👩🦰সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃমরিয়ম, চাঁদপুর
🕓১৮.০৯.২০২০
দাঁতের যত্ন এবং সুস্থতার জন্য যে কাজ গুলো করা উচিত
সুন্দর দাঁত মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশে যেমন জরুরি , তেমনি মানুষের সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের জন্য দাঁতের সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা,অনেক বিষয়ে সচেতন হলেও দাঁতের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। ফলে, অল্প বয়স থেকেই আমরা দাঁতের নানা সমস্যাতে ভুগে থাকি। এছাড়া,সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করার কারণেও আমরা নানা রকম দাঁতের সমস্যাতে ভুগে থাকি। শুধু যে সুস্থ থাকার জন্য দাঁত গুরুত্বপূর্ন তা নয় আমাদের ব্যক্তিগত সৌন্দর্য প্রকাশেও অপরিহার্য। সুতরাং,শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই দাঁতের যত্নে আরো সচেতন হওয়া উচিত।
**দাঁতের যত্নে কি কি করা উচিত সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ :
নিয়মিত সঠিক ভাবে দাঁতের পরিচর্যা না করার ফলে দাঁত নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক সময় দাঁতের অবস্থা এত ভয়াবহ হয় যে কোন ভাবেই দাঁতকে রক্ষা করা সম্ভব হয় না তুলে ফেলতে হয়।একটি দাঁতে দীর্ঘদিন সমস্যা থাকলে,যদি যথা সময়ে আক্রান্ত দাঁতের চিকিৎসা করা না হয় তবে,পাঁশের অন্য দাঁত ও আক্রান্ত হতে পারে।
**সুস্থ দাঁতের জন্য নিয়মিত ২ বার এবং অন্তত ২ মিনিট ব্যয় করে সঠিকভাবে বার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। যাতে,দাঁতে লেগে থাকা খাদ্য কনা খুব ভালভাবে বের হতে পারে। না হলে এই খাদ্য কনা দাঁতের খুব ক্ষতি করতে পারে।
**খাবার গ্রহণ করার পর অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ব্রাশ করা উচিত। যদি,৩০ মিনিট অপেক্ষা করা সম্ভব না হয় তবে খাবার খাওয়ার পূর্বে দাঁত ব্রাশ করে নেয়া উচিত। বিশেষ করে,খাবারে এসিডিক কম্পাউন্ড থাকলে খাওয়ার পর পর ব্রাশ করলে এই এসিড গুলো মুখের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে যা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
সবারই সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস করা উচিত। অনেকে,ঠিক জানেনই না যে ব্রাশ কিভাবে করা উচিত। দাঁত ব্রাশ করার সময় যথাসম্ভব আলতো করে সারকুলার মোশনে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশটি ভাল মানের এবং নরম হওয়া উচিত।
**অনেকেই বছরের পর বছর ধরে একটি ব্রাশ ব্যবহার করে থাকেন।যা,দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।নিয়ম হল প্রত্যেক তিন মাস পর পর ব্রাশটি বদলে ফেলা।
**দাঁত ব্রাশ করার পর ব্রাশটিকে খুব ভাল ভাবে ধুয়ে সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা উচিত।ব্রাশে ক্যাপ ব্যবহার করা উচিত। কেননা,ব্রাশ খোলা অবস্থায় রেখে দিলে তেলাপোকা বা অন্যান্য পোকা মাকড় দ্বারা দূষিত হতে পারে।
**দাঁত ব্রাশ করার সময় সঠিক পরিমাণে ফ্লুরাইড সমৃদ্ধ টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। টুথপেস্ট কেনার আগে দেখে নিন টুথপেস্টে অন্তত ১৩৫০-১৫০০ পিপিএম ফ্লুরাইড আছে কিনা।
*দাঁত ব্রাশ করার সময় জিহ্বা খুব ভালভাবে পরিষ্কার করা উচিত।সেক্ষেত্রে,টাং স্কেরেপার দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিত। আবার অনেক টুথব্রাশের পেছনের অংশ দিয়ে জিহ্বা করা যায়।তবে,জিহ্বা পরিষ্কার করার জন্য যদি কোনটিই পাওয়া না যায় তবে ব্রাশ দিয়েই আস্তে আস্তে পরিষ্কার করা যেতে পারে।সেক্ষেত্রে,ব্রাশ খুব ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে যেন টুথপেস্ট না থাকে।
**শিশুদের বেবী টিথ উঠলে দাঁত ব্রাশ করে দেয়া উচিত। সেক্ষেত্রে,২-৬ বছর বয়সীদের জন্য একটি মটর দানা পরিমাণে টুথপেস্ট নেয়া উচিত এবং খেয়াল রাখা উচিত যেন দাঁত ব্রাশ করার সময় টুথপেস্ট গিলে না ফেলে।
**দাঁত পরিষ্কার করার জন্য নিয়মিত ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা উচিত।আর,ডেন্টাল ফ্লস দাঁত ব্রাশ করার আগে ব্যবহার করা উচিত এতে করে দাঁতের গোড়াতে ময়লা থাকার সম্ভাবনা থাকে না।এরপর ব্রাশ করার শেষে,মাউথ ওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করা দাঁতের জন্য খুবই উপকারী।
**প্রতি বছর অন্তত ২ বার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁতের চেকাপ করা উচিত।
**দাঁতের সুস্থতার জন্য অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা।।
🕸️🕸️এবার জানা যাক দাঁতের অসহ্য যন্ত্রণায় যা করবেন।
দাঁতে ব্যথা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, তাই দাঁতের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে কিছু ঘরোয়া টোটকা মেনে চলুন।যেমনঃ
**লবণ গরম পানিঃ
দাঁত, মাড়ি, গলায় ব্যথা কমাতে খুব ভাল কাজ করে লবণ মিশ্রিত গরম পানি। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করুন। এতে যেকোনও সংক্রমণ সেরে যাবে।
**রসুনঃ
এক কোয়া রসুন থেঁতলে অল্প লবণের সঙ্গে মিশিয়ে দাঁতে লাগিয়ে রাখুন।
খুব বেশি যন্ত্রণা হলে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খান। যন্ত্রণা কমে যাবে।
**লবঙ্গঃ
দুটো লবঙ্গ থেঁতলে নিয়ে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্টটা দাঁতে লাগান।
**লবণ ও গোলমরিচঃ
লবণ ও গোলমরিচ সম পরিমাণে মিশিয়ে পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। দাঁতের ওপর এই পেস্ট লাগিয়ে কয়েক মিনিট রাখুন। দাঁতে ব্যথা কমে গেলেও এটা কয়েক দিন করে গেলে আরাম পাবেন।
**পেঁয়াজঃ
পিঁয়াজের অ্যান্টিসেপটিক গুণ যেকোনও ক্ষত, ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। দাঁতে ব্যথা হলে এক টুকরো কাঁচা পিঁয়াজ চিবিয়ে খেয়ে নিন।
যদি বেশি ঝাঁঝ লাগে তবে দাঁতের ওপর পিঁয়াজ রাখলেও আরাম পাবেন।
**আদাঃ
এক টুকরো আদা কেটে নিন এবং যে দাঁতে ব্যথা করছে সে দাঁত দিয়ে চিবাতে থাকুন। যদি চিবাতে বেশি ব্যথা লাগে তাহলে অন্য পাশের দাঁত দিয়ে চিবিয়ে যে রস এবং আদার পেস্ট তৈরি হবে সেটা ওই আক্রান্ত দাঁতের কাছে নিয়ে যান। জিভ দিয়ে একটু চেপে রাখুন দাঁতের কাছে। কিছুক্ষণের মাঝেই ব্যথা চলে যাবে।
**বেকিং সোডাঃ
একটা কটন বাড একটু পানিতে ভিজিয়ে নিন। এর মাথায় অনেকটা বেকিং সোডা লাগিয়ে নিয়ে ব্যাথা হওয়া দাঁতের ওপরে দিন। অন্যভাবেও বেকিং সোডা ব্যবহার করা যায়। এক চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস গরম পানিতে গুলে সেটা দিয়ে কুলকুচি করুন।
**দূর্বা ঘাসের রসঃ
এছাড়া দূর্ব ঘাসের রসও দাঁতের ব্যথা কমাতে পারে। এটা দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সহায়তা করে।
তবে মনে রাখবেন, আপনার দাঁত ব্যথা করছে তার মানে নিশ্চয়ই দাঁতের ভেতরে কোনও সমস্যা আছে এবং অবশ্যই ডেন্টিস্টের সাহায্য ছাড়া সে সমস্যার থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না।
ঘরোয়া এই প্রতিকারগুলো আপনাকে কিছুটা সময়ের জন্য ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে মাত্র। বিশেষ করে যদি মাড়ি ফুলে যায় তবে বুঝতে হবে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডেন্টিস্টের সঙ্গে দেখা করুন।