👤স্টাফ রিপোর্টার:সৈকত চন্দ্র দাস,ঢাকা⏱️তারিখ:০৬-০৯-২০২০
‘রাত আনুমানিক ১১টা। ডিউটি ডাক্তারসহ আমি ফিমেল (মহিলা) ওয়ার্ডে রাউন্ডে যাচ্ছিলাম। ওয়ার্ডে ঢুকতেই চোখ পড়ল কর্নারের বেডে থাকা সেই অন্তঃসত্ত্বা রোগীর দিকে। দেখতে একটু অস্বাভাবিক লাগছে। আমি ছুটে যাই রোগীর কাছে এবং জিজ্ঞাসা করি, আপনার কী কোনো সমস্যা হচ্ছে? তিনি জানালেন, তার পেট ও কোমরে ব্যথা হচ্ছে, থেমে থেমে একটু একটু করে।
তখন ডিউটি ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কি লেবার ওয়ার্ডে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা আছে। আমি বললাম, আছে। তারপর ডিউটি ডাক্তারের অনুমতিক্রমে রোগীকে ইনজেকশন পুশ করালাম লেবারের ব্যথা কিনা তা দেখার জন্য। কিন্তু ইনজেকশন দেয়ার পর রোগী বলছে, ব্যথা আরও বাড়ছে। এরপর আমি দেখলাম রোগীর লেবার আছে এবং একটু পরই ডেলিভারি হয়ে যাবে। তখন ডিউটি ডাক্তার এবং আমিসহ আমার সহকর্মী নার্সরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়লাম এটা ভেবে যে, আমরা যে হাসপাতলে আছি এখানে ডেলিভারি ও ডেলিভারি পরবর্তী কোনো ব্যবস্থাই নেই। কারণ এটি ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হসপিটাল। আমরা আরও চিন্তিত হয়ে পড়লাম, কারণ রোগীর আগেও একটি ছেলে সন্তান আছে এবং সেটা সিজার করা।
মা ও শিশু যেন উভয়ই ভালো থাকেন এবং ভালোভাবে ডেলিভারি সম্পন্ন হয় সেজন্য ডিউটি ডাক্তার, ইএমও, আরএমও, নার্সিং সুপারভাইজার ও তত্ত্বাবধায়ক স্যারকে জানিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করেছে, আমরা রোগীকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার জন্য ট্রলিতে নিয়েছি। কিন্তু রোগীর ব্যথা আরও বাড়তে থাকে এবং নবজাতকের মাথা সামনের দিকে চলে এসেছে। এ অবস্থায় তাকে আর অ্যাম্বুলেন্সে নেয়া সম্ভব হয়নি। শুধুই সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করে পাশে থাকা ডিউটি ডাক্তার ও সহকর্মী নার্সদের সহযোগিতায় হাতের কাছে যা ছিল তাই নিয়ে খুব সাবধানতার সঙ্গে বড় কোনো সমস্যা ছাড়াই রোগীর নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন করি। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই গর্ভফুল বের হয় এবং নবজাতকের নাভি কাটা হয় হাতের কাছে থাকা মেডিসিন কাটার সিজার দিয়ে। তারপর নাভি বাঁধলাম হাতের কাছে থাকা সার্জিক্যাল মাস্কের ফিতা দিয়ে। এরপর এয়ারওয়ে ক্লিয়ারের জন্য সাকশন দিলাম এক অভিনব বুদ্ধি খাটিয়ে। বাটারফ্লাই নিডিল কেটে সেই বাটারফ্লাইয়ের সঙ্গে ১০ সিসি সিরিঞ্জ সংযুক্ত করে। ততক্ষণে মা ও মেয়ে দু’জনেই সুস্থ ছিলেন। মেয়ের নামও দিলাম সিদরাতুল মুনতাহা। সকল প্রশংসা সেই মহান রাব্বুল আলামিনের যিনি আমাদেরকে এ কাজে সফল হওয়ার জন্য সাহায্য করেছেন। সেইসঙ্গে ধন্যবাদ জানাই সেই ডিউটি ডক্টরকে, যিনি পাশে না থাকলে এত বড় সাহসিকতার কাজ কখনোই করতে পারতাম না। ধন্যবাদ জানাই আমার সহকর্মী সকল নার্স, ডিউটিতে থাকা সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের। সত্যিই এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি, যা কোনো ভাষা দিয়েই প্রকাশ করার মতো না।’
বিডি নার্সিং ২৪ ডট কম এর কাছে এভাবেই এক প্রসূতি ও নবজাতকের জন্ম ঘিরে অন্য রকম অনুভূতির কথা তুলে ধরেন মমতাময়ী সফল নার্স।