দেড় কোটি টাকা অনিয়ম করার অভিযোগ তুলেছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সোহেলীর বিরুদ্ধে। এই অনিয়ম খতিয়ে দেখতে চলতি বছরের গত জুলাই মাসে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আজো তদন্ত কমিটি ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার হিসাব নিতে পারেনি। তার খুটিঁর জোড় নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এছাড়া গত এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ করোনা কালীন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সোহেলীকে প্রত্যাহারের দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি এবং বিক্ষোভ করেন হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এদিকে গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ, মিথ্যাচার, অযৌক্তিক হঠকারি সিদ্ধান্ত ও অযোগ্যতার জন্য ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেন হাসপাতালের ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
যার অনুলিপি ভালুকার সংসদ সদস্য, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন ও উপজেলা চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয়। কিন্তু আজও সেই আবেদন আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো সেই আবেদনকারীদের মধ্যথেকে চারজনকে ডাঃ সোহেলী সিভিল সার্জনের যোগসাজশে অন্যত্র বদলি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, এখনো অভিযোগকারীদেরকে বদলির হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানী করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
একের পর এক এসব অনিয়মের ফলে হাসপাতালের স্টাফদের মাঝে একধরণের চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। এভাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে স্টাফদের রেষারেষির কারণে হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকল অনিয়ম আর দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিন সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য হাসপাতালে কর্মরত নার্সরা কোথায় কেন লিখিত অনুলিপি দিচ্ছে তা আমি জানিনা। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।
তবে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে এখনো কিছু জানেননা বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভালুকার সংসদ সদস্য স্বাক্ষরিত অনুলিপি এখনো আমার হাতে আসেনি। যদি কোনো অভিযোগ পাই তা উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে এবং তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ভালুকার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্সদের লিখিত অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে স্বাস্থ্যের ডিজিকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।